নেতার সিন্দুক ভর্তি টাকা, স্বর্ণ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই প্রত্যাশিত

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ক্যাসিনোকান্ডে বহুল আলোচিত এবং গ্রেপ্তারকৃত দুই ভাই আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার পুরান ঢাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫টি সিন্দুক থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা, সোয়া পাঁচ কোটি টাকার এফডিআর, এক কেজি স্বর্ণ, ৯ হাজার ২০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৯৫ চাইনিজ ইয়েন, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম জব্দ করেছের্ যাব। এর পাশাপাশি ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনের্ যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তথ্য মতে, ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এই দুই ভাই আলোচনায় আসেন। শুরু থেকেই তারা পলাতক ছিলেন। অবশেষে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দুই ভাই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী একটি দেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের ঘটনাগুলো সামনে আসায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। অবৈধভাবে টাকার পাহাড় গড়ে তোলার বিষয়টি একটি রাষ্ট্র ও শান্তিকামী সমাজের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগ এবং নিন্দনীয়। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার দুই ভাইকে রিমান্ডে নিয়ে তাদের কাছ থেকে তথ্য মিলেছে বলে এর আগেই জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। আর এবার সংবাদ সম্মেলনে দায়িত্বপ্রাপ্তর্ যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়জুল ইসলাম জানিয়েছেন, ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত দুই ভাইয়ের ঢাকায় বহু ফ্ল্যাট বাড়ি রয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা ২৪টি বাড়ির খোঁজ পেয়েছেন। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে তারা পুরান ঢাকার এ বাড়ির খোঁজ পান এবং এখানে অভিযান চালিয়ে এসব সম্পদ জব্দ করা হয়। এর আগে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায়র্ যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। এরপর সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এনামুল ও রূপন গত ছয় থেকে সাত বছরে পুরান ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন কমপক্ষে ১২টি। ফ্ল্যাট কিনেছেন ৬টি। পুরানো বাড়িসহ কেনা জমিতে গড়ে তুলেছেন নতুন নতুন ইমারত। স্থানীয় লোকজন জানান, এই দুই ভাইয়ের মূল পেশা জুয়া। আর নেশা হলো বাড়ি কেনা। অপরদিকে টাকার বিনিময়ে তারা ক্ষমতাসীন দলের পদও কিনে নেন, এ বিষয়টিও আলোচিত। ২০১৮ সালে এনামুল গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনোনীত হন। আর রূপন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। এ ছাড়া তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য, ঘনিষ্ঠজনসহ মোট ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ পেয়েছেন। তারা সরকারি দলের এসব পদ-পদবি জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার নির্বিঘ্নে চালানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের অবাধ দুর্নীতি এবং অবৈধ পন্থায় অর্থবিত্তের মালিক বনে যাওয়ায় বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত। এসব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযানের ঘোষণা দেন। স্মর্তব্য যে, ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী ও শুদ্ধি অভিযানে নামের্ যাব। ওই দিনর্ যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। পরে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ ১১ জন গ্রেপ্তার হন। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল-রূপনের গেন্ডারিয়ার বাসায়র্ যাব অভিযান চালায়। তখন তারা আত্মগোপনে ছিলেন। আমরা জানি, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর দুর্নীতি দমন কমিশনও অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। উলেস্নখ্য, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য। সরকার এ ব্যাপারে যে উদ্যোগ নিয়েছে, শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রেখেছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনের দিনগুলোয় সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিকে জায়গা দিলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন অবধারিত হবে। ক্ষমতাসীন দলের প্রধান ব্যক্তিকে আমরা সাধুবাদ জানাই এ কারণে যে, তিনি তার নিজের দল নয় বরং দেশের কথা বিবেচনা করে নিজের দলীয় লোকজনকে আইনের আশ্রয়ে আনছেন। আমরা মনে করি, ক্যাসিনো, মাদক, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ইত্যাদি গুরুতর অপকর্ম রোধে আর কোনোরূপ ছাড় নয়। এসব কর্মকান্ডে জড়িত অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক, এটিই দেশবাসীর চাওয়া।