পাঠক মত

গণিতকে ভয় নয় জয় করে

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
গণিত হলো গুছিয়ে চিন্তা করার ভাষা, সব বিজ্ঞানের বিজ্ঞান। ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল, এমনকি সাহিত্যে বিশেষ গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক সময় গণিতের প্রয়োজন হয়। গণিতের প্রয়োজনীয়তা বা জীবনের নানা ঘটনার সঙ্গে গণিতের সম্পৃক্ততা বর্ণনা করতে গেলে দেখা যাবে এর কোনো শেষ নেই। কিন্তু সকল বিজ্ঞানের এই ভাষা নিয়ে সাধারণের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। যার মূল কারণ বলে আমি মনে করি, গণিত সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব। আর বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি রাষ্ট্র যেখানে জনসাধারণকে মৌলিক অধিকারসমূহ ভোগ করার জন্য সংগ্রাম করতে হয় সেখানে গণিত শিক্ষা জনসাধারণের একটি বড় অংশের কাছে শুধু টাকা-পয়সার লেনদেনেই সীমাবদ্ধ। তবে নিকট অতীতে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম গণিত শিক্ষায় উজ্জ্বল সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত স্বর্ণপদক অর্জন করে। দীর্ঘ ১৫ বছরের যাত্রায় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের অর্জন ০১টি স্বর্ণ, ০৬টি রৌপ্য, ২৩টি ব্রোঞ্জ এবং ৩১টি সম্মানসূচক স্বীকৃতি। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, গণিত শিক্ষার অবস্থা আগের থেকে উন্নত হয়েছে। তবে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শহর কেন্দ্রিক উন্নয়ন। গ্রামে পর্যাপ্ত মানমম্মত শিক্ষক এবং শিক্ষা উপকরণের অভাবে অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। এই অবস্থা উন্নয়নে গণিত শিক্ষকদের প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষকদের প্রধান কাজ হলো শিক্ষার্থীকে গণিতে আগ্রহী করে তোলা, গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে যে ভয় তা দূর করা। শিক্ষার্থীদের কাজ হলো কৌতূহল থেকে শিক্ষককে প্রশ্ন করা। সেক্ষেত্রে শিক্ষককে অবশ্যই প্রশ্নের উত্তর দিবে হবে। বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। ইন্টারনেট ব্রাউজিং অথবা ইউটিউবিংয়ের মাধ্যমে অনেক প্রশ্নের সমাধান পাওয়া সম্ভব। তবে সবচেয়ে বড় সহায়ক গণিতবিষয়ক বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক। আমাদের দেশের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে গণিতের সেসব বই পড়ানো হয় তা যথেষ্ট আকর্ষণীয় নয়। এই যেমন পীথাগোরাসের উপপাদ্য ৮ম শ্রেণির গণিত বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। কিন্তু পীথাগোরাস সংখ্যা নিয়ে কি চিন্তা করেছিলেন তা আমাদের পাঠপুস্তকে নেই। একটি বই পড়ে আমি তা জেনেছি। পীথাগোরাসের চিন্তা ভাবনা ছিল একটু অদ্ভুত। তিনি চিন্তা করতেন এই পৃথিবীর সবকিছুই সংখ্যা দিয়ে তৈরি। তিনি বলতেন এক সৃষ্টিকর্তার সংখ্যা, দুই হচ্ছে প্রথম নারী সংখ্যা, তিন হচ্ছে প্রথম পুরুষ সংখ্যা এবং দুই আর তিন যোগ করলে পাঁচ হয়, পাঁচ হচ্ছে বিবাহ সংখ্যা। সব কিছুতেই তিনি সংখ্যা চিন্তা করতেন। একবার এক শিষ্য এসে পীথাগোরাসকে জিজ্ঞাসা করল, 'গুরু, বন্ধুত্ব কী জিনিস?' গুরুর তো সব চিন্তা সংখ্যা নিয়ে, সুতরাং তিনি বললেন - 'বন্ধুত্ব। এটা আসলে ২২০ আর ২৮৪ এর মধ্যে যে সম্পর্ক সেটাই।' শুনেতো শিষ্যের মাথা খারাপ ! -'গুরু এটা কি বললেন? একটু ব্যাখ্যা করবেন?' - '২২০ এর উৎপাদক গুলো হচ্ছে ১, ২, ৪, ৫, ১০, ১১, ২০, ২২, ৪৪, ৫৫, ১১০, ২২০। আবার ২৮৪-এর উৎপাদক হচ্ছে ১, ২, ৪, ৭১, ১৪২, ২৮৪। তুমি কি জানো প্রকৃত উৎপাদক কি?' - 'না তো গুরু!' - 'প্রতিটি সংখ্যা দিয়ে তো ঐ সংখ্যাকে ভাগ করা যায়, যার ভাগফল ১। তার মানে প্রতিটি সংখ্যা নিজেই নিজের উৎপাদক। এই নিজেকে বাদ দিলে বাকি যে উৎপাদকগুলো থাকে সেগুলো হচ্ছে প্রকৃত উৎপাদক'-এর অর্থ হচ্ছে, ধর ২২০ এর ক্ষেত্রে ২২০-কে বাদ দিলে বাকি যেগুলো থাকবে সেগুলো হচ্ছে ২২০ এর প্রকৃত উৎপাদক। তাহলে ২৮৪ এর প্রকৃত উৎপাদক কোনগুলো ?' -'কেন গুরু, এই যে ২৮৪ বাদ দিয়ে বাকিগুলো!' -'বাহ! এখন এর মধ্যে বন্ধুত্ব কোথা থেকে এলো, তাই না? এই ২২০-এর সব প্রকৃত উৎপাদক যদি যোগ করা হয় তাহলে যোগফল হবে ২৮৪। আর ২৮৪ এর সব প্রকৃত উৎপাদককে যোগকরলে যোগফল হয় ২২০। অর্থাৎ ১+২+৪+৫+১০+১১+২০+২২+৪৪+৫৫+১১০=২৮৪ এবং ১+২+৪+৭১+১৪২=২২০। এ থেকেই বোঝা যায় এরা আসলেই বন্ধু।' এজন্য ২২০ এবং ২৮৪-কে বন্ধু সংখ্যা বা অসরপধনষব ঘঁসনবৎং বলা হয়। এরকম আরও সংখ্যা পাওয়া গেছে, যেমন ১১৮৪ এবং ১২১০; ২৬২০ এবং ২৯২৪, ৫০২০ এবং ৫৫৬৪ ইত্যাদি। এই বিষয়টি উলেস্নখ করার উদ্দেশ্য এই যে, সিলেবাসের বইয়ে নিজেকে আটকে রেখে গণিত শেখা যায় না। গণিতের এরকম মজার মজার কাহিনী জানতে হলে গণিত সম্পর্কিত বিভিন্ন বই এবং ওয়েবসাইটে বিচরণ করতে হবে। গণিতে শিক্ষকদেরও এসব ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে এবং আগ্রহী করে তুলতে হবে। তাহলে আগামীর বাংলাদেশ গণিতকে ভয় নয়, জয় করবে। এম. শফিউল হক সহকারী শিক্ষক (গণিত) বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্ঝর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট