প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে

সংকট নেই, তবু বাড়ছে পণ্যের দাম

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে ইতিমধ্যে অসৎ ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নিত্যপণ্যের সংকট না থাকলেও 'কৃত্রিম সংকট' সৃষ্টির পাঁয়তারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে। অন্যদিকে করোনা আতঙ্কে একশ্রেণির মানুষ পণ্য মজুতের দিকেও ঝুঁকে পড়েছেন। প্রয়োজনের তুলনায় তারা বেশি পণ্য ক্রয় করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বলাই বাহুল্য, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার ঘটায় নানা ধরনের আশঙ্কা, অস্থিরতা বাড়ছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শনাক্তকরণ কিট উৎপাদন এবং জরুরি অবস্থা মোকাবিলার উদ্যোগও গ্রহণ করা হচ্ছে। জানা যায়, ইতিমধ্যে বাজারে নিত্যপণ্যের চাহিদা বেশি হওয়ায় এ সুযোগে দাম বাড়িয়েছে একদল অসাধু ব্যবসায়ী। এতে বিপাকে পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। অন্যদিকে হাইকোর্টও পণ্যের সংকট সৃষ্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে। করোনা আতঙ্কে বেশি পণ্য ক্রয় এবং পণ্যের দাম বাড়ানো অত্যন্ত পরিতাপের। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, পেঁয়াজ, ডিম, ডালের দাম বেড়েছে। অন্যান্য পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। করোনা আতঙ্কে মানুষ বেশি কেনাকাটা করে মজুত করছে- এ বিষয়টিও সামনে এসেছে। উলেস্নখ করা প্রয়োজন, বাজারে পণ্যের চাহিদা বেশি থাকার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা প্রয়োজনের তুলনায় দুই-তিনগুণ বেশি পণ্য কিনলেই যে দাম বাড়াতে হবে তা যেমন মেনে নেয়া যায় না, তেমনিভাবে বেশি পণ্য কিনে মজুত করাও সমীচীন নয়- বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বলাই বাহুল্য, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশের সব স্থানে চলমান ও অনুষ্ঠেয় বাণিজ্যমেলা বন্ধ ঘোষণা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের অফিসে না এসে ঘরে বসেই কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শপিং মল কিংবা দোকানপাট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য বেশি পরিমাণে কিনে জনগণ মজুত করছেন। আর এতেই রাজধানীজুড়ে কেনাকাটার হিড়িক পড়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ইতিমধ্যে প্রয়োজনের বেশি পণ্য না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ভোক্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ রয়েছে। মূল্যও স্বাভাবিক। করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করার প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে রাজধানীর বাজারগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা। আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকার জন্যও ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃত্রিম সংকট তৈরি এবং অযৌক্তিকভাবে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে না দেওয়ার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এ উদ্যোগ ইতিবাচক। এবার যেহেতু অন্য বছরের চেয়ে ২৫-৩০ শতাংশ পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে, ফলে আতঙ্কিত না হয়ে পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে সামাল দিতে সংশ্লিষ্টদের যেমন কার্যকর উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি সবার সচেতনতার বিষয়টিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গুজবের কারণে যেন মানুষের জীবন বিপর্যস্ত না হয় এ জন্য আত্মসচেতনতাও জরুরি। সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়েই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারসাজির খেসারত দিতে হয় সাধারণ ক্রেতাকে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। এমনও দেখা গেছে, এই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রতিশ্রম্নতি দেওয়ার পরও পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। আর এবার করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বেই বিপর্যস্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে এমতাবস্থায় যদি দেশের বাজারে অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করে মজুত করার প্রবণতা তৈরি হয় তবে বিষয়টি কিছুতেই স্বস্তিকর হতে পারে না। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। প্রয়োজনে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করুক- এটাই প্রত্যাশা।