বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা স্পষ্ট

নতুনধারা
  ১৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

বিশ্বময় বিস্তার ঘটেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের। বর্তমানে এমন একটি দেশ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যেখানে করোনাভাইরাস আঘাত করেনি। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে মন্দার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে নভেল করোনাভাইরাসকে বিশ্বের জন্য মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধের উদ্যোগের কথাও জানিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বের বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকেও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। করোনাভাইরাস মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ধরনকেও পাল্টে দিতে শুরু করেছে। সংক্রমণের আতঙ্ক এখন বিশ্বজুড়ে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গোটা বিশ্বই এখন 'সবকিছু বাতিল করো'- এই নীতিতে চলতে চাইছে। আর এতে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব যে বড় ধরনের হতে যাচ্ছে, তাতে আর সন্দেহ রইল না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব শেষ পর্যন্ত কতটা, তা জানা যাবে আরও পরে। কেননা, প্রতিদিনই পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। চীনে এই ভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমলেও অন্য দেশগুলোতে ছড়াচ্ছে দ্রম্নতগতিতে। এখন পর্যন্ত ১১০টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। অনেকের আশঙ্কা ছিল, এবারের বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের হাত ধরেই আসবে। কিন্তু সব ধারণা উল্টে দিয়েছে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। করোনাভাইরাসই এখন বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার অন্যতম কারণ। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, খুচরা বিক্রেতা ও রাজনীতিবিদরা এখনো খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে ধারণা করছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাস্থ্যঝুঁকির চেয়েও করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক বিপদ সবচেয়ে বেশি। কেননা, এর কারণে যত মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে বেশি মানুষ দেউলিয়া হবে। চাকরি হারাবে বহুসংখ্যক মানুষ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব করার সময় এখনো আসেনি। কেননা, প্রতিদিনই পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। বস্নুমবার্গের বিশেষজ্ঞরা হিসাব করেছেন, করোনাভাইরাস যদি বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়ায়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হবে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এই অর্থ যুক্তরাজ্যের পুরো দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সমান। শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাস মহামারি আকারেই ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। করোনাভাইরাসের প্রভাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার, পর্যটন, রপ্তানি খাতসহ প্রায় সব খাতে পড়েছে। ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাচ্ছে পোশাক খাতের। বড় বড় উন্নয়ন মেগাপ্রকল্পের কাজে ভাটা পড়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) মার্চের প্রথম সপ্তাহে জানিয়েছে, ভাইরাস সংক্রমণে অর্থনীতি ঝুঁকিতে রয়েছে। বৈশ্বিক উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বৈশ্বিক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র তুলে ধরেছে, তাতে দেখা যায়, নিম্ন মাত্রার মহামারি হলেও অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে ২ লাখ ৩০ হাজার (২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার)।

স্মর্তব্য যে, ২০০৮ সালে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও বেশ একটা আত্মতৃপ্তির মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২০ সালের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনাভাইরাসের কারণে ইতোমধ্যে তৈরি পোশাক খাত প্রবাসী আয়ের খাতে প্রভাব পড়েছে। বলাই বাহুল্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে গেলে, ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি শ্লথ হয়ে পড়লে প্রভাব পড়বে রাজস্ব আদায়ে। ফলে করোনাভাইরাসে বিশ্বমন্দা প্রকট হলে এবার যে বাংলাদেশ বিপদমুক্ত থাকবে, এমনটি বলা যাবে না। এডিবি জানিয়েছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মহামারি অবস্থায় গেলে এক বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৯ লাখ কর্মসংস্থান কমে যেতে পারে। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ক্ষতি হতে পারে ৩০২ কোটি ডলার। এমন খারাপ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবা খাতে। এর পরিমাণ হতে পারে ১১৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। এ ছাড়া কৃষি খাতে ৬৩ কোটি ডলার, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও এ-সংক্রান্ত সেবা খাতে প্রায় ৫১ কোটি ডলার, উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে প্রায় ৪০ কোটি ডলার এবং পরিবহণ খাতে ক্ষতি হতে পারে সাড়ে ৩৩ কোটি ডলার।

সর্বোপরি বলতে চাই, এসব তথ্য সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থনীতির এই উৎকণ্ঠার মধ্যে করণীয় কী তা নির্ধারণ করতে হবে। প্রথম কাজটি হবে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমাতে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া। আমরা মনে করি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃতু্য যেমন ঠেকানো প্রয়োজন, তেমনি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যও যথাযথ পরিকল্পনা জরুরি। সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন এটাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<93084 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1