স্বাধীনতা মানে সবার অধিকার নিশ্চিত করা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল দরিদ্রতা দূর করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। শিক্ষা জনমানুষের অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সবাইকে যথার্থ শিক্ষাপ্রদান করা- সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনা। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা সবার জন্য বিশেষ শ্রেণির জন্য নয় এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করা। আমরা কি তা পেরেছি?

প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০

আবুল কাশেম চৌধুরী
ওরা কি মানুষ? প্রধানমন্ত্রী। তিনি তার বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেছেন 'ধর্ষকেরা' কি মানুষ তাদের কি মা বোন নেই? তারা কী করে এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে? দুর্নীতিবাজরাও দেশ ও জাতির শত্রম্ন, সরকারের দুর্নীতির বিরোধী অভিযান চলবে। সরকারপ্রধান বলেছেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য সরকারপ্রধানের কথা কেউ আমলে নিচ্ছে না যার যেমন খুশি তেমন চলছে, বঙ্গবন্ধুর কন্যার কথা স্বযত্নে একপেশে রেখে প্রশাসনের কর্তারা ও দলীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করে চলেছে। দুর্নীতি কমেনি/ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। অনিয়ম- নিয়মে পরিণত হয়েছে। মিথ্যাবাদী ও প্রতারকে দেশ চেয়ে গেছে, ঠকবাজরা সর্বত্র বিরাজমান। দেশের কোথাও শান্তি নেই- নেই স্বস্তি। যে জাতি একসাগর রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে সে জাতির এমন কেন হবে? ন্যায়-বিচার নিভৃতে কাঁদে! দুর্নীতিবাজ ও ধর্ষক একই সঙ্গে এগিয়ে চলছে আমার মনে হয় গোড়ায় গলদ রয়েছে, শিক্ষায় যথার্থ ফল হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষিত জনগোঠীর সিংহভাগ দেশপ্রেমিক নয়। দেশপ্রেমিক সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া দেশ ও জাতির উন্নয়ন হয় না। দেশপ্রেমিকরা অপরাধ করে না- দুর্নীতি করে না। দুর্নীতির কাছে মেধাবীরা মাথা নত করেছে। ধর্ষণের কথা প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে চাই। ধর্ষণ যদি ছেলে ও মেয়ের সম্মতিতে হয়ে থাকলে ধর্ষণ বলা হবে না, বলতে হবে যৌনসঙ্গম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার উভয়ের সম্মতিতে দুস্কর্মটি সংগঠিত হয়ে থাকে। জোরপূর্বক কুকাম সংগঠিত করা হলে বলতে হবে ধর্ষণ। তবে কোনো ধর্ম ও সমাজ ওই কুকর্মকে স্বীকৃতি দেয় না, ইসলাম ধর্ম কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে এবং কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আইনের শাসনের অনুপস্থিতে ধর্ষণ ও দুর্নীতি ঘটে থাকে- আইনের শাসন ও ন্যায়-বিচার নিশ্চিত থাকলে এমনটি ঘটত না। বিচারের দীর্ঘসূত্রতাও একটি কারণ। ন্যায়-বিচার নিশ্চিতকরণে সহযোগিতা করতে পারে দেশের আইনজীবীরা। বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে অতি নগণ্যসংখ্যক আইনজীবী। শিক্ষিত মানুষ বলে দাবিদার তারাও একই পথের পথিক। যতবড় শিক্ষিত ততবড় ফন্দিবাজ ও আইন অমান্যকারী। জনমানুষের স্বার্থ শিক্ষিত মানুষের কাছে বড় নয়, তাদের নিজেদের স্বার্থই বড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সিংহভাগ 'ভিসিরা' মেনে নেয়নি ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হতে পারছে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের কথা কে না জানে? প্রায় সরকারি কলেজে শিক্ষক মহোদয়রা ক্লাস নেয় না মাস শেষে বেতন নিতে ভুল করেন না। সারা দেশে জুয়া খেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন দেশের উচ্চ আদালত দেশের নাম করা শিক্ষিত ও বিত্তবানরা উচ্চ আদালতের রায় রহিত করে জুয়া পরিচালনার জন্য আবেদন জানিয়েছে আদালতে- শিক্ষিত সমাজের মান কত উঁচু? জুয়া খেলা চালিয়ে যেতে শিক্ষিত সমাজের আগ্রহের কমতি নেই। জুয়া খেলাকে আইনসম্মত করতে চায় শিক্ষিত সমাজ! দুর্নীতি করতে হবে জুয়া খেলাও চালাতে হবে তা না হলে উন্নত জাতি হব কি করে? সুশিক্ষার অভাব বলে এই অবস্থা। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর ছুঁই ছুঁই করছে, আজ পর্যন্ত একুশের মূল 'ডিজাইন' অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার গড়ে তুলতে পারেনি। শহিদ মিনারের সংলগ্ন উন্নত মানের পাঠাগার থাকবে এবং থাকবে সেমিনার কক্ষ। পরিষ্কার-পরিছন্ন থাকবে শহিদ মিনার, কিন্তু তা না হয়ে শহিদ মিনার প্রেম নিকেতনে পরিণত হয়েছে। শহিদ মিনারকে যথাযথ মর্যাদা প্রদানে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। একুশের প্রকৃত ত্যাগীদের যথাযথ সম্মান করতে পারিনি। যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্যস্থানে বসাতে পারি না। একুশের অনেক শহিদ আছেন যারা অর্থেকষ্টে জীবনযাপন করছেন। যারা লবিং করতে পারে তারা একুশের ও স্বাধীনতার পদক পায়। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারি না। প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও ত্যাগীরা 'পদক' পাওয়া থেকে অনেক দূরে থাকে। একুশের শিক্ষা স্বাধীনতার শিক্ষা মাথা না করা- মাথা নত করা জাতি তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। শিক্ষিত মানুষের বড় অংশ অসৎ কর্মে লিপ্ত। প্রতারণা ও ঠকবাজি দুর্নীতিবাজ এবং ধর্ষকের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা লোপ পেতে চলেছে। ৩০ লাখ শহিদ জাতিকে অভিশাপ দিয়ে চলেছে তাদের ত্যাগের মূল্যায়িত হয় না বলে। সাধারণ ত্যাগী কোনো মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার পদক পায়নি গরিব/অশিক্ষিত বলে কিন্তু তাদের ত্যাগ অপরিসীম। ক্ষমতাসীনরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা কী তা আমরা জানি না এবং মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার কি দেশবাসী যেমন জানে না তেমন শিক্ষার্থীদের জানানো হয় না। এখানেও হঠকারিতার আশ্রয় গ্রহণ করে রাজনৈতিক নেতারা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মূল-লক্ষ্য ছিল দরিদ্রতা দূর করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। শিক্ষা জনমানুষের অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সবাইকে যথার্থ শিক্ষাপ্রদান করা- সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনা। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা সবার জন্য বিশেষ শ্রেণির জন্য নয় এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করা। আমরা কি তা পেরেছি? অশিক্ষতদের অবহেলা করার সুযোগ থাকে না স্বাধীন দেশে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমিয়ে আনা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার। গরিবের সংখ্যা কমিয়ে আনা কিন্তু গরিবের সংখ্যা কমেনি বরং বেড়েছে এবং শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বাটপার, প্রতারক, দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাঙালি জনগোষ্ঠী নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগালে জাতি অনেকদূর এগিয়ে যেত। দুর্ভাগ্যবসত বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে নীতিবাচক পথে কাজে লাগায়। মহান আলস্নাহ বলেন, আমি মানুষকে আমার প্রতিনিধি করে সৃষ্টি করেছি তাদের জ্ঞানকে ইতিবাচক পথে কাজে লাগাতে হবে, না হলে মানবজাতি অভিশপ্ত হবে। প্রতিদিন টিভি খুললে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য শোনা যায়। তিনি বলেছিলেন আমি চাই-বাংলার মানুষ পেটভরে খাবে, হাসবে, খেলবে। শিক্ষা গ্রহণ করবে। সুন্দরভাবে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচবে। তিনি আরও বলেছেন, যে জাতি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় ও আইন মানে না সে জাতি উন্নতি করতে পারে না, বঙ্গবন্ধু বলেন কার টাকায় সাহেব, এমপি সাহেব, মন্ত্রী সাহেব, অফিসার সাহেব, চেয়াম্যান সাহেব, মেম্বার সাহেব, হয়েছেন? সাধারণ গরিব মানুষের টাকা দিয়ে সাহেব হয়েছেন। সাহেবরা ওই সাধারণ মানুষকে সম্মান করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার কৃষক শ্রমিক দুর্নীতি করে না দুর্নীতি করে শিক্ষিতসমাজ গরিবের ঘামঝরা টাকা দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে তারাই দুর্নীতি করে। আমি বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আনি সব চাটার দল খেয়ে ফেলে আমি যেদিকে তাকাই সেদিকে দেখি আমার লোক। সেদিন যদি বঙ্গবন্ধু ওই চাটার দলকে বিচারের সম্মুখীন করে বিচার করতেন তা হলে ভালো ফল পাওয়া যেত। আইনের শাসনের পথ সুগম হতো। আমরা জানি প্রথম রাতে বিড়াল মারতে হয়- তা হয়নি। রাজনৈতিক নেতারা/শিক্ষিতরা ও বিত্তবানরা আইন মানে না, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের শিক্ষিত ও বিত্তবানরা আইন মানে না তারা সিংহভাগ অকৃতজ্ঞ। আইনের শাসন প্রায় রুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু দেশের শিক্ষিত মানুষের কাছে জানতে চেয়েছিলেন 'স্বাধীনতা কাকে বলে' তারা কিছু বলেননি পরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন স্ব+অধীনতা= স্বাধীনতা। ডাক্তাররা হবেন জনমানুষের সেবক- সেবাই তাদের জ্ঞান ও ধর্ম। বাংলাদেশের সিংহভাগ ডাক্তার দেশের জনগণকে সেবা দিতে ব্যর্থ। তাদের লক্ষ্য কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জন করা। ডাক্তার সাহেবরা টাকা কামাতে নানা অসৎ পথে ধাবিত হয়েছে ও হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে ডাক্তাররা নানা ধরনের খারাপ ব্যবহার করতে দ্বিধা বোধ করে না ওষুধ কোম্পানির কমিশনের লোভে। কাড়ি কাড়ি ওষুধ প্রেসক্রাইব করে। গ্যাসটিকের ওষুধ ৩ নামে ৩টি লিখতে তাদের বিবেক বাধা দেয় না। তাদের চায় ওষুধ কোম্পানির কমিশনের টাকা রোগীর সুস্থতা নয়। বিভিন্ন হাসপাতালের দুর্নীতির কথা কে জানে? আমাদের শিক্ষকরা কোনো অংশে কম জান না! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন আর অন্য শিক্ষক বলেন কেউ কারও থেকে কম নয়। তবে প্রাইমারি শিক্ষকদের অর্থের অভাব প্রকট। তারা যথার্থ বেতনভাতা পায় না অর্থের অভাবে শিক্ষার্থীদের মনোযোগসহকারে পাঠদান করতে পারেন না। গাইড বই কোচিং ব্যবস্থা তো আছেই যা শিক্ষার জন্য নাজুক অবস্থা সৃষ্টি করেছে। একশ্রেণির শিক্ষিত মানুষ শিক্ষাব্যবস্থায় পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে ফলে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষায় গলদ বলে সিংহভাগ মাস্টার্স করা শিক্ষিতরা শুদ্ধ করে চাকরির আবেদন পত্র লিখতে পারে না তাদের লেখনীতে অসংখ্য ভুল, লজ্জার বিষয়। ইতিহাসের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন তিনি 'একটি ইংরেজি পত্রিকায় কিছু দিন কাজ করেছিলেন' তার কাছে অনেকেই চাকরির জন্য গিয়েছিল তিনি চাকরিপ্রার্থীকে বাংলাকে 'ইংরেজি করতে এবং ইংরেজিকে বাংলা করতে বলেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা করতে পারেনি। প্রাথমিক শিক্ষায় জোর দিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা হবে শিক্ষার মূলভিত্তি। ধনী-গরিব সবাইকে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষালয়ে তাদের সন্তানকে ভর্তি করাতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে জাতি যথাযথ ফল পাচ্ছে না। মানসম্মত সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাইমারি শিক্ষকদের অবস্থা আরও করুন তারা যথার্থ শিক্ষাপ্রদানে সক্ষম নয় সিংহভাগ শিক্ষক দুর্বল তাদের সবল করার কোনো পথ সরকার গ্রহণ করছে না। তারা বেতনভাতা পান কম, সেবা দিতে হয় বেশি। ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান সহজ নয় আদর স্নেহ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পড়াতে হয় স্নেহ-মায়া ছাড়া পড়ানো সম্ভব নয়। তাদের বেতনভাতা দেয়া হয় অতি কম, ফলে শিক্ষিত যোগ্যতম ব্যক্তিরা প্রাথমিক শিক্ষকের পদে চাকরি করতে চায় না। কম বেতনে চাকরি করতে চাইবে কেন? যার নাই কোনো গতি সে হয় প্রাথমিক শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষকদের যোগ্যতম বেতনভাতা দিতে হবে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষায়- শিক্ষার ভিত মজবুত না হলে- শিক্ষার অবস্থা মজবুত হবে না। দুর্বল শিক্ষকের হাত ধরে সবল শিক্ষার্থী পাবে না জাতি। রাষ্ট্র ও সমাজ কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে না। শিক্ষার মাধ্যমে যথার্থ বিনিয়োগ না হলে শিক্ষায় যথাযথ ফল পাওয়া যাবে না। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ অতি স্বল্প প্রাথমিক শিক্ষা সবল না হলে দুর্বল জাতি গড়ে উঠবে- শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড হয় এই অবস্থা হবে কেন? প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন অনেক বেশি হওয়া দরকার কমপক্ষে ১০ম গ্রেডের নিচে নয় যদিও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জরুল ইসলাম এবং আবুল বরাকাত বলেন, ক্যাডার সাভিসের কর্তাদের চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ১ টাকা হলেও বেশি হতে হবে। প্রাইমারি শিক্ষকদের বেতনের টাকায় নিজেরা সংসার চালাতে পারে না সন্তানদের লেখাপড়া ও মেডিকেল খরচ দূরের কথা। এমনি অবস্থায় তারা কি করে যথার্থ শিক্ষা প্রদান করবে আমাদের সন্তানদের? প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনভাতা কথা আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত সরকারের। সুশাসনের অভাবে রাষ্ট্র ও সমাজ অন্ধকার চোরাগলিতে এগিয়ে চলেছে। যা কখনও কারও কাম্য ছিল না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এত রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতির মতো অন্যকোনো জাতি স্বাধীনতা কেনেনি। ত্রিশ লাখ তাজা জীবন দিয়ে কেনা স্বাধীনতা এমন হবে কেন? বিবেকহীন, চরিত্রহীন নষ্ট মানুষ বিজয়ী জাতির জন্য অভিশাপ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন গুলিস্তানের চাঁদাবাজ কাউন্সিলার নির্বাচিত হয় নষ্ট সমাজের চিত্র। পাপিয়া নামের এক মহিলার কথা সারা দেশে আলোচনায় স্থান পেয়েছে। সে একটি পাঁচতারা হোটেলে ৮৭ লাখ বিল দিয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। তার আরও অন্যান্য কুকর্মের কথা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করেছে। ওবায়দুল কাদের বলেছেন তার বিচার হবে কাদেরের সঙ্গে একমত হতে পারছি না জনগণ চায় পাপিয়াকে যারা- পাপিয়া বানিয়েছে তাদের মুখোশ খুলতে হবে ও বিচার করতে হবে। এবং কিছুদিন আগে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির কথা কে না জানে? পত্রিকার খবরে জানা গেছে সে সম্রাট ৫০ বড় কর্তার নাম বলেছে কাউকে ধরা হয়নি সম্রাটের ভাঙা বাড়ি থেকে নগদ কোটি কোটি টাকা পাওয়া গেছে এবং বিদেশি মুদ্রাসহ! এভাবে চললে শেখ হাসিনার সুনাম কোথায় যাবে? সরকারপ্রধান বারবার বলছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে কিন্তু চলছে না। রাঘব-বোয়ালরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চুনোপুঁটিরা মাঝেমধ্যে ধরা পড়ে লোক দেখানোর মতো। এই অবস্থা থেকে দেশবাসী মুক্তি চায় সুনীতি ও সুবিচার চায় সুশাসন চায়। দেশে আইনের শাসনের বড় অভাব গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে প্রচুর-যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ। গণপরিবহনের আইন আজও কার্যকর করা হয়নি। গণপরিবহনে সুশৃঙ্খল ফিরিয়ে আনার লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামালের দাম ঊর্ধ্বগতি, সরকার বলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে কথাটা সত্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর অনেক প্রতিশ্রম্নতি কার্যকর হয়নি+প্রতিশ্রম্নতির শেষ নেই, প্রধানমন্ত্রী বলেন কেউ গৃহহীন থাকবে না মুজিববর্ষে। সরকারি গৃহপ্রদানের পরিকল্পনা জনগণের কাছে দৃশ্যমান নয়। সরকারিভাবে গৃহপ্রদানের পরিকল্পনা সঠিকভাবে করা না হলে জননেত্রীর সুনাম নষ্ট হতে বাধ্য। বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসতেন তাদের জন্য কাজ করতেন। সাধারণ মানুষ যেন গ্রাম-গঞ্জে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাড়ি করতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত। সরকারি অনুদানের বাড়ি প্রদানে বিরত থাকা প্রয়োজন। অনুদান মানে ভিক্ষা- ভিক্ষা প্রদান করা উচিত নয়। ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন কথা। মুক্তিযোদ্ধাদের ১৪ হাজার অনুদানের বাড়ি প্রদানের কথা ২০১৪ সাল থেকে শুনে আসছি আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ২০১৪ সাল থেকে সম্মানী ভাতার বিপরীতে গৃহঋণ প্রদান করার আবেদন করে আসছে মুক্তিযোদ্ধারা ৭ বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহঋণ সরকার অনুমোদন করেনি। সম্মানী ভাতার বিপরীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সহজশর্তে গৃহঋণের মাধ্যমে নিজ বাস্তুভিটায় বাসস্থান তৈরি করার সুযোগ প্রদান করা প্রয়োজন। নকল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাতিল করার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা উচিত। নকল মুক্তিযোদ্ধারাও কি মানুষ? গেজেটভুক্ত অ-মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার হওয়া উচিত নয় কি? আবুল কাশেম চৌধুরী: কলাম লেখক