সড়ক কি মৃত্যুফঁাদ হয়েই থাকবে

নাটোরে বাসচাপায় নিহত ১৫

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নাটোরের লালপুরে যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনার মুখোমুখী সংঘষের্ ১৫ জন নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকালের ওই দুঘর্টনায় আরও ১৫ জন আহত হন। স্থানীয় পুলিশ সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পাবনা থেকে বগুড়াগামী চ্যালেঞ্জার পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস কদিমচিলান এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী একটি লেগুনাকে চাপা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে। দুঘর্টনায় ঘটনাস্থলেই ১০ জন নিহত হন। এ ছাড়া আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়ার সময় আরও ৫ জনের মৃত্যু ঘটে। বলাই বাহুল্য, দেশের বিভিন্ন সড়কে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুঘর্টনা ঘটছে এবং এক একটি বিভীষিকাময় চিত্র দেশবাসীকে প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণে একাধিক সড়ক দুঘর্টনার মমর্ন্তুদ চিত্র ফুটে উঠেছে। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার প্রশ্নে এসব চিত্র সত্যিকার অথের্ই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে চলেছে। সাম্প্রতিক অতীতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীসহ দেশব্যাপী শিক্ষাথীের্দর আন্দোলন ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকদিন আগে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করে। এই আইনের খসড়া অনুমোদন মূলত চালকদের অনিয়ম ও এর শাস্তির বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই করা হয়েছে। গণপরিবহন ব্যবস্থার চ‚ড়ান্ত নৈরাজ্যের ফলে জনমনে যে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছিল এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ওই আন্দোলনে। কিন্তু এর পরও কোনো ব্যবস্থাই যে কাজে লাগছে না, সড়ক-মহাসড়কে যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, শনিবার নাটোরের লালপুরসহ গত কয়েকদিনের সড়ক দুঘর্টনার চিত্র থেকেই তা স্পষ্ট হতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গণপরিবহন ব্যবস্থার নৈরাজ্যকর চিত্র একের পর এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করলেও এর প্রতিকার চিত্র এখনো বিবণর্। দুঘর্টনামুক্ত নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের যে আন্তরিক অঙ্গীকার, স্বল্প ও দীঘের্ময়াদি পরিকল্পনা এবং সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তাগিদ থাকার যে প্রয়োজন তা নেই বিধায়ই সড়ক দুঘর্টনা যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে দঁাড়িয়েছে। দীঘর্কাল ধরে অনুভ‚ত হচ্ছিল সড়ক পরিবহন আইনটি হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয়তা। এই আইন দ্রæত পাস করার পাশাপাশি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের কাযর্কর পদক্ষেপ নিতে হবে। সারা দেশে যে হারে দুঘর্টনা বেড়েছে, তা থেকে এটা স্পষ্ট হতে পারে যে প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনা উপেক্ষিত হচ্ছে। চলতি বছরের জুন মাসে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যে নিদের্শনা দিয়েছিলেন তার একটি ছিল এই যে দূরপাল্লার বাসযাত্রায় বিকল্প চালক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে পঁাচ ঘণ্টা পর পর চালক পরিবতর্ন করতে হবে। আরেকটি নিদের্শনা ছিল চালকদের জন্য মহাসড়কের পাশে বিশ্রামাগার রাখতে হবে। বাসে বিকল্প চালক থাকলে এবং পথে বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকলে এ ধরনের দুঘর্টনা অনেকাংশে কমে যাবে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আমরা মনে করি, গত কয়েক দিনে সড়কপথে যে প্রাণহানির ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করা দরকার। এসব যানবাহনের কি ফিটনেস সনদ ছিল? বাসের চালকরা কি যথাযথভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তরও জানা দরকার। এতে দুঘর্টনার মূল কারণ সম্পকের্ অন্তত অবগত হওয়া যাবে। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয়ের সচিবকে সভাপতি ও মহাপরিচালককে সদস্যসচিব করে গঠিত কমিটি মহাসড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি পযের্বক্ষণ করার তাগিদ রয়েছে। ট্রাফিকব্যবস্থার উন্নয়ন ও নিরাপত্তার বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থার সুপারিশ কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। কাজটি অত্যন্ত জরুরি। এতে অন্তত ত্রæটিগুলো দৃষ্টিগোচর হবে এবং সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে পারবেন। আমরা প্রত্যাশা করব, পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার স্বাথের্ কারিগরি অবকাঠামো থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা পযর্ন্ত সামগ্রিক পরিকল্পনা নিধার্রণের জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে আরও পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমরা মনে করি, সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সড়ক-মহাসড়ক এভাবে মৃত্যুফঁাদ হয়ে থাকতে পারে না; থাকতে দেয়াও সমীচীন নয়।