রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

দ্রæত ও শান্তিপূণর্ হোক

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ক্রমেই হতাশা বাড়ছে। আন্তজাির্তক নানা তৎপরতা সত্তে¡ও গত এক বছরে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিজ জন্মভ‚মিতে নিরাপদ পরিবেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার তেমন আগ্রহ দেখায়নি। ফলে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে অজানা আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়। অন্যদিকে প্রত্যাবাসন না হওয়ায় প্রায় ১১ লাখ শরণাথীর্র ভার বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আমরা জানি, রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি থেকে শুরু করে অন্য গুরুত্বপূণর্ নীতিনিধার্রণী পযার্য়সহ সবর্স্তরে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে যে ধরনের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেছিল, তা মিলছে না। বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে মিয়ানমারের প্রতি নানান নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি দেশটির ওপর। অপরদিকে বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীন, রাশিয়া ও জাপানের মতো দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে মিয়ানমারকে চাপ এড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। এ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ক‚টনৈতিক তৎপরতা জোরালো করা ছাড়া গত্যন্তর নেই বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞ মহল। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অকথ্য নিযার্তন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে এ পযর্ন্ত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও আশা করা গিয়েছিল মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের সসম্মানে সেদেশে ফিরিয়ে নেবে। ওই সময় জাতিসংঘসহ আন্তজাির্তক নানা সম্প্রদায় ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রের চাপে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তিও করে। চুক্তির সময় প্রশ্ন উঠেছিল, বিশ্ববাসীর রোষানল থেকে বঁাচতেই তারা এই আইওয়াশের কৌশল নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির কথা বলে মিয়ানমার সুকৌশলে কালক্ষেপণ শুরু করে। এ পরিস্থিতি এখনো অব্যাহত আছে। উপরন্তু সম্প্রতি অং সান সূচি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের ওপর নিভর্র করছে, এমন তথ্য দিয়ে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে রোহিঙ্গা সংকটের এক বছরে এসে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, মিয়ানমারে নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। অথচ চুক্তি অনুযায়ী নিরাপদ পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব মিয়ানমার অস্বীকার করতে পারে না। এজন্য আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের কতর্ব্য হওয়া দরকার মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা এবং মিয়ানমার যাতে দ্রæততার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়, তা নিশ্চিত করা। বলাই বাহুল্য, সামরিক শাসন যে শাসকদের স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনাকে বিকৃত করে তুলতে পারে তার নিদশর্ন হিসেবে মিয়ানমারকে উল্লেখ করা যেতে পারে। সামরিক শাসন ও শাসকের আচরণের ভয়াবহতা যে কি হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পায় সে দেশের বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীসহ সাধারণ জনগণ। অস্বীকার করা যাবে না যে, সামরিক জান্তা শাসকদের বৈষম্যমূলক, মানবতাবিরোধী অমানবিক, নিমর্ম বিকৃত আচরণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা। সত্তর দশক থেকে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের জান্তারা রোহিঙ্গাদের নিমর্ম নিযার্তন শেষে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ সেই থেকে তাদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। কিন্তু কতদিন আর এই অমানবিকতা? আমরা মনে করি এর অবসান হওয়ার সময় এসেছে। অন্য দেশের শরণাথীর্ নিয়ে বাংলাদেশকে চরম সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে, এটাও স্পষ্ট। অপরদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার যে চতুরতার আশ্রয় নিয়েছে, তারও বিচার হওয়া জরুরি। সবোর্পরি বলতে চাই, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের ক‚টকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে তার মধ্যে এ সমস্যা সমাধানের আকাক্সক্ষা ও মানসিকতার প্রতিফলন নেই। মিয়ানমার কতৃর্পক্ষ যে ছলচাতুরি ও টালবাহানা করছে তার ফল শুভ হতে পারে না। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়কে খুব দ্রæতই এক্ষেত্রে জোরালো ভ‚মিকা পালন করতে হবে। দেশটির ওপর আন্তজাির্তক চাপ অব্যাহত না থাকলে তারা নানা কৌশলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীঘর্ করার চেষ্টা করবে- যা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনিতেই এক বছরে জল অনেকদূর গড়িয়েছে। প্রত্যাশা থাকবে, আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা ও উদ্যোগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রæত ও নিরাপদ হবে।