দিলিস্নতে ভয়াবহ সহিংসতা এ পরিস্থিতির নিরসনই কাম্য

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
টানা চার দিনের দাঙ্গায় মৃতু্যপুরীতেই যেন পরিণত হয়েছে দিলিস্ন; এমনই ভয়াবহ খবর এসেছে গণমাধ্যমে। ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) দেশজুড়ে যে অশান্তির জন্ম দিয়েছে, তারই নেতিবাচক প্রভাবে দিলিস্নতে শুরু হয়েছে নজিরবিহীন সহিংসতা। উদ্বেগের বিষয় হলো চার দিনে ৩৪ জন নিহত হওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এ ছাড়া আহত নাগরিকের সংখ্যা ২শ ছাড়িয়ে গেছে। গ্রেপ্তারের ঘটনাও বাড়ছে। বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে দিলিস্নর চলমান এ সহিংসতাকে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা বলে উলেস্নখ করা হচ্ছে। ভারতের মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক এবং অসম্প্রদায়িক দেশে- এমন ঘটনা অত্যন্ত পরিতাপের। ভারতের ন্যক্কারজনক এ ঘটনা প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি একই সঙ্গে উদ্বেগ এবং আতঙ্কের। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষ ও বিপক্ষ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সূচনা হয়েছিল রোববার- যা পরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। সংঘর্ষের নানা ছবি ও ভিডিওচিত্রতে সয়লাব হয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া। এসব ছবিতে দেখা গেছে, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লাঠি-রড নিয়ে মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সংঘর্ষকারীরা। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে! তথ্য মতে, সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে মুসলমান ও হিন্দু- দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষই আছেন। সহিংসতায় আহত হয়ে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধসহ সব ধরনের হামলার শিকার ব্যক্তিরাই আছেন। বুধবারও সহিংসতা সৃষ্টিকারীরা পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটান দিলিস্নর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে। তবে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশন ও মৌজপুর চক থেকে বিক্ষোভকারীদের জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়েছে। বলেও জানা যায়। এখানে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষ-বিপক্ষের শত শত মানুষ পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 'শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের' আহ্বান জানানো সত্ত্বেও থামেনি দিলিস্নর সহিংস ঘটনা, উত্তরপূর্ব দিলিস্নর পরিস্থিতি আগের মতোই উত্তেজনায় টান টান হয়ে আছে। রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর চলাকালেই রাজধানী দিলিস্নতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি মিছিল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক সহিংসতায় রূপ নেয়। মুসলিম অধু্যষিত উত্তরপূর্ব দিলিস্নর ভজনপুরা, মৌজপুর ও কারাওয়াল নগরে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উত্তরপূর্ব দিলিস্নর সহিংসতাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে 'সরকার শান্তি ফিরিয়ে আনবে', ব্যক্তিগতভাবে এমন আশ্বাস দিলেও শান্তি ফিরে আসেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একের পর এক রিভিউ মিটিং করে গেলেও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ দিলিস্ন হাইকোর্ট পুলিশকে ঘৃণা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে বলেছে। চার বিজেপি নেতার বক্ততৃার ভিডিও দেখার পর আদালত এমন নির্দেশনা দেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দলের নেতারা মুসলিমবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। এরপর এনআরসির পর বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ভারতের এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তি ও উন্নয়ন বিঘ্নিত হবে। পাশাপাশি মুসলমান অধু্যষিত দেশগুলোতেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অমূলক নয়। বিশেষ করে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে রয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করতে হবে। এ দেশে যেন ভারতের উত্তপ্ত ঘটনার আঁচ না লাগতে পারে তার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকারও বিকল্প নেই। সর্বোপরি বলতে চাই, এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হলেও, তা কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, সহিংসতায় হিন্দু বা মুসলিম, কারো লাভ হয় না। বরং লুণ্ঠিত হয় মানবাধিকার। আমরা প্রত্যাশা করি, নাগরিক অধিকার এবং মানবাধিকার রক্ষায় সহিংসতার পথ পরিহার করতে হবে। উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে উন্নয়নে সবাইকে মিলেমিশে, আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। অসাম্প্রদায়িক ভারতের অখন্ডতা রক্ষার স্বার্থেই তা অত্যন্ত জরুরি।