পাঠক মত

বায়ুদূষণ রোধ করতে হবে

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বায়ুদূষণ শব্দটি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটি পরিচিত শব্দ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা পৃথিবীর অন্যান্য শহরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই পরিবেশ দিবসের বিষয়টির যথেষ্ট তাৎপর্য রয়েছে। প্রথমে আসা যাক বায়ুবিষয়ক কিছু আলোচনায়। আমরা জানি, পৃথিবী বায়ুমন্ডল দ্বারা আবৃত। এর আবার রয়েছে বিভিন্ন স্তর। বায়ুহীন পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব অচিন্ত্যনীয়। বায়ুতে রয়েছে আবার বিভিন্ন উপাদান। যেমন- নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, বিভিন্ন রকম জলীয় বাষ্প ইত্যাদি। বেঁচে থাকার জন্য বায়ুর অক্সিজেন আমরা গ্রহণ করি এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করি। তাই বায়ুদূষণ মাত্রা যত কম হবে তা চারপাশের পরিবেশকে রাখবে নির্মল অর্থাৎ আমাদের জন্য হবে নিরাপদ। অথচ আমরা আমাদের পরিবেশকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তেমন ভাবছি না। প্রতিবছর 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' আসে আবার যায়। একটি প্রতিপাদ্য বিষয়ও থাকে। কিন্তু বিষয়টি এখন শুধু কাগজে-কলমে থেকে যাচ্ছে কিনা এটি নিয়েও ভাবার প্রয়োজন আছে। আমি ঢাকা শহরে বসবাস করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে নাকে-মুখে একটি মাস্ক ছাড়া সহজে বাইরে বের হতে পারি না। যদি কোনোদিন ভুলক্রমে মাস্ক ছাড়া বের হয়ে পড়ি তখন বায়ুতে সিসার আধিক্যের কারণে খুব অসস্থি বোধ করি। তাই আমাদের চারপাশের পরিবেশ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিবেশকে ঠিক রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। আমরা জানি গাছগাছালি চারপাশের পরিবেশকে নির্মল রাখে। গাছপালা বেশি বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে অধিক পরিমাণে অক্সিজেন ত্যাগ করে। যা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। কিন্তু আমরা কি আমাদের চারপাশে আশানুরূপ গাছপালা দেখি? বিশেষ করে আমাদের প্রিয় রাজধানী ঢাকা শহরকে মাঝেমধ্যে মনে হয় গাছপালা শূন্য! ঢাকা শহরের পার্কগুলো ছাড়া আর গাছপালা কোথায়? বড় বড় দালান কোঠার মধৌ সবুজ প্রকৃতি একদম চোখে পড়ে না। সার্বিকভাবে একটি দেশে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পঁচিশ শতাংশের বেশি বনভূমি থাকা প্রয়োজন কিন্তু আমাদের দেশে রয়েছে সাত বা আট শতাংশের মতো। আবার যা আছে সেই বনভূমি দিনকে দিন বেহিসেবিভাবে উজাড় হচ্ছে। তাই তো আজ আমরা দেখছি পরিবেশের বিরূপ আচরণ। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতি বৃষ্টি, বন্যা, খরা, পাহাড়ধস, ভূমিধস, নদীভাঙন, বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি এখানকার নিত্য ঘটনা। যদিও বিষয়টি বৈশ্বিক তথাপি আমাদের করণীয় আছে বহু কিছু। বেশি বেশি গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। যাই হোক আমি এবারে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল আলোচনায় ফিরে আসি, সেটি হলো বায়ুদূষণ। বাতাসে জীবের অস্তিত্বের ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা বেশি হলে তাকে বায়ুদূষণ বলে। ধোঁয়া, ধুলোবালি, কীটনাশক, তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রভৃতি বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। বায়ুদূষণ আমরা প্রতিনিয়ত করছি খেয়ালে বা বেখেয়ালে। ঢাকা শহরে একটি উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক গাড়ি হতে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়ে বায়ুকে দূষিত করছে। এ ছাড়া কলকারখানার কালো ধোঁয়া এবং বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আবর্জনা থেকে প্রাপ্ত ধোঁয়া, প্রতিনিয়ত বায়ুকে দূষিত করছে। বাংলাদেশ একটি ঘণবসতি পূর্ণ দেশ। রাজধানী ঢাকার উপর জনসংখ্যার চাপ অত্যধিক। একটি পরিসংখ্যান মতে ঢাকা শহরে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজারেরও অধিক মানুষ প্রবেশ করছে। বিভিন্ন কাজের সন্ধানে তারা ঢাকা শহরে আসছে। জনসংখ্যার অত্যধিক ভিড় তো আছেই পাশাপাশি যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে বায়ুতে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং বায়ু মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। আবার জনগণকে বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার কাজের সমন্বয়হীনতার কারণে আমরা দেখি যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এবং কাজ শেষে এগুলো মেরামত করায় দীর্ঘসূত্রতা, ফলশ্রুতিতে রাস্তাঘাটে ফেলে দেয়া বিভিন্ন সামগ্রীসহ ধুলোবালির ছড়াছড়ি লেগেই থাকে। ধুলো পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখে না। এটি রোগবাহক। যা বায়ুর মাধ্যমে ছড়ায়। সর্বোপরি এখানে বায়ুদূষণের মাত্রা বহুমাত্রিক। যার দরুণ দেখা যায় দূষিত বায়ু গ্রহণ করে লোকজন বিভিন্ন রোগে ভুগে থাকে। বায়ুদূষণের ফলে প্রতি বছর শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে বহু মানুষ মারা যায়। তাই বায়ুদূুষণ রোধ করতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের পরিকল্পিত নগরী গড়ার কথা ভাবতে হবে। নির্দিষ্ট এলাকায় কলকারখানা স্থাপন করতে হবে, সিএনজিচালিত যানবাহন ব্যবহার করতে হবে। এটা ঠিক নগর জীবনের বাস্তবতায় বায়ুদূষণের মাত্রা আমরা জিরো পর্যায় নিয়ে আসতে পারব না কিন্তু বিভিন্ন পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে এটাকে কীভাবে আরও হ্রাস করা যায় সেই বিষয়ে ভাবার প্রয়োজন আছে। ইফতেখার হোসেন সিদ্দিকী ঢাকা