সড়ক নিরাপদ হবে কবে?

এবার শিক্ষিকার হাত বিচ্ছিন্ন

প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সড়কে মৃতু্য বাড়ছেই। ঘটে চলেছে একের পর এক দুর্ঘটনা। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের এবং ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি আবারো মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, গত মঙ্গলবার গোপালগঞ্জে ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষা সফরের বাস দুর্ঘটনায় এক শিক্ষিকার বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তথ্য মতে, শিক্ষা সফরের বাসটি সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা বলতে চাই, যখন সড়ক পথে দুর্ঘটনার ভয়ানক চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে- তখন এই পরিস্থিতি কতটা উৎকণ্ঠার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বলা দরকার, প্রতিনিয়ত সড়কে কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। মৃতু্যর বিভীষিকা এমন, যেন সড়ক পথ একটা মৃতু্যর ফাঁদ! এবারের ঘটনাটিসহ সড়ক পথের দুর্ঘটনা এবং সামগ্রিক বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার দুর্ঘটনার কারণগুলো আমলে নেওয়া এবং সেই মোতাবেক কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। ভুলে যাওয়া যাবে না, নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা ও বেপরোয়া গতির কাছে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন, কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করছে, গণপরিবহনে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং রেষারেষির কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। ফলে সড়ককে নিরাপদ করতে হলে সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করার বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত আমলে নেওয়া দরকার, রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনায় গড়ে ওঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। আর বাস্তবায়ন শুরু হয় সংসদে পাস হওয়ার প্রায় এক বছর পর গত ১ নভেম্বর। কিন্তু এ আইন প্রয়োগের শুরুতেই পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখেই আইনের প্রয়োগ অনেকটাই থমকে গেছে- এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। আর এ শিথিলতার কারণে সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে বলেও জানা যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যখন সড়কে চালকরা বেপরোয়াভাবে চালাচ্ছেন যানবাহন, কখনো মুখোমুখি সংঘর্ষ, কখনো গাছের সঙ্গে ধাক্কা, সঙ্গে সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ- তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির জরিপে জানা যায়, চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ১১৮ জন। আর ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৮৫৫ জন, ২০১৮ সালে ছিল ৭ হাজার ২২১ জন, ২০১৭ সালে ছিল ৭ হাজার ৩৯৭ জন আর ২০১৬ সালে ছিল ৬ হাজার ৫৫ জন। এতে দেখা যায়, বিগত সময়ের তুলনায় সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর সংখ্যা বাড়ছে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি হচ্ছে ক্রমাগত। অথচ সড়ক যদি নিরাপদ না হয় তবে যোগাযোগ সহজ হলেও তার সুফল অনিশ্চিতই থেকে যাবে- যা কাম্য নয়। সঙ্গত কারণেই সড়ক পথের দুর্ঘটনাগুলো আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনা সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সড়ক পথের নিরাপত্তা এবং দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি প্রত্যাশিত।