আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধু

প্রকাশ | ১৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য এক অবিস্মরণীয় দিন ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের আজকের দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একজন নেতা তার দেশের মানুষকে মর্যাদাপূর্ণ আত্মপরিচয়ের আলোকে কী অপরিসীম সাহসিকতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তার উজ্জ্বল উদাহরণ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের সর্বস্তরের মানুষ তথা আবালবৃদ্ধবণিতার ভালোবাসা, হৃদয় উজাড় করা শ্রদ্ধা ও সম্মানে তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন। সমগ্র দেশের মানুষ অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে, বিশ্বাসের কারণে তার ওপর অর্পণ করে পূর্ণ আস্থা, তাকে স্থান দেয় তাদের হৃদয়ে। আজ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনে আমরা তাকে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। স্মরণ করি তার কাজ, চেতনা ও আদর্শকে। তিনি বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছেন, এ দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, এটা আমাদের সৌভাগ্যের কথা। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে চারণের মতো সারা দেশ ঘুরে মানুষকে জাগিয়েছেন, পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সামরিক শাসকদের জেলে বছরের পর বছর বন্দি থেকেও অকুতোভয় বীরের মতো নিজ সঙ্কল্পে অটল থেকেছেন, মুক্তির মহামন্ত্রে জাতিকে জাগিয়েছেন এবং স্বাধীনতার পথ ধরে জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন স্বপ্ন পূরণের চূড়ান্ত লক্ষ্যে- এ কৃতিত্ব একান্তভাবে তারই। কারণ, তিনিই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রূপকার এবং প্রতিষ্ঠাতা। দেশের মানুষের স্বার্থের বিষয়ে তিনি সব সময় ছিলেন আপসহীন। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি সব সময় ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ। কখনো কোনো কিছুর বিনিময় বা প্রলোভনে বা ভয়ে বিন্দুমাত্র নতি স্বীকার করেননি। সত্তরের নির্বাচনে জাতির অবিসংবাদিত নেতারূপে তিনি অভিষিক্ত হন। গোটা জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেন। শুরু হয় এক অভূতপূর্ব আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন। দেশের মানুষকে তিনি মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন। এরই একপর্যায়ে আসে মহান একাত্তরের ৭ মার্চ। সেদিন ঢাকার ঐতিহাসিক জনসমুদ্রে তিনি যে ভাষণ দেন সেটাই হয়ে ওঠে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অতু্যজ্জ্বল মাইলফলক। তিনি ঘোষণা করেন 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। তিনিই তার নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতিকে পৌঁছে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতার স্বর্ণ তোরণে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার হত্যার বিচার করা যাবে না- এই লক্ষ্যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়াই শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম থেকে তার নাম বা তার কথা প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। এক কথায় মানুষের মন থেকে বঙ্গবন্ধুর কথা, তার স্মৃতি, তার অবদান মুছে ফেলার যাবতীয় অপচেষ্টা করা হয় সে সময়। কিন্তু ইতিহাস বিকৃত করা, বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা, তার ভূমিকা খাটো করে দেখানো ইত্যাদি চেষ্টা যে সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে সেটা সময়ের পরীক্ষায় প্রমাণিত। আজ সেই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ পালন করছে 'মুজিববর্ষ', এ ছাড়া বিশ্বের অনেক দেশে একযোগে পালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ। বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি থেকে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু করে। আজ মধ্যরাত থেকেই শুরু হয়েছে মুজিববর্ষ। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ নীতি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীরা তার রেখে যাওয়া দলের নেতৃত্বেই বর্তমান সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনা করছে জনগণের সমর্থনে। আমরা মনে করি, সরকারের সামনে প্রধান কাজটিই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়া। সর্বোপরি বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ সবার জন্যই এক শিক্ষণীয় বিষয়। তার অপরিসীম ত্যাগ ও তিতিক্ষার জন্য আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি যেমন আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, তেমনি দেশের জন্য জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। তাই বাঙালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে। কবির ভাষায়, 'যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।'