১৯৪৮ ও ১৯৫২'র ভাষা আন্দোলনের বহুমাত্রিক অর্জন আমাদের জানা। তবুও নতুন নতুন প্রজন্মের আগমনের কারণে ও রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক ব্যর্থতার সুযোগে যে সব অর্জন কার্যত ইতোমধ্যেই ফিকে হয় এসেছে, আমাদের সাংবাৎসরিক কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধ্যমতো সেগুলো তুলে ধরার। যাতে বর্তমানে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আবার নতুন উৎসাহে হারানো বিজয়গুলো পুনরায় অর্জন করতে পারে এবং তাকে বিক্ষিত করতে পারে।
১৯৪৭-এর রাষ্ট্রীয় বিভাজন ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব যে উৎকট সাম্প্রদায়িকতার ফসল (এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির সাফল্যও বটে) ১৯৪৮-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক মাস যেতে না যেতেই, বাঙালি মূলে ফেলে দেয় ১৯৪৮-এর মার্চে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে।
আমাদের সবারই মনে আছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টে। ছয় থেকে সাত মাস যেতে না যেতেই ১৯৪৮ সালের মার্চে বাঙালি তরুণরা 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' বলে মাঠে নেমে পড়লেন আজ তা ভাবলে বিস্মিতই হতে হয়। কারণ ১৯৪৭ সালে অসাম্প্রদায়িক শক্তির পরাজয়ই তো ঘটেছিল 'মুসলমানের রাষ্ট্র' হিসেবে; সেখানে ১৯৪৮-এর শুরুতেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদলিক তাত্ত্বিক ভিত্তিমূলেই তো আঘাত হেনে ফেলল কারণ ঐ আন্দোলন ছিল স্পষ্টতই দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরোধী। দ্বিজাতিতত্ত্ব ও সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিমূলে বড় ধরনের আঘাত হেনেছিল ওই আন্দোলনের মাধ্যমে।
কিন্তু এত দ্রম্নততার সঙ্গে আন্দোলনটির সূচনা হলো যে, ব্যাপক মানুষের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে তা বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। কারণ, যে মানুষ ১৯৪৬-এ (বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়) ভোটের জোরে 'মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিল, যে ইসলামী জোস বাঙালি মুসলিম মানুষকে গ্রাস করেছিল তা কি অত দ্রম্নতই সমাজদেহ থেকে বিদূরিত হয় কখনও? তাই তার রেশ বেশ ভালোভাবেই ছিল সেই পাকিস্তানি জোশ হারিয়ে যায়নি তখনও মুসলিম সমাজদেহ থেকে। এ কারণেই মূলত ১৯৪৮-এর আন্দোলন দ্রম্নত আরও ব্যাপকতা লাভ করতে সক্ষম হয়নি।
তবে একটা আগুন জ্বলেছিল- যা তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি করে জ্বলছিল। ১৯৫২'র ফেব্রম্নয়ারিতে এসে তা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। সমাজকে প্রচন্ড নাড়া দিল। বাঙালি তীব্রভাবে ঘুরে দাঁড়াল ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। ঝড়ের মতো জানান দিল যে, তারা হিন্দু নয়। মুসলমান না, তারা সবাই বাঙালি যে বাঙালিত্ব রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ ভয় পেতো এবং সে কারণেই প্রচার করতো যে বাংলাভাষা হিন্দুর ভাষা, মুসলমানের নয়। বাংলাভাষা ভারতের ভাষা, পাকিস্তানের নয়।
সবাই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। শিল্পীরা, সাহিত্যিকরা, কবি ও গাল্পিক এবং ঔপন্যাসিক, সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, বাদ্যশিল্পী, ছাত্র ও যুব সংগঠন, নারীসমাজসহ সমগ্র বাঙালি জাতি। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নির্বিশেষে সমগ্রজাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' স্স্নোগানে মুখরিত করে তুলেছিল সারা বাংলার মানুষ।
সরকার গুলি দিয়ে জবাব দিল। মানুষ দলে দলে জেলে গেল আন্দোলন অব্যাহত রাখল তীব্রতর করে তুললো দিনে দিনে। বিজয় অর্জন করেই ছাড়ল তারা। বহুমাত্রিক বিজয় আমরা দেখেছি বাঙালি সংস্কৃতির পুনরাবাহন। দেখেছি নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্ম, গণসংগীত, রবীন্দ্র সংগীতের নজরুল সংগীতের ব্যাপক প্রসার, দেখেছি নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আলপনার পুনঃস্থাপন, দেখেছি নাটকে যে সব স্থানে বাধা দেওয়া হতো, সে সব জায়গায় বাধাকে বাধাহীন করে তুলতে, যে সব স্থানে অভিনয়কালে পুরুষকে নারী সাজিয়ে অভিনয় মঞ্চে তুলতো সে সব স্থানে আবার নারীই নারীর চারিত্রে অভিনয় সুরু করতে। দেখেছি শহরে বন্দরে, হাটে-বাজারে সর্বত্র দোকান-পাটসহ নানা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড আরবি, উর্দু, ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় নতুন করে লিখতে।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির স্বীকৃতির পরবর্তীকালে দেখা গেছে বাংলাসাহিত্যের প্রসারে বাঙালি কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিকদের নতুন নতুন বই লিখতে ও প্রকাশ করতে, বই মেলার প্রচলন হতে, ধীরে ধীরে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটতে। বস্তুত, সমাজে এক বিশাল ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হতে এবং ধীরে ধীরে সমাজদেহ থেকে সাম্প্রদায়িকতা উচ্ছেদ বা হ্রাসের প্রক্রিয়া চালু হতে।
একে একে নানা অসাম্প্রদায়িক ছাত্র, যুব সংগঠন রাজনৈতিক দল গঠিত হতে শুরু করল এবং এ জাতীয় সংগঠন হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের জন্ম হলো সত্ত্বর দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার শাখার বিস্তার ঘটায় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ধীরে ধীরে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টা পরিষ্কার উপলব্ধিতে এলো। গণতন্ত্রী দল নামে বিরোধী রাজনৈতিক দল গঠিত হলো।
বিদ্যমান সংগঠনগুলো তাদের নামের সাম্প্রদায়িক অংশ বর্জন করে অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে পরিণত হওয়ায় প্রক্রিয়াও শুরু হলো। ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ তার নামের মধ্য থেকে 'মুসলিম' শব্দটি তুলে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র লীগ এবং ১৯৫৬-তে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান, তাজউদ্দীন প্রমুখের উদ্যোগে 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' থেকে 'মুসলিম' শব্দটি তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগে পরিণত হওয়ার মতো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটতে শুরু করে।
ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে এ কথা আমাদের স্মরণে রাখতে হবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপর ১৯৪৮ সালের গোড়ার দিকে প্রথম সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী যুব সংগঠন হিসেবে 'পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের আত্ম প্রকাশ ঘটেছিল। ওই যুব লীগের নেতারাই ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থান রেখেছিল। ওই যুবলীগ নেতাদের মধ্যে জীবিত আছেন প্রফেসার ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। জেলা পর্যায়েও কেউ কেউ জীবিত আছেন মুষ্টিমেয় সংখ্যায়- তবে সংগঠনটি প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজও অস্তিত্বহীন। এখন যে যুবলীগকে রাজনৈতিক অবস্থানে দেখা যায়, সেটি ১৯৪৮ সালের ওই যুবলীগ নয়।
১৯৪৮-এর যুবলীগের প্রয়াত নেতাদের অবিস্মৃত নামগুলো হলো- ইমাদুলস্নাহ তাজ-উদ্দিন আহমেদ কে জি মুস্তফা, আবদুল মতিন (ভাষা মতিন), ওলি আহাদ, গাজীউল হক, আতাউর রহমান, আমিনুল ইসলাম বাদশা, মোহাম্মদ তোয়াহা প্রমুখ।
আর একটি উলেস্নখযোগ্য ঘটনা হলো ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক, ছাত্র, যুব প্রতিষ্ঠানের জন্ম বন্ধ যদিও তখন কাউকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি রাষ্ট্রীয়ভাবে।
যে সব সংবাদপত্র ভাষা আন্দোলনের পর প্রকাশিত হয় তাদের নাম শুরু হয় বাংলা শব্দ দিয়ে। অবশ্য এমন প্রথম পত্রিকা হলো দৈনিক সংবাদ। কিন্তু 'আজাদ' ইত্তেফাক, ইত্তহাদের মতো বিদেশি শব্দে সংবাদপত্রের নামকরণ তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এবং মোটামুটি তা আজও অব্যাহত আছে।
পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ১৯৫৪-র নির্বাচনে হক-ভাসানী- সোহ্রাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট অসাধারণ এবং একচ্ছত্র বিজয় অর্জন করে শাসক মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটিয়ে। পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, অতঃপর শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর বৈরুতে আকস্মিক মৃতু্য ঘটলো শেখ মুজিবের হাতে আওয়ামী লীগের একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পূর্ববাংলা স্বায়ত্তশাসন, ৬ দফা, ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর ব্যাপক গণঅভু্যত্থান এবং সর্বশেষ ১৯৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অকল্পনীয় বিজয় ঘটলো। কিন্তু তার হাতে কিছুতেই রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ভিন্ন পথে কর্তৃত্ব জোর করে ধরে রাখতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে শুরু করে ব্যাপক গণহত্যা-বাঙালি নিধন।
নিরস্ত্র বাঙালিকে তখন ঘুরে দাঁড়াতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্য, জাতীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে নয় মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বহু অনাকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ নামক নতুন ধর্মরিপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অভু্যদয় ঘটে। আকাশে রক্তিম সূর্যের উদয় হয়।
অতঃপর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও ১৯৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন ও বাংলাদেশের মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ওই সংবিধানে গৃহীত হওয়াতে ভাষা আন্দোলনের আদর্শিক বিজয়ের পরিপূর্ণতা আসে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭২ মাত্র ২৪ বছরে কি বিশাল বিজয়ই না অর্জিত হয়েছিল। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি ধর্মীয়, শৈল্পিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে বাঙালি সংস্কৃতির বহুবিধ বিকাশ উন্নয়নের কি অপূর্ব অনুকূল পরিবেশই না সৃষ্টি হয়েছিল।এবার যদি ১৯৭২ থেকে ২০১৮ এই ৪৬ বছরের অর্থাৎ আগের দফায় দ্বিগুণ সময়ের অর্জন হিসেব করি তাহলে কি পাই? অনেক রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও বিপণিবিতান প্রভৃতি স্থাপিত হয়েছে, অনেক সেতু নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে। চোখ ধাঁধানো বহুতল দালান কোঠা ঢাকাসহ বাংলাদেশে যত ঘটেছে গোটা পশ্চিম বাংলায় তা ঘটেনি। জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, গড় মাথাপিছু আয় বেড়েছে সব দাবি সত্য। বিশাল বিশাল বাজেট পাস করছি তাও সত্য। কিন্তু মূল বিবেচ্য হলো মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্য কি কমেছে? কোটিপতি লোকের সংখ্যা কত? মাসিক পাঁচ হাজার বা তার চেয়ে কিছু কম আথবা বেশি টাকা উপার্জন করে এমন নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীনের সংখ্যা কত? নিশ্চয়ই মানতে হবে জনসংখ্যার ৫ ভাগ বা তার কিছু কম অথবা বেশি কোটিপতি দেশের ৯৫ ভাগ অর্থবিত্তের মালিক। তা হলে উন্নয়নটা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে কাদের? জবাবে বহু কথা বলতে হয় তেলা মাথাতেই তেল ঢালা হয়েছে এবং হচ্ছে। বেকার যুবকের সংখ্যা দুই কোটির মতো হতে পারে। যদি তা এক কোটিও হয় তা হলে কি করে দাবি করা যাবে আগামী পাঁচ বছরে গ্রামগুলোতে শহরের সব সুবিধা পৌঁছে দেয়া যাবে? শুধু একুশের মাসব্যাপী গ্রন্থমেলার জলুস বৃদ্ধি বা সময় ও এলাকাবৃদ্ধির দ্বারা একুশের চেতনা ও আদর্শের প্রচার প্রসার হচ্ছে তা বলা যাবে কি? ধর্ম নিরপেক্ষতা কার্যত বিদায় দিয়ে রাষ্ট্রধর্ম লালনের মাধ্যমে ধর্মীয় বৈষম্য বৃদ্ধি, পাঠ্যক্রমের সাম্প্রদায়িকীকরণের মাধ্যমে একই পঞ্চাপদ চিন্তাভাবনার বিকাশ জোর কদমে ঘটানো হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে মসজিদ নির্মাণ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মূলে শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কোটি কোটি মুসলিমও মানসিকভাবে এবং নৈতিকভাবে সমর্থনের কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না। একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন ছিল আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার। সেটা একমাত্র সাধারণ ও বিজ্ঞান এবং কারিগরি শিক্ষার প্রসারের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছেটা কি? কিন্ডারগার্টেনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার, মাদ্রাসাগুলোর সংখ্যা হু হু করে বাড়িয়ে আরবি এবং ধর্মীয় শিক্ষার বিকাশ এতগুলো বা ত্রিধারা শিক্ষা কি আমাদের জাতীয় ও সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক বিকাশের সহায়ক? নাকি প্রকৃতপক্ষে বাংলা শিক্ষার অবমূল্যায়ন করে আমরা ইংরেজি আরবি শিক্ষার প্রতি অধিকতর মনোযোগ দিয়েছি। বাংলাভাষার আন্দোলনের মহিমা কোথায় রক্ষিত হচ্ছে? ইংরেজি শিক্ষা ও তার প্রভাব বৃদ্ধির অনুকূল-আবার বাংলা শিক্ষার অবমূল্যায়ন কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। আইনের বই, দর্শনের বই, বিজ্ঞানের বই, বাংলায় অনুবাদ কতটুকু হয়েছে? কেন বেশি বেশি হচ্ছে না? উচ্চাদালতে পুরোপুরি বাংলা ভাষার প্রবর্তনের পথে বাধাই বা কোথায়? তাই হিসাবনিকাশ কি পাওয়া যায়? ভাষা আন্দোলনের বিপুল অর্জনের পাশাপাশি আমরা হারালাম কতটুকু? মৌলিক আদর্শিক বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে? বর্জনের পথেই কি হঁাঁটছি না আমরা শহিদদের আদর্শ বাস্তবায়নের নামে? একটি উৎপাদনশীল অর্থনীতি, আত্মনির্ভরতার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার বদলে আমদানিনির্ভর অর্থনীতি দিয়ে উন্নত করা যাবে না।
আমরা হতে চাই অধিক থেকে অধিকতর রপ্তানি ক্ষমতাসম্পন্ন, নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে বেকারত্বমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ ভাষা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যা থাকবে দীপ্তমান। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার- রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকবে না- এ নীতি প্রতিষ্ঠায় দেশ আজও অঙ্গীকারবদ্ধ।
রণেশ মৈত্র: সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত
Copyright JaiJaiDin ©2021
Design and developed by Orangebd