পাঠক মত

জায়া-কন্যা-জননী

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভৌগোলিকভাবে স্বাধীন হয়েছি বটে, মানুষ হিসেবে হইনি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মানুষ হিসেবে এখনো নরকের দরজা কিংবা কেবলি যৌন বস্তু বলেই পরিচিতি পাই। মানুষ! তবে মেয়েমানুষ! কেবলি মাংসপিন্ড, ভোগ্যপণ্য। যাকে দেখলেই চোখ দিয়ে, হাত দিয়ে, লিঙ্গ দিয়ে ভোগ করার, অবদমন করার, নিচে রাখার বাসনা জাগে। যার চিৎকার করতে নেই, হাসতে নেই, কাঁদতে নেই, মন্তব্য করতে নেই কেবল পদসেবা করতে আছে। হাতে, পায়ে, গলায় সোনা-রুপোর কারুকার্য শোভিত শিকল পরিয়ে নাম দিয়েছে অলঙ্কার। একটু রাত করে ঘরে ফেরা মেয়েটাকে পুরুষ নামক দুপেয়ে শেয়াল-শকুনে ছিঁড়ে খাওয়ার লাইসেন্স দিয়েছে। মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে গিয়ে গায়ে চরিত্রহীনার ট্যাগ নিয়ে অসহায়ের মতো হেরে গিয়েছি পৌরুষত্বের ক্ষমতার কাছে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মোমবাতি জ্বেলে ঘোর অন্ধকারে হাতড়ে মরেছি। পস্ন্যাকার্ড-ফ্যাস্টুনে সারি বেঁধে স্স্নোগানে স্স্নোগানে মুখরিত করেছি রাজপথ, হয়েছি খবরের কাগজের ছবি। ট্রেনে, বাসে, ট্রামে অথবা ভিড়ের মধ্যে অচেনা হাতের অযাচিত স্পর্শে গুটিয়ে নিয়েছি কেবল নিজেকে, কুঁকড়ে গেছি ভয়ে কিংবা লজ্জায়। শিরদাঁড়া সোজা করে ঘুরে দাঁড়ানো মেয়েটার চোখে-মুখে নির্লজ্জ-বেহায়ার কালি ছিটিয়ে দিয়েছে। শরীরের দোষে বিদ্যে অর্জনের পাট চুকিয়ে 'ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে'র ঘটা করে পরকালের পথ মসৃণ করেছেন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা। বছর বছর সন্তান জন্ম দিয়ে আর হেঁঁশেল ঠেলে নিজেকে নিয়ে ভাবার অবকাশ পাইনি। বুদ্বুদ করা ভাতের ফ্যানের মতোই মিলিয়ে গেছে সমস্ত শখ-আহ্লাদ। যাপিতজীবনের অপ্রাপ্তিগুলো ছটফট করেছে ডাঙায় তোলা মাছের মতো। স্বামী-সন্তান আর সংসারধর্ম পালনে হাঁপিয়ে উঠেছি সময় সময়, নিজের দিকে তাকানোর ফুরসত কই? লক্ষ্ণণরেখা পার হওয়ার অনুমতি পাইনি বটে, জানালার ফাঁকে দেখতে পেয়েছি দূরের আকাশ?গন্ডিবদ্ধ জীবনের রং হারিয়ে এক মুঠো ছাই হয়ে চাপা পড়েছে স্বপ্নেরা সব। পাঁজর ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস ছাদ ফুঁড়ে বেরোবার পথ পায়নি চারদেয়ালের বাতাস ভারী করে দুর্বিষহ করে তুলেছে দমবন্ধ জীবন। ইচ্ছের অপমৃতু্য ঘটে বুকের পাশে মস্ত কবর, টুপটাপ করে শরতের শিউলি ঝরে পড়ে যার ওপর। পুরুষতান্ত্রিক ধর্মে সম্মান দিয়েছে ঢের, পদতলে বেহেশত দিয়েছে, দেবী বলে আধিখ্যেতা করেছে, কাব্যে-কবিতায় সাজিয়েছে উপমায়। শুধু মুক্তি মেলেনি, ডানা ভেঙে ঘুরপাক খেয়ে পড়েছি পুরুষের পায়ের কাছেই, যেখানে স্ত্রীর বেহেশত অথবা পতি-পরমেশ্বর। পতি ধর্ম, পতি কর্ম। জায়া-কন্যা-জননী কেবলি ছায়া, কেবলি মায়া, ব্যথাতুর আর্তনাদ। আকলিমা আক্তার সোমা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়