পাঠক মত

খাল রক্ষায় নান্দনিক শহরের ছোঁয়া

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো শহর। ঢাকা শহরটা মূলত উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত, আর এর পূর্ব-পশ্চিমে জলাশয়ের সংখ্যা বেশি। শহরের চারদিক মূলত নদীবেষ্টিত। শহরের মধ্যে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আঁকাবাঁকা বিভিন্ন খাল-বিল, ঝিল। প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ এ ধরনের শহর পৃথিবীতে বিরল। চারপাশে নদী আর ভিতরে ছোট-বড় খালের সমন্বয়ে ঢাকাকে ব-দ্বীপ শহর বললেও অতু্যক্তি হবে না। আগে বৃষ্টি হলে পানি বিভিন্ন খাল দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে পাশের নদীতে পড়ত। এ ছাড়া পানির সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যেত শহর। কিন্তু খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ার ফলে এসব বিষয় এখন যেন ভাবাই যায় না! ঢাকা জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ঢাকায় খালের সংখ্যা প্রায় ৫৬টি। কাগজে-কলমে ৫৬টি খালের উলেস্নখ থাকলেও এর অর্ধেকের বেশি খাল দখল হয়ে গেছে। ঢাকা ওয়াসার তথ্য মতে, ঢাকায় এখন সচল খালের সংখ্যা প্রায় ২৩টি। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর প্রভাবশালীদের দখলে হারিয়ে গেছে ঢাকার অধিকাংশ খাল। প্রভাবশালী থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্যক্তি পর্যন্ত যে যেভাবে পেরেছে বিভিন্ন খাল নামে-বেনামে দখল করেছে! অবৈধ দখলের কারণে এসব খালের সঙ্গে আশপাশের নদ-নদীগুলোর সংযোগ প্রায় বিছিন্ন হয়ে গেছে! দখল হয়ে যাওয়া এসব খালের মধ্যে রয়েছে- হাজারীবাগ খাল, কাঁটাসুর খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, কল্যাণপুর খাল, আব্দুলস্নাহপুর খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, খিলগাঁও-বাসাবো খাল, সেগুনবাগিচা খাল, গোবিন্দপুর খাল, রামপুরা খাল, বোয়ালিয়া খাল, ডুমনি খাল, সুতিভোলা খাল, শাহাজাদপুর খাল, শাহাজাহানপুর খাল, মান্ডা খাল, জিরানী খাল, কসাইবাড়ি খাল, মেরাদিয়া-গজারিয়া খাল, দিয়াবাড়ি খাল, রায়েরবাজার খাল, ধোলাই খাল, কুতুবখালী খাল ইত্যাদি। ঐতিহাসিকদের মতে, ঢাকার এসব খাল দিয়ে একসময় বড় বড় নৌকা চলাচল করত। আর এখন খালগুলো ভরে গেছে পলিথিন, পস্নাস্টিক আর বর্জ্য দিয়ে। আবার উন্নয়নের নামে রাজধানীর খালগুলোকে সরু নালায় পরিণত করা হয়েছে! যে কয়টি খাল সচল আছে এর বেশির ভাগের সঙ্গে আবার নদীর সংযোগ কাটা পড়েছে। খালগুলোতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নেই। ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা সমাধানে খালগুলো দখলের হাত থেকে উদ্ধারের কোনো বিকল্প নেই। দেখা যায়, কালেভদ্রে রাজধানীর বেদখল হওয়া খাল উদ্ধারে মাঠে নামে প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একদিকে উচ্ছেদ অভিযান চলে আর অন্যদিকে আবার খাল দখলের মহোৎসব চলতে থাকে! বেদখল হওয়া খাল উদ্ধারে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। মূলত এখানে প্রশাসন ও সরকারের সদিচ্ছার অভাব লক্ষ্য করা যায়! এক একটি খাল যেন মশার কারখানা! দখল-দূষণে জর্জরিত খালগুলো আশপাশের এলাকাগুলোয় বিভিন্ন ধরনের মৌসুমভিত্তিক রোগ বিস্তারে সহায়তা করছে! খালগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হলে মশার অত্যাচার থেকেও নগরবাসী রক্ষা পাবে। এককথায়, ঢাকা শহরের উদ্ধারকৃত খালগুলো হয়ে উঠতে পারে সৌন্দর্য ও বিনোদনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। বিশ্বের অন্যান্য দেশ তাদের রাজধানী শহরের ছোট ছোট জলাধারগুলোকে খুব সুন্দরভাবে কাজে লাগিয়েছে। দখলকৃত খাল উদ্ধার করার সঙ্গে সঙ্গেই তা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। তারপর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দু'পাশ দিয়ে নার্সারি গড়ে তোলা বা ওয়াকওয়ে (হাঁটাচলার পথ) নির্মাণ করলে ফের দখলের সুযোগ থাকবে না। এভাবে উদ্ধারকৃত খালগুলো হয়ে উঠতে পারে সৌন্দর্যের এক একটি নতুন নতুন কেন্দ্র। উদ্ধারকৃত প্রত্যেকটি খালের দুই ধারে ঘাস ও গাছ লাগানোর মাধ্যমে চারপাশ সবুজায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। মোটকথা খালের চারপাশ যাতে দৃষ্টিনন্দন রূপ লাভ করে সে ব্যবস্থা করতে হবে। দর্শনার্থীদের জন্য খালের ধারে বসার ব্যবস্তা করার পাশাপাশি চারপাশের পরিবেশ আকর্ষণীয় করতে হবে। পুরো ব্যবস্থাটি একটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ঢাকাবাসী এক নান্দনিক শহরের ছোঁয়া পাবে। এ ছাড়া ইট-কাঠের খাঁচায় বন্দি নগরবাসী এক নির্মল ও দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্রের সন্ধান পাবে। বদলে যাবে ঢাকা শহরের পরিবেশ। দরকার শুধু সদিচ্ছা, আন্তরিকতা আর যথাযথ উদ্যোগ। এর ফলে ঢাকাবাসীর যেমন বিনোদনের চাহিদা মিটবে তেমনি খালগুলোর পানি প্রবাহের প্রাকৃতিক ব্যবস্থাও বজায় থাকবে। তাই ঢাকা শহরকে বাঁচাতে হলে খালগুলোকে আগে উদ্ধার করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এতে কিছুটা হলেও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে। অন্যথায় রাজধানী ঢাকার অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে! ঢাকার জলাধারগুলো রক্ষা পেলে ঢাকাও বাঁচবে, নগরবাসীও এর সুফল পাবে। এ ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সাধন সরকার সাবেক ছাত্র, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা