জয় বাংলা জাতীয় স্স্নোগান উচ্চ আদালতের রায় দ্রম্নত বাস্তবায়ন হোক

প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জয় বাংলা একটি গণজাগরণমূলক উদ্দীপনাময় স্স্নোগান। এই স্স্নোগানের মধ্যে নিহিত রয়েছে বাঙালির নিজস্ব সত্তা, দেশপ্রেম, আত্মপ্রতিষ্ঠা, স্বাধিকার চেতনা ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। এটি মুক্তিযুদ্ধের বহুল চর্চিত জনপ্রিয় স্স্নোগান। এটি কোনো দলীয় স্স্নোগান নয়। বাঙালির স্স্নোগান, সর্বসাধারণের স্স্নোগান। যে স্স্নোগান কেবল একাত্তরেই নয়, আজো বাঙালিকে উদ্দীপিত ও জাগ্রত করে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। বাঙালি চেতনায় নতুন মাত্রা যোগ করে। আশার কথা, জয় বাংলাকে জাতীয় স্স্নোগান হিসেবে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। জাতীয় দিবস, সরকারি অনুষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চারণের ওপর জোর দিয়ে 'জয় বাংলা' স্স্নোগানকে তিন মাসের মধ্যে জাতীয় স্স্নোগান হিসেবে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদেশে আদালত বলেছেন, আমরা ঘোষণা করছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্স্নোগান হবে। সব জাতীয় দিবসগুলোতে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীরা এবং রাষ্ট্রীয় সব কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে যেন জয়বাংলা স্স্নোগান উচ্চারণ করেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পর ছাত্র-শিক্ষকরা যেন জয় বাংলা স্স্নোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। রায় বাস্তবায়নের অগ্রগতির প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। উলেস্নখ্য, 'জয় বাংলা'কে কেন 'জাতীয় স্স্নোগান ও মূলমন্ত্র' হিসেবে ঘোষণার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা চেয়ে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর রুল জারি করেছিল একই বেঞ্চ। এটা সত্য, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের ওপরে প্রথম আঘাত হানা হয় ১৯৪৮-এ যখন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ হলো। এর ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু হয় যার পরিণতিতে ভাষা শহিদদের জীবন দিতে হলো। ১৯৫৬ সালে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র স্বীকার করে নিতে বাধ্য হলো। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল নামেমাত্র স্বীকার। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানি আমলে কখনই পূর্ণ মর্যাদা দেয়া হয়নি। সব সময় দেখা হতো উপেক্ষার চোখে। কেবল ভাষার প্রশ্নেই নয়, পাকিস্তানের জন্মের শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে বশীভূত করা হয়। যদিও পূর্ব পাকিস্তান পাট রপ্তানির মাধ্যমে সমগ্র পাকিস্তানের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত, পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে তার অধিকাংশই বিনিয়োগ করা হতো। পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৫০-১৯৭০ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সামগ্রিক বাজেটের শতকরা ২৮.৭ ভাগ ব্যয় করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ অনুভব করেছিল যে, তাদের পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এই বৈষম্য দূর করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে স্বায়ত্তশাসনের জন্য ছয় দফার একটি পরিকল্পনা রচনা করেন। ছয় দফা পরবর্তীকালে এক দফায় পরিণত হয়। দেশ স্বাধীনের জন্য বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেও তিনি বলেছেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি আরো রক্ত দেব। এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশালস্নাহ, জয় বাংলা। ভাষণ শেষে তিনি জয় বাংলা বলেছিলেন। সেই জয় বাংলাকে বুকে ধারণ করে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। একাত্তরের ৯ মাস বাংলার আকাশে বাতাসে মাঠে ময়দানে সর্বত্র ধ্বনিত হতো জয় বাংলা। বিশেষ করে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিকামী বাঙালি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করার পর এই স্স্নোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সারাদেশ। সবার মুখে একই উচ্চারণ জয় বাংলা। উচ্চ আদালত জয় বাংলাকে জাতীয় স্স্নোগান হিসেবে কার্যকর করার যে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা মনে করি, এটা দ্রম্নত বাস্তবায়ন হোক। বাঙালি ফিরে যাক তার মূল চেতনায় আবেগ ও উদ্দীপনায়। জয় বাংলা।