কিডনি রোগ মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চিকিৎসকের সংকট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব থেকে শুরু করে নানা ধরনের সংকটের বিষয় বিভিন্ন সময়েই পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। এছাড়া চিকিৎসা ব্যয়ের কারণেও অনেক পরিবারই অভাব-অনটনকে মোকাবিলা করে সুচিকিৎসা নিতে পারে না এমন অভিযোগও আছে। আর এমতাবস্থায় যখন জানা যাচ্ছে যে, দেশে অন্তত দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনো ধরনের কিডনি সমস্যায় ভুগছেন- তখন বিষয়টি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির প্রদাহ, মূত্র সংক্রমণ ও মূত্রনালির প্রতিবন্ধকতাজনিত কারণে বছরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এক পর্যায়ে যাদের সম্পূর্ণ কিডনি বিকল হয়ে যাচ্ছে, তখন ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন ছাড়া বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়া অপরিহার্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, সারা বিশ্বেই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কিডনি রোগী- আর দেশে কিডনি রোগ সংক্রান্ত যে তথ্য সামনে আসছে, তা এড়ানো যাবে না। উলেস্নখ্য, কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে কিডনি হেলথ ফর এভরি ওয়ান এভরি হয়ার, ফর্ম প্রিভেনশন টু ডিটেকশন অ্যান্ড অ্যাকুয়েটেবল অ্যাকসেস টু কেয়ার অর্থাৎ 'সুস্থ কিডনি, সর্বত্র সবার জন্য' প্রতিপাদ্য ধারণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হলো বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২০। বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন ও কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির (ক্যাম্পস) সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বে বর্তমানে ৮৫০ মিলিয়ন বা ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন। এমনকি প্রতি বছর সারাবিশ্বে নতুন করে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন অর্থাৎ ২৪ লাখ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া ও ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষ আকস্মিক কিডনি রোগে মারা যাচ্ছেন। এ ছাড়া দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু রোগীদের ৫ থেকে ৭ ভাগ কিডনি রোগে আক্রান্ত বলেও জানা গেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। দেশের কিডনি রোগ সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনি চিকিৎসকরা যে পারমর্শগুলো দেন তার প্রচারণাও অপরিহার্য। উলেস্নখ্য, কিডনি রোগ মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেছেন, কিডনি সুস্থ রাখতে ও রোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রত্যেক মানুষকে সুষম খাদ্য গ্রহণ ও ধূমপান পরিহার করা জরুরি। খাদ্যে ভেজাল দূর করতে পারলেও কিডনি রোগ অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি আক্রান্তদের সেবা দিতে দেশের সব জায়গায় এ রোগের চিকিৎসা সহজলভ্য করতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা দরকার। এ ছাড়া রোগটির চিকিৎসা দেশের আট বিভাগে ৮টি কিডনি হাসপাতাল নির্মাণের যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে দ্রম্নততার ভিত্তিতে তা বাস্তবায়ন জরুরি বলেও তিনি মনে করেন। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সারা বিশ্বে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কিডনি রোগী এবং দেশে অন্তত দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনো ধরনের কিডনি সমস্যায় ভুগছেন- এই বিষয়টিকে আমলে নিতে হবে এবং সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে দ্রম্নত। মনে রাখতে হবে যে, যেহেতু কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল, এমনটিও এর আগে আলোচনায় এসেছে, তাই এই বিষয়টিও সরকার সংশ্লিষ্টদের ভাবার বিকল্প নেই। কিডনি রোগসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরো এগিয়ে নিতে উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।