রূপনগরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সর্বনাশা আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর খালপাড়ের বস্তি। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বুধবার 'বারেকের বস্তিতে' ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুড়ে যায় সহস্রাধিক ঘর। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই বস্তির চারপাশে আকাশছোঁয়া ভবন। মাঝখানে হাজার প্রাণের বসবাস। শত অপ্রাপ্তির মধ্যেও এই নগরীতে হাজার প্রাণের তাদের টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন এই বস্তি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বস্তিতে মাঝেমধ্যেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। বস্তির অবৈধ গ্যাস-বিদু্যৎ সংযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। বলাই বাহুল্য, যে কোনো অগ্নিকান্ডের পর কর্তৃপক্ষও কারণ খুঁজে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন, কিন্তু কিছুই যেন হয় না। গণমাধ্যমের খবরে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বস্তির ঘরে থাকা অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে আগুন দ্রম্নত ছড়ায় ও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এর আগে পাশের চলন্তিকা বস্তিতে দুই বার এবং এবার এই বস্তিতে আগুন লাগার বিষয়টিকে 'উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র' বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। এই বস্তি সরকারি জায়গায়। ক্ষমতার জোরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এখানে ঘর উঠিয়ে মালিক হয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যও বিষয়টি স্বীকার করে ভুক্তভোগীদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি বলেছেন, বস্তিতে নেতাদের ২০টি-৪০টি করে ঘর আছে। এই নেতাদের লিস্ট করা হবে। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, বস্তিজুড়ে ছড়ানো-ছিটানো গ্যাস-বিদু্যতের লাইন। যে কোনো কারণে আগুন লাগলেও অবৈধ এসব গ্যাস লাইনের কারণেই আগুন দ্রম্নত ছড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা। এ ছাড়া প্রত্যেকটা ঘর একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো যে কারণে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ে। উলেস্নখ করা যেতে পারে, আমাদের দেশে অগ্নিকান্ডে প্রাণহানি এবং সম্পদহানির পরিমাণ নেহাতই কম নয়। আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনস থেকে নিমতলি হয়ে চুড়িহাট্টার ক্ষত এখনো কেউ ভুলে যাননি। এরপরও প্রতি বছর নানান বস্তিতে আগুন লেগে তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তবুও কেন সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না! অগ্নিকান্ড যে কোনো সময় ঘটতে পারে। সে জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, বছরের এ সময়টি অগ্নিকান্ডের জন্য অনুকূল সময়। তাই এ সময় অগ্নিকান্ডের বিষয়ে সবারই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বলা হয়ে থাকে, সাবধানের মার নেই। একটু সচেতনতা ও সাবধানতা আমাদের রক্ষা করতে পারে যে কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের খবরে আসে যে, সাধারণত বস্তি এলাকায় রান্নাঘরের চুলার আগুন ও বৈদু্যতিক শর্টসার্কিটের জন্য অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। বলাই বাহুল্য, রাজধানীতে জীবন-জীবিকার সুযোগ যেমন বেশি, তেমনি মানুষের বিড়ম্বনা ও বিপন্নতার অন্ত নেই। প্রান্তিক মানুষের আবাসনের অসহায়ত্ব ও অনিরাপত্তা এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হলেও বস্তিবাসীর বিকল্প নিরাপদ আবাসনের ক্ষেত্রে বড় কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ফলে উচ্ছেদে পথে বসা, অগ্নিকান্ডে জানমাল খোয়ানো যেন বস্তিবাসীর নিয়তি হয়েই দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, বস্তিবাসীর সার্বিক জীবনমানের উন্নয়নে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়া না হলে তাদের বিপন্নতার স্থায়ী কোনো সমাধান আদৌ হবে না। পাশাপাশি ক্ষমতার জোরে সরকারি জায়গা দখল করে নেবে প্রভাবশালী নেতা, সেটাও সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। স্থানীয় সংসদ সদস্য এদের তালিকা করে পদক্ষেপ নেয়ার যে আশ্বাস দিয়েছেন তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি বলতে চাই, অগ্নিকান্ডে সর্বস্ব হারানো মানুষের জন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করতে হবে। যাদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি। বস্তিবাসীরা প্রান্তিক আয়ের, এদের মাথাগোঁজার আশ্রয়েই থাকে সহায়-সম্বল সবকিছু। মিরপুরের বস্তিতে সহস্রাধিক পরিবার আশ্রয়হীন ও সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। এদের জন্য জরুরি আশ্রয় ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা সরকার ও সংশ্লিষ্টদের মানবিক দায়িত্ব বলেই আমরা মনে করি। পাশাপাশি অগ্নিকান্ডের পুনরাবৃত্তি রোধেও কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।