এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অত্যন্ত সুখবর যে, প্রবাসী আয় বাড়ছে। তথ্য অনুযায়ী গত আট মাসে ১২৫০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা, নানা উদ্যোগ ও টাকার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হওয়ায় রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বাড়িয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর ধারাবাহিকতায় বিশ্বের শ্রমবাজার থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। ২০১৯ সালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই সময় প্রবাসীরা যে পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে এত পরিমাণ প্রবাসী আয় আগে কখনো আসেনি। রপ্তানি কমে যাওয়ার মধ্যে তেজি রেমিট্যান্সপ্রবাহ অর্থনীতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ইতিবাচক এ খবর। গণমাধ্যমের বলা হয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ায় আগের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। যে কারণে প্রতি মাসেই আগের অর্থবছরের চেয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। সর্বশেষ ফেব্রম্নয়ারি মাসে প্রবাসীরা প্রায় ১৪৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। তবে এটি চলতি বছরের জানুয়ারির চেয়ে ১১ শতাংশ কম। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রম্নয়ারি) দেশে প্রায় এক হাজার ২৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে- যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, নগদ প্রণোদনার পাশাপাশি হুন্ডি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে এ জন্য তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ২ অক্টোবর থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে তাৎক্ষণিক ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা কার্যকর করা হয়েছে। সার্বিকভাবে এটি সরকারের একটি সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একক অর্থবছরে দেশে সর্বোচ্চ এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। এর আগের অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা; গত অর্থবছরের জুলাই মাসে এর পরিমাণ ছিল ১৩১ কোটি ৮১ লাখ ডলার। এভাবে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স বাড়ছে। তবে এখন পর্যন্ত একক মাসে সর্বোচ্চ ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে ২০১৯ সালের মে মাসে। সব মিলিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এক হাজার ২৪৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০.০৫ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য মতে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে প্রণোদনা। সরকারের দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে অনেকে এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ইতিবাচক এ ধারা অব্যাহত রাখতে এ ধরনের প্রণোদনাও চালু রাখা উচিত বলেই তারা মনে করেন। সাধারণভাবে প্রতি বছরই রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ওপরে থাকে। তবে ২০১৫ সাল থেকে টানা তিন বছর কমে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয় সরকারে। পরে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যালোচনায় উঠে আসে, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে সহজে হুন্ডি, দীর্ঘদিন ধরে টাকার দর এক জায়গায় স্থিতিশীল থাকাসহ বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স কমে আসার বিষয়টি। তবে অবৈধ হুন্ডি ঠেকাতে নানা উদ্যোগসহ বিভিন্ন কারণেই পর্যায়ক্রমে রেমিট্যান্স বেড়েছে। মনে রাখা দরকার, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আমাদের জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ পূরণ করে থাকে। ফলে এ ধারা অব্যাহত রাখতে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিয়ে নতুন শ্রমবাজারের দিকে নজর দিতে হবে। তারা যেন ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে রেমিট্যান্স পাঠান তা নিশ্চিত করাও জরুরি। পাশাপাশি যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত, তাদের দেখভালের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে, জনগণের কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কোনো বিকল্প থাকাও উচিত নয়।