মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নারী স্বাধীনতা ও নারীর মর্যাদা

নতুনধারা
  ০৮ মার্চ ২০২০, ০০:০০

আজ ৮ মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে দিনটি। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং বৈরী পরিবেশমুক্ত কর্মক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে আমেরিকার নিউইয়র্কের একটি সুতা কারখানার একদল সাহসী নারী এ প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলে। ওই সময় আন্দোলনকারী নারীদের ওপর চলে চরম নির্যাতন ও গ্রেপ্তার। তিন বছর পর ১৮৬০ সালে গঠন করা হয় নারী শ্রমিক ইউনিয়ন। দীর্ঘ দিনের দাবি ও নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পর ১৯০৮ সালে পোশাক ও শিল্পকারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে অবশেষে ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘও এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। আর ১৯৭৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

ইসলামে নারীর সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে 'নিসা' অর্থাৎ 'মহিলা' শব্দটি ৫৭ বার এবং 'ইমরাআহ' অর্থাৎ 'নারী' শব্দটির ২৬ বার উলেস্নখ হয়েছে। পবিত্র কোরআনে 'নিসা' তথা 'মহিলা' শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এ ছাড়া কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান। কিন্তু বর্তমানে নারী স্বাধীনতার কথা বলে নারীদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে জাহেলিয়াতের সেই নোংরামির দিকে। ইসলাম নারীদের যে মর্যাদা দিয়েছে পৃথিবীতে কেউ কখনো তা দেয়নি। তবুও নারীদের স্বাধীনতার কথা বলে এ সমাজে বেহায়াপনার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সমান অধিকারের কথা বলে ইসলামের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে দেয়া হচ্ছে। ইসলাম নারীদের মা হিসেবে, কন্যা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে যে মর্যাদা দিয়েছে সত্যিই তা অসামান্য। পিতার সম্পদে, স্বামীর সম্পদে, পুত্রের সম্পদে, ভাইয়ের সম্পদে নারীদের হক রয়েছে। ইসলাম ছাড়া কোথাও এমন হক নেই।

ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। মহানবী (সা.) বলেন, 'মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত'। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজী (সা.) বললেন, 'তোমার মা'। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন 'তোমার মা'। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন 'তোমার মা'। (বুখারি)।

কন্যার মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, 'মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।' হাদিস শরিফে আরও আছে, 'যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।'

মহানবী (সা.) বলেছেন, 'কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।' হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আলস্নাহ প্রাচুর্য দান করেন।

স্ত্রীর মর্যাদা : ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, 'তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।' (সূরা-২ বাকারা, আয়াত : ১৮৭)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, 'উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।' (মুসলিম শরিফ)। তিনি আরও বলেন, 'তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।' (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।' (সূরা-৪ নিসা, আয়াত : ১৯)। কোরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, 'নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।' (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।

বিধবাদের অধিকার সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, 'যারা বিধবা নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আলস্নাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী। (বুখারি ও মুসলিম)।

আলস্নাহ বলেন- 'হে মানবজাতি! ভয় করো তোমাদের প্রতিপালককে, যিনি তোমাদের (নারী-পুরুষ) একটি মাত্র আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা নিসা : আয়াত ১)

পুরুষরা যেন নারীকে হেয় বা ছোট করতে না পারে, সে জন্য আলস্নাহতাআলা অন্য জায়গায় ঘোষণা করেন, 'হে মানবজাতি! নিশ্চয় আমি তোমাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং বিভক্ত করেছি তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে পরিচয় করতে পার।' (সূরা হুজরাত : আয়াত ১৩) আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে যখন নারীর সব মর্যাদা ও অধিকার চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। সে সময় বিশ্বনবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম পৃথিবীতে আগমন করেন। আলস্নাহতাআলা তার ওপর নাজিল নারী অধিকারের বিষয়ে ঐশী বাণী- 'নারীদেরও রয়েছে অধিকার পুরুষের ওপর, যেমন পুরুষের অধিকার রয়েছে নারীদের ওপর।' (সূরা বাকারা : আয়াত ২২৮)। যারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলে নারীদের বিভ্রান্ত করছে তাদের কোরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জন করা উচিত। একমাত্র ইসলাম ধর্ম নারী-পুরুষের যে সমান অধিকার দিয়েছে বা নারীদের যে মর্যাদা দিয়েছে পৃথিবীতে কেউ কখনো তা দিতে পারেনি, কখনো পারবেও না।

আবু জাফর সিদ্দিকী

নাটোর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<91564 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1