মূর্তিমান আতঙ্ক করোনাভাইরাস

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারি আমলে নিন

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এখন বিশ্বজুড়ে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। এই ভাইরাসের সংক্রমণ বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এখনই কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নেওয়া গেলে বিশ্বজুড়ে এর প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস গেব্রিয়েসাস। ভাইরাসটি 'নির্ণায়ক বিন্দুতে' পৌঁছেছে এবং এর 'মহামারি হয়ে ওঠার সম্ভাবনা' রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বিবিসি-তে তিনি জানিয়েছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে দ্রম্নত ও আরও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক আগেই চীনের এই করোনাভাইরাস চীনের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের ভেতর ভাইরাসটিকে 'বেঁধে রাখা' সম্ভব না হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন চিকিৎসা উপকরণের মজুত বাড়াচ্ছে; বিশ্লেষকরা বিশ্বজুড়ে নতুন অর্থনৈতিক মন্দারও আশঙ্কা করছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ইরানের নারী ও পরিবারবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে এবতেকারও আছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়াসহ অন্তত নতুন ১০টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। সঙ্গত কারণেই করোনাভাইরাসের আতঙ্কে রয়েছে বিশ্ববাসী। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। চীনের মূল ভূখন্ড ও হংকংয়ের পাশাপাশি জাপান ও ইরাকও তাদের দেশের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। ইরান দেশের ভেতর মানুষের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে; তেহরান ও অন্যান্য শহরের জুমার নামাজের প্রার্থনাও বাতিল করা হয়েছে। চীনের মূল ভূখন্ড থেকে আসা সব বিদেশির দেশে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস ইতালিতে ১৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। দেশটি তাদের ১১টি শহরকে 'কোয়ারেন্টিন' করে রেখেছে। গ্রিস তাদের কার্নিভালসংক্রান্ত সব কার্যক্রম বাতিল করেছে। সৌদি আরব বিদেশি ওমরাহ যাত্রীদের দেশে ঢোকায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত জুলাইয়ে দেশটিতে হজ করতে যাওয়া বিদেশিদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। আর দেশে দেশে এমন সব প্রস্তুতির মধ্যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে আবারও সতর্কতা জারি করার পাশাপাশি ভাইরাস মোকাবিলার সমন্বিত পদক্ষেপের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হলো। তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৪৪ জনের মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছে চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন। এর মধ্যে ৪১ জনই হুবেই প্রদেশের। এদিন আরও ৩২৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭৮ হাজার ৮২৪ জনে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও ২৫৬ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ হাজার ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে আগের তুলনায় মৃতের সংখ্যা কম হওয়া এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার তথ্যে স্পষ্ট হতে পারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে চীনা প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বিষয়টি নিয়ে লুকোচুরি বা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা না করে চীনা সরকার শুরু থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে এবং নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ ও উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা মনে করি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোকেও একইভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়। সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশও এ ব্যাপারে সতর্ক। বলাই বাহুল্য, চীন আমাদের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ও বিনিয়োগকারী দেশ। চীন ও বাংলাদেশের শত শত নাগরিক প্রতিদিন এই দুই দেশে যাতায়াত করেন। এখনো বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত না হলেও চীনসহ যে সব দেশ থেকে অসংখ্য যাত্রী প্রতিদিনই বাংলাদেশে যাতায়াত করেন তেমন বেশ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সিঙ্গাপুর এবং প্রতিবেশী দেশ নেপালেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়ায় আমাদের জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। প্রত্যাশা থাকবে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা জনসচেতনতা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেবেন। বিশেষত দেশের সব বিমানবন্দর, নৌ ও স্থল সীমান্তপথগুলোতে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি বা অবহেলা করার সুযোগ নেই।