শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সতর্কতা ও সচেতনতার বিকল্প নেই

রাজশাহীতে নৌকাডুবিতে মৃতু্য

নতুনধারা
  ০৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাকে ঘিরে স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশীর মনে যখন আনন্দ আর উৎসবের ঘনঘটা। বর-কনের স্বপ্নের বাসরে তখনই নেমে এলো অমানিশার অন্ধকার। বর্ণিল উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হলো শোকের মাতম! নতুন জীবনের মানেটা হারিয়ে গেল ঠিকঠাক করে শুরুর আগেই। চিরসঙ্গী এবং স্বজনদের হারিয়ে ফের নিঃসঙ্গ হলেন নতুন বর! রাজশাহীর পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনার পর বিয়েকে ঘিরে দুই বাড়ির দৃশ্যপট এখন এমনই শোকাবহ। স্বজন হারানোর ব্যথায় স্তব্ধ হয়ে গেছে বিয়ের ধুমধাম। কান্নার রোল পড়ে গেছে দুই পরিবারেই। নৌকাডুবির পর ভাগ্যক্রমে কোনোরকমে সাঁতরে পাড়ে উঠে প্রাণে বেঁচে আছেন বর আসাদুজ্জামান রুমন (২৫)। কিন্তু এখনো সন্ধান মেলেনি নববধূর। তিনি বেঁচে আছেন না স্রোতস্বিনী পদ্মাতেই সলিল সমাধি ঘটেছে সে কথা জানা নেই কারও। তাই তো নদীর পাড়ে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন সবাই। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা কী আর হতে পারে?

গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, শুক্রবার রাজশাহীর পদ্মা নদীতে বর-কনেসহ ৪১ যাত্রী নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় এখনো কনেসহ ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নৌকাডুবির তৃতীয় দিন নিখোঁজ শিশু রুবাইয়ার (১২) মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরিদল। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬-এ। বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চরখিদিরপুর এলাকার প্রয়াত ইনসার আলীর ছেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় আসাদুজ্জামান রুমনের সঙ্গে বিয়ে হয় পবা উপজেলার কর্ণহার থানার শাহীনের মেয়ে সুইটির। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুইটিকে নেওয়া হয় চরখিদিরপুরে রুমনের বাড়িতে। শুক্রবার সেখানে বৌভাত ছিল। সুইটির স্বজনরা বৌভাতের দাওয়াত খেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় সুইটি ও তার স্বামী রুমনকে নিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ফিরছিলেন। ইঞ্জিনচালিত দুটি ছোট নৌকা ৪১ যাত্রী নিয়ে নগরীর শ্রীরামপুরে পদ্মা পার হওয়ার সময় মাঝনদীতে ঝোড়ো হাওয়া ও ঢেউয়ের কবলে পড়ে। এ সময় নৌকার ইঞ্জিন বিকল হলে যাত্রীরা ভয়ে নড়াচড়া করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের নৌকা ডুবে যায়।

জানা যায়, মাঝনদীতে নৌকা দুটি ডুবে যাওয়ার পর বালুবাহী একটি নৌকা এগিয়ে এলে সেটিতে ওঠেন অন্তত ৩২ জন। তাদের মধ্যে সাতজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে কনের ভাগ্নি মরিয়মকে (৬) মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ঘটনার পরই উদ্ধার করা হয় ১৪ জনকে। এর মধ্যে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর মরিয়ম খাতুন নামে এক শিশুর মৃতু্য হয়। রাত পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল প্রায় ২৪ জন। এ ছাড়া শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বেঁচে ফেরেন আরও ১৭ জন। শনিবার উদ্ধার পাঁচজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, খারাপ আবহাওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার কারণে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

জানা গেছে, এ ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে এবং চিকিৎসাসেবাও দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে মর্মান্তিক এই নৌকাডুবির ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রাজশাহী প্রশাসন। তদন্ত কমিটিতে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিআইডবিস্নউটি, পুলিশ নৌ-পুলিশ থেকে একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বলাই বাহুল্য, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। তারপর কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক।

স্মর্তব্য যে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, ত্রম্নটিযুক্ত নৌযান এবং অসাবধানতার কারণে আমাদের দেশে প্রায়ই নৌকাডুবিতে মর্মান্তিক মৃতু্যর ঘটনা সামনে আসে। বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়; কিন্তু সতর্ক ও সচেতন থাকলে প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব। এ ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে কোথাও ওই নৌকায় জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদির ছিল বলে জানা যায়নি। প্রাণহানিও এটিও অন্যতম একটি কারণ। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে নৌ-যান চলাচল করছে- সে প্রশ্নও অবান্তর নয়। রাজশাহীর নৌকাডুবির ঘটনায় শোকগ্রস্তদের সান্ত্বনা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। আমরা বলতে চাই, এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন থাকা আবশ্যক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<91744 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1