শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

মো. সজীব মল্লিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষা হলো সামাজিক গতিশীল একটা প্রক্রিয়া। জন্ম থেকে মৃত্যু পযর্ন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো আচরণের পরিবতর্ন, তবে এই পরিবতর্নটা অবশ্যই ইতিবাচক হতে হবে। অথার্ৎ আচরণের ইতিবাচক পরিবতর্নই হলো শিক্ষা। মহান গ্রিক দাশির্নক এরিস্টটল ৩২০ খ্রিষ্টপূবাের্ব্দ শিক্ষা সম্পকের্ বলছেন-‘সুস্থ দেহ, সুস্থ মন তৈরির প্রক্রিয়াই হলো শিক্ষা’। অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবল (১৯৫০) এর মতে, ‘সুন্দর, বিশ্বস্ত এবং পবিত্র জীবনের উপলব্ধিই হলো শিক্ষা’। অথচ এই সমাজ ধরেই নিয়েছে পাস করে সাটিির্ফকেট অজর্ন করার নামই হল শিক্ষা। এরূপ অন্ধ ধারণা পোষণের কারণে আজ-কালকার দিনের অভিভাবকেরা নাছোড়বান্দার মতো শিক্ষাথীের্দর কঁাধে চেপে বসেছে। স্কুল শেষ হলেই শিক্ষাথীের্দর পাঠিয়ে দেয়া হয় কোচিং সেন্টারগুলোতে। মাঝে মাঝে এমনও দৃশ্য চোখে পরে যে, একজন শিক্ষাথীের্ক স্কুল শেষে তিন-চারটা কোচিংয়ে দৌড়াতে হয়। এর একটাই উদ্দেশ্য সিজিপিএ বাড়াতে হবে। দেশে শিক্ষার হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা একটা ইতিবাচক দিক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সত্যিকারের শিক্ষা আমরা কতজন গ্রহণ করতে পেরেছি। ভারি ভারি সাটিির্ফকেট থাকলেই তাকে প্রকৃত শিক্ষিত বলা চলে না, যদি না তার আচরণে ইতিবাচক পরিবতর্ন না ঘটে। সমাজে এমনও লোক আছে যারা উচ্চ ডিগ্রিধারী অথচ তাদের আচরণে মনে হয় না যে তারা উচ্চ ডিগ্রিধারী। তাদের ব্যবহার দেখলে মনে হবে ঐ অজপাড়াগঁায়ের গোবেচারা ছেলের মতো। আসলে এই দোষটা তাদের না, এটা মূলত আমাদের সমাজেরই দোষ। ছোটবেলা থেকেই আমাদের মাথার মধ্যে একটা ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে কীভাব ভালো রেজাল্ট করা যায়। কিন্ডারগাটের্ন, নাসাির্র, কেজির বাচ্চাদের ব্যাগে দেখা যায় ১২-১৩ টা বই। কোন কোন বাচ্চারা তো ব্যাগের ভারটাই বহন করতে পারে না। অথচ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল স্কুলে যাওয়ার অভ্যাসটা ঠিক মতো তৈরি করা। বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার ব্রিজ তৈরি করে এই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। অথচ আমরা শুরু থেকেই তাদের চাপের মধ্যে রাখি। যার ফলে শিক্ষাথীের্দর সুস্থ মস্তিষ্ক তৈরির ব্যাঘাত হয়। বাল্যকাল থেকেই তাদের শিক্ষার সহিত আনন্দ নাই। কেবল যা কিছু নিতান্ত আবশ্যক তাই তারা কণ্ঠস্থ করতেছে। এভাবে হয়তো ভারি ভারি সাটিির্ফকেট অজর্ন করা সম্ভব হবে কিন্তু প্রকৃত বিকাশলাভ সম্ভব না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধে একটা কথা উল্লেখ করেছিলেন যে, ‘অন্য দেশের ছেলেরা যে বয়সে নবোদ্গত দন্তে আনন্দমনে ইক্ষু চবর্ন করিতেছে, বাঙালির ছেলেরা তখন ইস্কুলের বেঞ্চির উপর কেঁাচা সমেত দুইখানি শীণর্ খবর্চরণ দোদুল্যমান করিয়া শুধু বেত হজম করিতেছে।’ অতএব, শিক্ষাথীর্র বিকাশ ও শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অজের্নর জন্য আমাদের সবার উচিত একাগ্রতার সহিত কাজ করা। অভিভাবকদের উচিত শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো সন্তানদের মাঝে তুলে ধরা এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা।