বায়ুদূষণের চার কারণ যথাযথ পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কিছুতেই যেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না দেশের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি। বায়ুদূষণের শিকার শহরগুলোর তালিকায় ঘুরেফিরে প্রথম স্থান দখল করছে রাজধানী ঢাকা। স্বাভাবিকভাবেই এটি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, যখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন- মূলত চার কারণে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন রাজধানীবাসী- তখন তা আমলে নেওয়া অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রথমত, পুরনো যানবাহনের আধিক্য। দ্বিতীয়ত, অপরিকল্পিতভাবে শহরের যেখানে সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজ। তৃতীয়ত, শহরের আশপাশের ইটভাটা ও শিল্প কলকারখানার দূষণ। চতুর্থত, শহরের ভেতরে যে ময়লা-আবর্জনা জমে সেগুলো পোড়ানোর ধোঁয়া- এই কারণগুলোই আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া সরকার কঠোর না হওয়ায় এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটছে না বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করা। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেড় কোটিরও বেশি মানুষের আবাসস্থল ঢাকা। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থানও প্রথম দিকেই। পরিবেশবিদরা বলছেন, অন্য দেশগুলো তাদের বড় শহরগুলোর বায়ুদূষণ রোধে যেখানে পদক্ষেপ নিয়েই চলেছে, সেখানে ঢাকা ব্যর্থ। আর দূষণের সব থেকে বড় উৎস ঢাকার বর্জ্য, আর এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। আবার শহরের মধ্যে উন্নয়ন কাজের ফলে সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণও ঠিকঠাক মতো করে উঠতে পারছে না দুই সিটি করপোরেশনের কোনোটিই। আমরা মনে করি, বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের যে অভিমত সামনে আসছে, তা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এটাও মনে রাখা দরকার, এমনিতেই বিপুল জনগোষ্ঠীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা একটি বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া চিকিৎসা সরঞ্জাম, চিকিৎসক সংকটও বিদ্যমান। আবার যদি বায়ুদূষণ সংক্রান্ত ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্ট হয় তবে তা কতটা উৎকণ্ঠার তা সহজেই অনুমেয়। বলা দরকার, এর আগেও এমন খবর সামনে এসেছে যে, বায়ুদূষণজনিত রোগে দেশে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া চিকিৎসকরাও বলেছেন, বায়ুদূষণজনিত রোগ বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আরও উদ্বেগের বিষয় হলো- এতে বেশি ঝুঁকির শিকার গর্ভবতী মা ও শিশুরা। অটিস্টিক শিশুর জন্ম হওয়ার একটি কারণও দূষিত বায়ু। বাচ্চাদের জন্মকালীন ওজন কম হওয়ার একটি কারণও বায়ুদূষণ। আবার বায়ুদূষণের কারণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। হাঁচি-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার। এই ক্যান্সারের বড় কারণও দূষিত বায়ু। কিডনি ও হৃদরোগের কারণও হতে পারে বায়ুদূষণ- এমনটিও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। উলেস্নখ্য, বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেছেন, অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে দূষণ বেশি। কারণ আমাদের এক্টিভিটি বেশি। কনস্ট্রাকশন বেশি, আর নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থাও নেই। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, সবাই মিলে সমন্বিতভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা এটাও বলছেন যে, ধুলোবালির মধ্যে মূলত ছয় ধরনের পদার্থ ও গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে- যা আমলে নেওয়া সমীচীন। ভুলে যাওয়া যাবে না, বায়ুদূষণের কারণে বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি হয়। বায়ুদূষণের ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে এমন বিষয়ও এর আগে খবরে উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।