শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

দক্ষিণ এশিয়ায় বন্ধু কমছে ভারতের!

নতুনধারা
  ১৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই 'প্রতিবেশী প্রথম' নীতি ঘোষণা করে চমক লাগিয়েছিলেন। তার শপথ অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশীয় নেতাদের আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে তিনি আকস্মিক লাহোর সফর করেন। কিন্তু দফায় দফায় সন্ত্রাসী হামলায় সেই সৌহার্দ্যে ভাটা পড়েছে। ফলে ভারত সার্ককে অকার্যকর করে বিমসটেক ও চারদেশীয় আন্তঃসংযোগের দিকে নজর দেয়। বর্তমানে কাশ্মীর ইসু্যতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। অন্যদিকে এনআরসি ও সিএএ ইসু্যতে দূরত্ব বাড়ছে বাংলাদেশের সঙ্গে। নেপাল ঝুঁকে পড়েছে চীনের দিকে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ইসু্য সিএএ, এনআরসি বিল। নির্বাচনের আগে বিজেপি 'হিন্দু কার্ড' ব্যবহার করতে এই বিল এনেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিজেপির সভাপতি অমিত সাহা আসামের কথিত মুসলিম বাঙালিদের বাংলাদেশ থেকে আসা 'উইপোকা' বলে সম্বোধন করেছেন। এই আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে অমুসলিমরা নির্যাতিত হয় বলে পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এই বার্তাটি রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশ হওয়া সত্ত্বে বাংলাদেশ তার বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। বাংলাদেশি পরিচয়ের মধ্যে শুধু ধর্ম নয় বরং ভাষা আর সংস্কৃতিটাও রয়েছে। কিন্তু ভারতীয়রা বারবার বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে একই ক্যাটাগরিতে বিবেচনা করে আসছে। বাংলাদেশকে ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু বলা হলেও সে দেশে শুধু বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন শর্তের জালে আটকে রাখা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভারতের হাতে তুলে দেয়। ভারতের বহুল আকাঙ্ক্ষিত ট্রানজিট ও ট্রানশিফট চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির ফলে ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে কম খরচে ও কম সময়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের গাড়ি, ট্রেন ও জাহাজ পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টারে পৌঁছানো যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত তিস্তা চুক্তি সই করেনি ভারত। ঢাকা-আগরতলা, ঢাকা-শিলং বাস সার্ভিস ও ঢাকা-কলকাতা ট্রেন চালু হলেও দুই দেশের মধ্যে চরম বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ভারতের অন্য কোনো সীমান্তে হত্যাকান্ড না ঘটলেও বাংলাদেশ সীমান্তে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করে বিএসএফ প্রায় গুলি ছুটছে বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে। চলতি বছরের প্রথম মাসে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ১৫ জন বাংলাদেশি। এসব বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যেমন চরম ভারত বিদ্বেষ তৈরি করছে তেমনি সরকারের মধ্যে চরম অস্বস্তি তৈরি করেছে। ফলে 'নিরঙ্কুশ বন্ধু' বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বে শীতলতা চলছে।

নিকটতম প্রতিবেশ নেপালের সঙ্গেও ভারত কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। রাজতন্ত্রের বিলুপের পর গণতান্ত্রিক ধারায় চীনপন্থি কমিউনিস্টের উত্থান ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় ভারত নেপালে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে। পাল্টা হিসাবে নেপাল সরকারও চীনের সঙ্গে ট্রেড অ্যান্ড ট্রানজিট চুক্তি করে ভারতের ওপর মনোপলি নির্ভরশীলতা থেকে সরে আসে। স্বাক্ষরিত ট্রানজিট ও ট্রান্সপোর্ট প্রটোকল চুক্তির আওতায় চীনের চারটি সমুদ্র বন্দর ও তিনটি স্থলবন্দর ব্যবহারের সুবিধা পেতে যাচ্ছে নেপাল। ফলে ল্যান্ডলকট নেপালের কলকাতা বন্দর নির্ভরশীলতার অবসান ঘটল। এ ছাড়া নেপালের পূর্বাঞ্চলে ৭৫৬ মেগাওয়াট জলবিদু্যৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য চীনের পাওয়ার কন্সট্রাকশন করপোরেশনের সঙ্গে নেপালের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীন ও নেপাল সংযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উচ্চাভিলাষী কাঠমান্ডু- কেরুং, কাঠমান্ডু-পোখরা ও পোখরা-লুম্বিনি রেল সংযোগের একমত হয়েছে। ফলে বাস্তবতা হচ্ছে ৭০ বছরের অধিক সময় ধরে কাঠমুন্ডুর রাজনীতির কলকাঠি নাড়া নয়াদিলিস্নর প্রভাব কমতে শুরু করেছে।

সুতরাং নিজ দেশে কাশ্মীর ও এনআরসি ও সিএএ বিল নিয়ে সংকটের মুখে থাকা মোদি সরকার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ ভারত। ভারত বৈশ্বিক পরাশক্তি হয়ে উঠতে চায়। এজন্য মোদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ তৈরি করতে হবে। বৈশ্বিক শক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেকাংশে মিত্র প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল।

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন

শিক্ষার্থী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<93086 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1