যথাযথ পদক্ষেপ নিন

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে 'সেফজোন'

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বজ্রপাতে যেভাবে একের পর এক মৃতু্যসহ ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে, তাতে পরিস্থিতি এমন যেন এটি এক ধরনের দুর্যোগ হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, গাছপালা কমে যাওয়া ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বজ্রপাতের ঘটনা বেড়েই চলেছে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের দেশে প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। কারণ মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে কৃষকের প্রাণহানিই ঘটে সবচেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে এটাও উলেস্নখ করা দরকার, আর এক মাস পরই মাঠে কৃষকের ব্যস্ততা বাড়বে, শুরু হবে বজ্রপাতও- এমনটি খবরে উঠে এসেছে। এমতাবস্থায় যখন বজ্রপাত থেকে জীবন বাঁচাতে 'পোর্টেবল লাইটনিং প্রোটেকশন সেফজোন' আবিষ্কার করেছে ইনস্টিটিউশন অব ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) এমনটি জানা যাচ্ছে তখন বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তথ্য মতে, এটা মূলত খোলা আকাশের নিচে বজ্রপাত থেকে কৃষকের নিরাপত্তার জন্য তৈরি করা হয়েছে। মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ করেই একজন কৃষক বজ্রপাতের আগুন থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এটা আমলে নেওয়া দরকার, কৃষি মাঠে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার গুরুত্ব বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। কারণ মৃতু্যর সংখ্যা অনুযায়ী ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ সাধারণ মানুষ বা গ্রামগঞ্জের কৃষক, শ্রমিক ও জেলে শ্রেণি। তার মধ্যে কৃষি কাজে সম্পৃক্তদের নিহতের হার ৭৪ শতাংশ। ১০ বছরে উলেস্নখযোগ্য ঘটনার মধ্যে ধান কাটা, রোপণ করা ও কৃষিসংক্রান্ত কাজে গিয়ে মৃতু্য হয়েছে একই সঙ্গে চারজন। মাঠে কাজ করার সময় কাছাকাছি কোনো নিরাপদ স্থাপনা না থাকায় বজ্রপাতের সময় কৃষক অরক্ষিত হয়ে যান। হাওড় অঞ্চলের কৃষকরা আরও বেশি অসহায়। নিরাপদ স্থান পেতে কৃষকের তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। এসব কৃষককে সুরক্ষা দেবে 'সেফজোন' এমনটি আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, এটি যদি নিরাপত্তা দেয় তবে বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। একইসঙ্গে কৃষকের সামর্থের সঙ্গে দামের বিষয়টি যথাযথ কী না সেটিও বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। আইডিইবি সূত্র জানিয়েছে, পোর্টেবল লাইটনিং প্রোটেকশন সেফজোনে মাত্র ১০ হাজার টাকায় ১০০ জন কৃষকের জীবন রক্ষা পাবে। মূলত একটি বাঁশের মাথায় এয়ার টার্মিনাল থাকবে। মাটির সঙ্গে সংযুক্ত করে ধাতব বস্তু দিয়ে মাটিতে আর্থিংয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে এয়ার টার্মিনাল থেকে নিচের দিকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে একটি প্রটেকশন জোন তৈরি হয়। এয়ার টার্মিনাল সাধারণত স্থাপনার ওপরে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় বসানো হয়। প্রকল্পের আওতায় সমস্ত ব্যবস্থা করবে আইডিইবি। শুধু ব্যবহারকারীরা এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। আমরা বলতে চাই, এই তথ্য আমলে নেওয়া দরকার, ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বজ্রপাতে ৬ হাজার ৭৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ৫ বছরেই বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৮ জন। ফলে সেফজোনের বিষয়টি নিয়ে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি মনে রাখতে হবে, আইডিইবি সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর থেকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু প্রবাহ, উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশে পুঞ্জীভূত মেঘ, বায়ুদূষণ, মোবাইল টাওয়ার হতে উৎপন্ন অতি মাত্রার ম্যাগনেটিক ফিল্ড ওয়েব, বনজঙ্গল উজাড় ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে বজ্রপাত বাড়ছে। ফলে বৃক্ষরোপণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখা জরুরি, দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই- কিন্তু যথাযথ উদ্যোগ নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নত বজ্রপাতের ভয়াবহতাকে সামনে রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।