পাঠক মত

সচেতন হোক মানুষ, টিকে থাকুক মূল্যবোধ

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের মহান বাঙালি জাতি একটি শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত ছিল। পৃথিবী সমাদর করত এ জাতির মূল্যবোধ, শিষ্টাচার, নৈতিকতা নিয়ে। কিন্তু এগুলো এখন কই গেল! আমরা জাতি হিসেবে আমাদের এই ঐতিহ্য কি ধরে রাখতে পেরেছি! এখন আমাদের সেই সমাদৃত মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে! হত্যা, ধর্ষণ এগুলো যেমন মহামারী আকার ধারণ করেছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে সন্দেহ বা গুজবের জেরে মানুষকে হত্যার অপসংস্কৃতি। একটা সমাজের মূল্যবোধ কতটা নিম্নপর্যায়ে গেলে এরকম দিবালোকে সবার সামনে একটা মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা যায়! সাধারণত সমাজে যখন অস্থিরতা বা হতাশা চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন এই ধরনের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। আমাদের সমাজে এখন মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। চরম হতাশার জন্য মনের শান্তিপ্রিয় আত্মাটা ঢাকা পড়ছে উগ্রতার পর্দায়। এজন্য সন্দেহের জেরে বা সামান্য কোনো ঘটনার জন্য হত্যা বেড়ে যাচ্ছে। সমাজের এই অবক্ষয় কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা আছে। কোনো অপরাধ হলে তার বিচার আইনানুগভাবে হবে। কিন্তু এটার জন্য আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। মানুষের মন পবিত্র, সেখানে এই পশুবৃত্তির কোনো জায়গা নেই। ছোট একটা বাচ্চাশিশু যার আজকে স্বাচ্ছন্দ্যে নিরাপদে শৈশব কাটানোর কথা সে নিজের নিরাপত্তার জন্য পস্ন্যাকার্ড হাতে রাজপথে আকুতি জানাচ্ছে! এটা কোনো সভ্যসমাজে হওয়ার কথা নয়। আজকের সমাজে কেউ কারও হাতে নিরাপদ নয়। মৃতু্য খুব সহজ হয়ে গেছে। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই আপনি দেখবেন হত্যা, ধর্ষণ এগুলোতে সয়লাব। অর্থাৎ আমরা দিন দিন অধম সমাজের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু বাঙালি জাতির বৈশিষ্ট্য এমন হওয়া উচিত নয়। তারা হবে উদার, শান্তিপ্রিয় ও মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যে মূল্যবোধ আমাদের জাতিসত্তাকে সুউচ্চ মর্যাদায় নিয়ে গেছে সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। কেউ যদি কোনো অপরাধ করে তাহলে তাকে আইনের হাতে তুলে দিন। স্বাধীন বিচারব্যবস্থা তার বিচার করবে। কোনো কিছু সন্দেহজনক মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯-এ ফোন করুন। কিন্তু আইন কখনো নিজের হাতে তুলে নেবেন না। মনে রাখবেন আপনার একটা ভুলের জন্য একজনের জীবন চলে যেতে পারে, অন্য কারও জীবন ধ্বংস হতে পারে বা কোনো পরিবার বিপন্ন হতে পারে। আমাদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করতে হবে। অযথা সন্দেহের বসে বা পূর্ব শত্রম্নতার জেরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড কখনো কাম্য নয়। কেউ যদি দোষও করে তবে তার জন্য আইন আছে, বিচার আছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীন দেশের মান-মর্যাদা আমাদেরই ধরে রাখতে হবে। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা করে আমরা এই প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি। আমরা বাঙালিরা সবাই এক। আমাদের মধ্যে নেই কোনো ভেদাভেদ। আমরা যদি পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে চলি তাহলে আমাদের মধ্যে মূল্যবোধ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান এই তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বে মূল্যবোধ খুবই জরুরি। আমরা বাঙালিরা খুব গর্ব করে বলতাম- মূল্যবোধ, নৈতিকতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধে আমরা বিশ্বের সবার কাছে অনুকরণীয়। কিন্তু কোথায় গেল সেই মূল্যবোধ! আজকে একজন মা তার সন্তানের লেখাপড়ার জন্য স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়ে নিরাপদ নন! গুজবের বশবর্তী হয়ে সন্দেহের জেরে তাকে জনসমক্ষে জীবন দিতে হলো। পেছনে পড়ে থাকল অসহায় একটি ফুটফুটে বাচ্চাশিশু! এখন মাহারা ওই বাচ্চাটার কি হবে। সমাজ কি দায়িত্ব নেবে! তার কাছে কি তার পৃথিবী তার গর্ভধারিণী মাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে! এই সমাজের সেই সক্ষমতা নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে যখন সমাজ থেকে মূল্যবোধ চলে যায় তখন সেই সমাজ বা সভ্যতার অস্তিত্ব টিকে থাকে না। সময়ের অতল গহ্বরে সেটা হারিয়ে যায়। আমরা চাই না এই শত ঐতিহ্যের বাঙালি সভ্যতা, মূল্যবোধ এভাবে নষ্ট হয়ে যাক। বাংলাদেশ উন্নত দেশ হওয়ার পথে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে এই দেশটাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখন আমাদের সাধারণ জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশকে পিছিয়ে ফেলার এই গুজব প্রতিহত করতে হবে। যারা বাঙালি সভ্যতা, মূল্যবোধ নষ্ট করতে চায় তাদের পরাস্ত করতে হবে। তাহলেই টিকে থাকবে এই বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের বাঙালি সভ্যতা। সচেতন হোক মানুষ, টিকে থাকুক মূল্যবোধ। মো. তাসনিম হাসান আবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়