পাঠক মত

শিক্ষার্থীর জীবনে সৃজনশীলতার প্রয়োজন

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রতিটি শিক্ষার্থীর সার্বিক জীবনে সৃজনশীলতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, সৃজনশীলতার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করে আদর্শবান মানুষে পরিণত হয়। সৃজনশীলতার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে বিকশিত করতে পারে। সমাজ তথা দেশের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, সৃজনশীল ক্ষমতা ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীর সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর শিক্ষার্থী সৃজনশীল না হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে হয় যেটা কাম্য নয়। ফলে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপরে সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা থাকতে হবে। এগুলোর উন্নয়ন ও উন্নয়নের পথে যেগুলো বাধা সেগুলো গঠনমূলক চিন্তার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল কর্ম পদ্ধতিতে কোনো কিছু করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারণ, সৃজনশীল পদ্ধতিটি স্বাভাবিকভাবেই একটি জটিল বিষয়। সাধারণত একটি শিশুর জন্মের কয়েক মাস পরেই কথা বলতে চায়। শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেন তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্য লোকজন। তারা নানাভাবে শিশুটিকে কথা বলানো শেখান। সে কথা না বললেও বারবার চারদিকে কথার মালা ছুড়ে দেওয়া হয়। মজার বিষয় হলো- ধীরে ধীরে শিশুটি কথা বলতে শিখে যায়। একটা সময় পরিবারের সবাইকে মন থেকেই চিনে ফেলে। তাদের নাম ধরে ডাকতে চায়। আবার কে, কি করছে তা খুব নিঁখুতভাবে লক্ষ্য করে। পরে শিশুটি সেগুলো করার চেষ্টা করে। যদি আপনারা একটু লক্ষ্য করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে শিশুটি প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। আর এই সৃজনশীল শিক্ষা পেয়েছে বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে। যখন শিশুটির বয়স ৫-৬ বছর হয়ে যায় তখন তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকেই একজন নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে স্কুলে পা রাখে। মানবজীবনে অন্যরকম একটা দামি অধ্যায় শুরু হয়। শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানলাভ করতে শুরু করে। নিজেকে নতুনভাবে সাজাতে চায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুখস্থনির্ভর পাঠ্যবিষয় থাকলেও বর্তমানে সেগুলো সৃজনশীল পদ্ধতিতে শেখানো হচ্ছে। ক্লাসের সবাই মিলে সুরে সুরে ছড়া, কবিতা, গল্প পাঠ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের খেলায় মেতে থাকে। অনেক সুন্দর করে ছবিও আঁকে। আমার কাছে ছবি আঁকাটাই সৃজনশীলতার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে মনে হয়। একজন শিক্ষার্থী ছবি আঁকার সময় মনের মাধুরী মিশিয়ে ছবি আঁকতে থাকে। নতুন নতুন দৃশ্য কল্পনা করে তার ছবিতে তুলে আনার চেষ্টা করে। আর এখানেই সৃজনশীলতার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ সাধনে সৃজনশীলতা প্রয়োজন রয়েছে। সৃজনশীল ধ্যান-ধারণা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলে যা একজন শিক্ষার্থীর সার্বিক জীবনে সুফল বয়ে আনে। মুখস্থনির্ভর সংকীর্ণ জ্ঞানের পরিধি থেকে বের করে সৃষ্টিশীল জগতে প্রবেশে চূড়ান্ত সহায়তা করে। যেসব শিক্ষার্থীরা যত বেশি সৃজনশীল মনোভাবাপন্ন তারা তত বেশি সমাজ তথা রাষ্ট্র সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। অনেক ভালোবাসা জন্মায় দেশের জন্য। নতুন কিছু করতে চায় এবং দেশকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে। কোন কোন বিষয়গুলো ব্যক্তি পরিবার, গোষ্ঠী, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো উপলব্ধি করতে পারে। একমাত্র সৃজনশীল চিন্তা-চেতনার কারণেই এগুলো সম্ভব। সৃজনশীলতা সমৃদ্ধ শিক্ষার্থীরাই জাতির হৃদপিন্ড। তাই তাদের প্রতি সবাইকে সুনজর রাখতে হবে। একটা কথা মনে রাখা জরুরি যে, শিক্ষার্থীদের ফেলে রেখে জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। ফলে তাদের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে এবং সৃজনশীলভাবে গড়ে তুলতে সার্বিক প্রচেষ্টা বজায় রাখতে হবে। বর্তমান বিশ্বে আমাদের দেশের সরকারসহ প্রতিটি রাষ্ট্রের সরকার সৃজনশীলতার ওপর জোর দিয়েছে। এটা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ন্যায়পরায়ণ, ধৈর্যশীল ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিতে পরিণত করে। সৃজনশীল জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি সহজেই সব পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এটি সৃজনশীলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শিক্ষার্থীরা যদি সৃজনশীল বান্ধব হতে পারে, তাহলে সব সময় যে কোনো আলোচনা-সমালোচনা, সুযোগ-সুবিধা, ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ প্রভৃতি বিষয় সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরাই আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পদ। আর এই সম্পদের পরিপূর্ণ বিকাশসাধনে সৃজনশীলতার প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সার্বিকজীবনে একারণেই সৃজনশীলতার প্রয়োজন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল চিন্তা-চেতনার মাধ্যমেই দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্যা মোকাবিলা করে বিশ্ব নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সৃজনশীলতা শিক্ষার্থীদের মনোজগৎ আলোকিত করে নতুন পথের সন্ধান দেয়। আর সেই পথে গমন করলেই দেখা মিলবে একটি উন্নত জাতির। যার মর্যাদা কেউ ক্ষুণ্ন করতে পারবে না। তখন আমরা অবস্থান করব উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে। তাই শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। জুয়েল রানা শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ ঢাকা