শিক্ষার্থী ঝরেপড়া থামছে না

কারণ চিহ্নিত করে উত্তরণ ঘটাতে হবে

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষা একটি জাতির মেরুদন্ডস্বরূপ। শিক্ষায় উন্নত জাতির সামগ্রিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হয়। আর বিশেষজ্ঞরা বারবার এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দেন দেশের নীতিনির্ধারকদের। শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সরকারের উদ্যোগের ঘাটতি নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সরকারের ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক রয়েছে- এমন তথ্যও সামনে আসে। যখন শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে দ্রম্নতগতিতে শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার তথ্য পাওয়া যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি উদ্বেগের জন্ম দেয়। সম্প্রতি সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার হার গত পাঁচ বছরে একই বৃত্তে অবস্থান করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে মাধ্যমিক স্তর। আমরা যখন প্রাথমিক পর্যায়ে শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তির লক্ষ্য অর্জন করতে চলেছি, তখন লক্ষ্য রাখিনি যে এই শিশুদের একটা বড় অংশ মাধ্যমিক পর্যায় পেরোতে পারছে না। এসএসসি ও এর সমমানের শিক্ষা অর্জন করার আগেই তাদের শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে চিন্তা জাগানিয়া। শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের যেমন কিছু সাফল্য আছে, তেমনি ব্যর্থতাও অনেক। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকেই এটি স্পষ্ট হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এই তিন স্তরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে মাধ্যমিক। এই স্তরের জন্য একাধিক প্রকল্পসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে মাধ্যমিকেই। আর তিন স্তরেই ছেলেদের তুলনায় বেশি ঝরে পড়ছে মেয়েরা। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিস্তার ও উন্নয়নে সরকার বৃত্তি, উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই বিতরণসহ নানা সুবিধা বাড়িয়েছে। ২০১৩ সালে একযোগে জাতীয়করণ করা হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত বছর ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা, চাকরির স্থায়িত্ব ও পেশার প্রতি মর্যাদা বাড়ানো হচ্ছে। এর পরও এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ঝরেপড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রশ্ন ওঠা অবান্তর নয়। কেননা, প্রাথমিকে ২০১৯ সালে ঝরেপড়ার হার ছিল ১৭.৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ১৮.৬ শতাংশ, ২০১৭ সালে ১৮.৮৫ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১৯.২ শতাংশ, ২০১৫ সালে ২০.৪ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ২০.৯ শতাংশ। অথচ ২০০৯ সালে এই ঝরেপড়ার হার ছিল ৪৫.১ শতাংশ। এর পর থেকে পাঁচ বছর নানা উদ্যোগের ফলে ব্যাপকভাবে ঝরেপড়া কমেছে। অথচ গত পাঁচ বছরে যেন ঝরেপড়ার হার একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। আগের তুলনায় মানুষ এখন আর্থিকভাবে বেশ সচ্ছল। দরিদ্র পরিবারও তার সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে চায়। কিন্তু এটাও জানা যাচ্ছে, মাধ্যমিকের বেশির ভাগ স্কুলই এমপিওভুক্ত হলেও সেখানকার শিক্ষকরা ততটা দক্ষ নন। এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু দুর্বোধ্য, একাধিক বিষয় ও অধ্যায় যা কখনোই কাজে লাগে না, তা দিয়ে ভারী করা হয়েছে পাঠ্যবই- এমন অভিযোগও রয়েছে। অন্যদিকে দুর্বোধ্য সৃজনশীলের চাপের বিষয়টিও সামনে এসেছে ঝরেপড়ার নেপথ্য কারণ হিসেবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিয়েও অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়ের রুক্ষ আচরণও অনেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবিমুখ করে। আবার পারিবারিক অভাব-অনটনও শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার একটি বড় কারণ। আর এসব দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতাই তুলে ধরে। ঝরেপড়ার সঠিক কারণগুলো চিহ্নিত করে দ্রম্নত প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা মনে করি, শিক্ষা যেন সর্বজনীন হয়, তা রাষ্ট্রকেই দেখতে হবে। মেয়ে ও ছেলের পার্থক্য, ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য, গ্রাম ও শহরের পার্থক্য- এসব যদি খুব বেশি হয়ে যায়, তাহলে শিক্ষার সর্বজনীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি শিক্ষা যাতে ভীতিকর না হয়ে আগ্রহের বিষয় হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে সেজন্য আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। অল্পবয়সে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীরা অর্জিত জ্ঞান কোনো কাজে লাগাতে পারে না। ফলে এসব শিক্ষার্থী সম্পদ হওয়ার পরিবর্তে সমাজের বোঝায় পরিণত হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সে সব সমাধান করলে ইতিবাচক ফল মিলবে, এটা আশা করা যায়।