মার্কিন নির্বাচন এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

বিগত নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প। এবার লড়াই হবে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তার ওপর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য রয়েছে- যা ঠিক করবে জনগণ কোন দিকে যাবে। দুই দল অবশ্যই সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই অগ্রসর হবে।

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অলোক আচার্য
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন নির্বাচন জমে উঠছে। বিরোধী শিবিরের প্রার্থীদের সঙ্গে কথার লড়াই চলছে। ২০২০ সালের নির্বাচনের আগেই পরিক্রমা পার হতে হয়েছে। চলতি বছরের অভিশংসন, ইরানের সঙ্গে ট্রাম্পের যুদ্ধ ক্ষমতা হ্রাস এবং এরকম ঘটনাবলি। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে কয়েকজনের নাম প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছে। এর মধ্যে কে হবেন ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী তা জানতে একটু অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র মাইকেল বস্নুমবার্গ যিনি একদিকে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও লেখক। তার সঙ্গে ট্রাম্পের কথার লড়াই চলছে। একে অন্যকে কথা দিয়ে আক্রমণ করছেন। মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন বাইডেন ও বার্নি স্যান্ডার্স। ট্রাম্পের অভিশংসনের ফল অনেকটা অনুমেয়ই ছিল। রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন এবং কোনো ব্যতিক্রম না হলে তিনি সেখানে অভিশংসিত হবেন না। কারণ যাই হোক, নিজ দলে তার অবস্থান এখনো বেশ দৃঢ় এবং আগামী নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন আগামী নির্বাচন নিয়ে বেশ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সিনেটে অভিশংসনের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের ভাষণে বলেন, মহান আমেরিকার পুনরুত্থান ঘটেছে। তার সিনেটে অভিশংসিত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। কারণ ১০০ আসনের সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১০০ আসনে ৫৩ জন রিপাবলিকান সদস্য রয়েছেন। প্রেসিডেন্টকে বিচারে দোষী সাব্যস্ত করে তার পদ থেকে সরাতে হলে সিনেটে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হতো। ফলে এখানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফলাফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ছিল না। এর আগে এন্ড্রু জনসন এবং বিল ক্লিনটনের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছিল। তবে তারা কেউই পদ হারাননি। কোনো প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরাতে হলে সিনেটে দোষী সাব্যস্ত করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেখা যায়, ১৭তম প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসন (ডেমোক্র্যাট, ১৮৬৫-১৮৬৯) এর বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৮৬৮ সালে। প্রতিনিধি পরিষদে তিনি অভিশংসিত হলেও সিনেটে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট (ডেমোক্র্যাট, ১৯৯৩-২০০১) এর বিরুদ্ধে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেও সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তিনি পার পেয়ে যান। এদিকে বিরোধী শিবিরের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে বার্নি স্যান্ডার্স। যিনি বেশ জনপ্রিয় ব্যক্তি। প্রথম মেয়াদে 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' স্স্নোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসা বর্তমান ক্ষমতায় থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে যাত্রা শুরু করেছেন। আমেরিকা তার সময়ে কতটা গ্রেট হয়েছে তার বিচার করবে সময়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিঞ্চালীয় অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায় সমর্থকদের উলস্নাস ধ্বনির মধ্যে দিয়ে ২০২০ সালের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন। ফ্লোরিডা হলো ২০১৬ সালের নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রার্থীর অন্যতম প্রধান লড়াই ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। অল্প ভোটে হিলারিকে হারিয়ে ডেমোক্র্যাটদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গরাজ্যটিতে জয় পান। ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ ওঠে। ট্রাম্পের মার্কিন মসনদের ক্ষমতায় আসা যেন বেশ নাটকীয়। কারণ সেই সময় ট্রাম্পের বিরোধী দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন বেশ শক্ত অবস্থানে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত জরিপেও এগিয়ে থাকে হিলারি ক্লিনটন। তাই যখন নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হয় তখন অভিযোগ ওঠে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার। রাশিয়াও বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। এ নিয়ে জল ঘোলা কম হয়নি। জলবায়ু থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, অভিবাসী ইসু্য প্রভৃতি বিষয় নিয়ে একের পর এক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। গত বছরের পুরোটা সময় জুড়েই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ লেগে ছিল এ পরাশক্তির। শুল্ক এবং পাল্টা শুল্ক আরোপের ভেতর দিয়েই গেছে বছরের পুরোটা সময়ই। দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হওয়ার পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। এবারো কি ট্রাম্প রিপাবলিকানদের হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সমর্থনে আবারও ক্ষমতায় বসতে পারবেন? গত নির্বাচনেও ট্রাম্পের অবস্থান অনেক জরিপে নরবড়েই ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সব জরিপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্ষমতায় আসেন ট্রাম্প। অনেকের চোখ কপালে উঠে যায়। ক্ষমতায় এসে নিজের মতো করে আমেরিকাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমান বিশ্বের সম্পর্ক উন্নয়নে ট্রাম্প কতটুকু সফল হয়েছেন সেটাও বিবেচনায় আসবে। এদিকে গতবার হিলারির পর এবারে রিপাবলিকানের বিপরীতে কে প্রার্থী হবেন তার ওপর নির্ভর করছে সামনের রাজনীতি। কারণ সে সময় হিলারি ক্লিনটন ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। এবার যে হিলারি প্রার্থী হবেন না তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। এর আগে ডেমোক্র্যাট দলের সামনের সারির প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থীদের মধ্যে বাইডেন সবচেয়ে অভিজ্ঞ। আলোচনায় রয়েছে বার্নি স্যান্ডার্সের নাম। তিনিও বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক বার্নি স্যান্ডার্স তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলা ভাষা ব্যবহার করেছেন। অব্যাহতি পাওয়ার পর বিজয় উদযাপন করেছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং নিজের আইনজীবীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ট্রাম্প বলেন, 'আমরা কোনো অন্যায় করিনি। শেষ পর্যন্ত যা ফল হয়েছে সেটাই আসল ঘটনা'। আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী হয়ে লড়বেন। বিপরীতে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী কে হবেন তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আর অল্প সময়। আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য তিনি জোর প্রচারণা শুরু করেছেন। দুই দলই এই অভিশংসনের ঘটনাকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে চাইবে। একপক্ষ অভিশংসন প্রক্রিয়ায় অন্তত বিচারের মুখোমুখি করা এবং অন্য পক্ষ অভিশংসন থেকে অব্যাহতি পাওয়া। তবে সাধারণ জনগণ বিষয়টিকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে নিতে পারে সেটাই প্রশ্ন। মার্কিন নির্বাচন এখন জমে উঠেছে। যখন ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী চূড়ান্ত হবে তখন তা আরও জমে উঠবে। ট্রাম্পের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রস্তুত এবং যোগ্য এমন কাউকেই বেছে নেবে তারা। বিগত নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প। এবার লড়াই হবে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তার ওপর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য রয়েছে- যা ঠিক করবে জনগণ কোন দিকে যাবে। দুই দল অবশ্যই সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই অগ্রসর হবে। অলোক আচার্য: শিক্ষক ও কলাম লেখক