শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাভাইরাসে রপ্তানি আদেশ স্থগিত ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

নতুনধারা
  ১৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার আর মৃতু্য ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। করোনা পরিস্থিতি এতটাই আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে যে, বিশ্বনেতারা ঘরে বসে বিশ্ব চালাচ্ছেন। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অনেক দেশের সরকারপ্রধানরা তাদের সভা সমাবেশ সীমিত করেছেন। একই সঙ্গে উদ্বেগের তথ্য হলো, করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে আমদানি কমে গেলেও এবার রপ্তানি কমতে শুরু করেছে। ফলে সমস্যা দ্বিগুণ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার বা ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এটি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ১ শতাংশের সমান। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপের অনেক দেশে মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় বিক্রি কমে গেছে। অনেক শহরে গার্মেন্টস পণ্যের স্টোর সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্রয়াদেশ দেওয়া বেশকিছু চালান আপাতত না পাঠানোর অনুরোধ করেছেন সেখানকার ক্রেতারা। কেউ কেউ পুরো ক্রয়াদেশের সব পণ্য এখনই না পাঠানো কিংবা পোশাক বানানোর প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধরনের তারল্য সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে স্থানীয় রাজস্ব আয়ে যে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে তা মোকাবিলায় এখনই পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরিহার্য।

শুধু ইউরোপ নয়- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকেও একই তথ্য জানিয়েছেন ক্রেতারা। বলাই বাহুল্য, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ইউরোপের দেশগুলো ধীরে ধীরে আরও সতর্ক হয়ে যাবে। ফলে সেখানে বিক্রি আরও কমতে থাকবে। ইতোমধ্যে ইউরোপের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশ ইতালি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিশ্ব থেকে। পুরো দেশই বলা চলে কোয়ারেন্টাইনে। ধীরে ধীরে একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে অন্য দেশগুলোতেও। যেহেতু বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই যায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে। তাই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশের পোশাক খাত অন্যতম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বললেও অতু্যক্তি হয় না। আমরা মনে করি, বিশ্ব পরিস্থিতির বাস্তবতা বিবেচনায় যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।

ফেব্রম্নয়ারিতে মার্কিন এক অর্থনীতিবিদ জানিয়েছিলেন, বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এমনিতেই মন্দার মধ্যে রয়েছে। এখন করোনাভাইরাস যদি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তবে বিশ্ব অর্থনীতি আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে। অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব হবে ভয়াবহ রকমের নেতিবাচক। ইতোমধ্যে পণ্য রপ্তানি-আমদানিসহ, পর্যটনশিল্প, টু্যর অপারেটর, হোটেল শিল্প ও বিমান সংস্থায় এই লোকসান হবে সবচেয়ে বেশি। পণ্য আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হলে, পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভ্রমণ হ্রাস হলে তা ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন যে নভেল করোনাভাইরাসটি পর্যটনশিল্পে সবচেয়ে বেশি লোকসান ঘটাবে। বাস্তবতাও তাই এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এ থেকে উত্তরণের উপায়ও কারও জানা নেই। তবে সতর্ক ও সচেতনতার মধ্যদিয়ে এ ভাইরাসের বিস্তার হ্রাসের অপেক্ষা করছেন বিশ্ববাসী।

সর্বোপরি বলতে চাই, সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি যে এখন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে তা বলাই বাহুল্য। এই ঝুঁকি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে এখন দেশের নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রথমদিকে আমদানি কমানো হয়েছে, আর এখন রপ্তানি স্থগিতের তথ্য সামনে আসছে। ফলে এমন দ্বিমুখী সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্থনীতির ঝুঁকি মোকাবিলায় সবাই তৎপর হবেন এমনটি প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<92588 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1