রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতি বছর রমজান মাস এলেই নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। অভিযোগ আছে, এক শ্রেণির অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। বহুবারই আলোচনায় এসেছে যে, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবেই ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায়। প্রতি বছর রমজানের বাজারের এই হালচাল অত্যন্ত উদ্বেগের। রমজানের সময় ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, মসলা ইত্যাদি পণ্যের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা মওকা বুঝে এ সময়টাতেই চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বড় ব্যবসায়ী থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবার প্রবণতা এই সময় বেশি লাভ তুলে নেওয়ার। এই পরিস্থিতি কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, সরকার রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আমরা মনে করি এই উদ্যোগের কারণে সরকার সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে পণ্যের দাম বাড়ে, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে সে প্রভাব দেশীয় বাজারে খুব কমই পড়ে। বলা যায় পড়েই না। আর রমজানের জন্য পণ্য বহু আগেই আমদানিকারকরা এনে মজুত করেন, ফলে মাসখানেকের ব্যবধানে বাজারে দাম বাড়ার কথা নয়। অন্যদিকে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নেয় প্রতি বছর। টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করেও এর সুফল মেলেনি। এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় বৈঠক করেও অতীতে পণ্যের দাম বাড়ানো রোধ করা যায়নি। ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পণ্যের দাম বাড়াবে না বলে প্রতিশ্রম্নতি দিলেও নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়াতে দেখা গেছে অতীতে। ফলে সরকার এবার রমজানের আগেই বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার খবরে সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তি বিরাজ করছে। পাশাপাশি সরকারের এই উদ্যোগ কতটুকু সফল হবে, অতীতের কথা বিবেচনা করে তা নিয়েও আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীরা যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে। বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি আমদানি পণ্যের মূল্যতালিকাও বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া যে সব ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেট মূল্য বৃদ্ধি করবে তাদের শনাক্ত করে তাৎক্ষণিকভাবে সাজা নিশ্চিত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি দেশে বাজার অস্থিতিশীল করতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেড সক্রিয় থাকবে তা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। জানা গেছে, কোনো পরিস্থিতিতেই নিত্যপণ্যের বাজার যাতে অস্থির হতে না পারে সেজন্য কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। আগেভাগেই বাজার মনিটরিংসহ চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২২ মার্চ পবিত্র শবেমেরাজের পর থেকেই বাজারের মনিটরিং জোরদার করা হবে। একই সঙ্গে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী অনৈতিক মুনাফার লোভে কোনো পণ্যের অবৈধ মজুত গড়ছে কিনা তা শনাক্ত করতে দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকেও মাঠে নামানো হবে। কোথাও অনিয়ম ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তথ্য অনুযায়ী, দেশীয় চিনি, তেল, আটা প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (টিসিবি) সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এসব বৈঠকে নিত্যপণ্য সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত থাকছেন। এতে জানা যায়, চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত নিত্যপণ্যের মজুত আছে। তাই এবার কোনো ধরনের সংকট হবে না বলে সভায় জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সর্বোপরি বলতে চাই, এবার যেহেতু সরকার আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণের, সুতরাং রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে না এ আশা সাধারণ মানুষ করতেই পারে। তবে সংশ্লিষ্টদের এটা মনে রাখা জরুরি যে, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে গৃহীত কৌশল যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করছে এর সফলতা। অতীতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত সর্বস্তরে সরকারের কঠোরতাই আমাদের প্রত্যাশা।