এটি কি শুধুই করোনাভাইরাস না অন্যকিছু?

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
গোটা পৃথিবীতে এখন এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। এটি কি শুধুই একটি ভাইরাস না অন্য কিছু? মরণব্যাধি এই ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের উহান প্রদেশ। সেখানে অবশ্য আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে কিন্তু ইউরোপের দেশ ইতালিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। করোনা সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র পাওয়া কঠিন কারণ এত জনবহুল দেশে সরকারি হাসপাতালগুলো তো গরুর খোঁয়াড়ের চেয়েও নোংরা, সেখানে প্রতিদিন আসা রোগীরাই চিকিৎসা পায় না, ভয়ানক অসুস্থ রোগী যাদের হাসপাতাল বেডে থাকার কথা, তাদের অধিকাংশকেই বেসরকারি ক্লিনিকে চলে যেতে হয়, নয়তো হাসপাতালের নোংরা ফ্লোরে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এতে রোগ ভালো হওয়ার চেয়ে রোগীদের আরও বেশি অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই পরিস্থিতিতে কে করোনা আক্রান্ত আর কে নয়, তা নির্ধারণই বা করবে কে আর করলেই তাদের চিকিৎসা হবে কোথায়? তাই ব্যক্তিপর্যায়ে যেসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন যেমন বারবার হাত-মুখ ধোয়া, জনসমাগম যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা, হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় রুমাল বা টিসু্য দিয়ে মুখ চেপে রাখা, পরিষ্কার-পরিচছন্ন থাকা ইত্যাদি অবলম্বন করে যতটা সুস্থ থাকার চেষ্টা করা যায় ততটাই মঙ্গল। আমাদের খেটে খাওয়া মানুষের, দিনমজুরের, রিকশাওয়ালার পক্ষে এতটুকু মেনে চলাও তো সম্ভব নয়। আমাদের দেশে যাদের সংগতি আছে তারা তো চিকিৎসা করাতে যান সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতে নিজ খরচে। তারপরের সারিতে যারা, তারা দেশের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করান। সরকারি হাসপাতালে আছে দালাল, আছে নোংরা পরিবেশ, আছে ভাঙাচোরা আর লক্কর-ঝক্কর মার্কা কিছু যন্ত্রপাতি যা জীবনে যন্ত্রপাতি যা দিয়ে জনগণের সেবা সম্ভব নয়। হাঁ, ডাক্তারও আছেন, তবে তাদের পেশার চেয়ে চাকরিটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা এখানে চাকরি করেন আর অফিস টাইমের পর ডাক্তারি করেন। অন্যান্য দেশের কথা বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের কথা আলাদা। তারা যেভাবে এবং যেমন দরকার জনগণের জন্য প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যেমন ঘরের বাইরে কাউকে আসতে না দেয়া, নিজ নিজ বাসায় প্রয়োজনীয় খাবার রেখে দেয়া, খাবার শেষ হয়ে গেলে রাষ্ট্র থেকেই খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি। আমাদের দেশে আমরা এগুলো কল্পনায়ও আনতে পারব না। আমাদের বরং ভয় হচ্ছে তারপরও অসাধু ব্যবসায়ীরা সব জিনিসপত্র আটকে চরম কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করবে 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' সৃষ্টি করেন কিনা। তখন মানুষের তো কিছুই করার থাকবে না। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ভূমিকা বা ব্যবস্থা তো টিভির পর্দায়ই সীমাবদ্ধ থাকে, জনগণের ধারে-কাছেও যায় না। একটি নিত্যদ্রব্য পণ্য হচ্ছে পেঁয়াজ, সেই ২০ টাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে আমার ২০০ টাকার বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী 'ক্যাসিনো ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে পেঁয়াজের ব্যবসা দ্বারা। সেখানে সরকার তো কিছুই করতে পারেনি। এটিই হচ্ছে ভয়। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করব, আপনাদের একটু ভেবে দেখতে হবে গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে এই করোনাভাইরাস। এটি কি শুধুই করোনাভাইরাস? এটি আসলে আমাদের প্রতি প্রকৃতির প্রতিশোধ। আমরা অহরহ প্রকৃতির সব নিয়মের বিরুদ্ধে কাজ করি, বিরুদ্ধাচারণ করি। পস্নাস্টিকের তৈরি একটি পণ্য পাঁচশত বছরের বেশি সময় নেয় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে অর্থাৎ পস্নাস্টিকের ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি কিন্তু আমরা প্রতিদিন আরও বেশি বেশি যেন পস্নাস্টিক ব্যবহারে আনন্দ পাই সারা পৃথিবীতে। আইন করা হলেও তার ফাঁক-ফোকর দিয়ে, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমরা তা করতে থাকি। শিল্প-কারখানা দিয়ে তৈরি করি হাজার হাজার মণ বর্জ্য, কোথায় ফেলব এসব বর্জ্য? আমাদের দিকেই তো তারা ফেরত আসে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট প্রবল হতে পারে। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার যদি সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা না নেয়, তবে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ তাদের চাকরি হারাবেন বলে সতর্ক করেছে আইএলও। সংস্থাটি বৈশ্বিক এ দুর্দশা থেকে রক্ষায় জরুরি, বৃহৎ ও সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ দিয়েছে। এর পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা এবং আয় ও চাকরির ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেয়ার কথাও বলেছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে আছে সামাজিক সুরক্ষা, স্বল্পমেয়াদি কাজের পরিধির প্রসার, ছোট ও মাঝারি আকারের শিল্পের শুল্ক হ্রাস। কোভিড-১৯ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত আট হাজারের বেশি। ইউরোপে পর্যটক ঢোকায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাস আতঙ্কে ইউরোপ ও এশিয়ার প্রধান প্রধান শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত আছে। বাজারে প্রচন্ড অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নতুন করোনাভাইরাসের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চাইলে জরুরি ভিত্তিতে আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এদিকে ইতালিতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইতালিতে। দেশটিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সময়সীমা আরও বাড়ানোর বিষয়ে ভাবছে সেখানকার সরকার। প্রশ্ন হচ্ছে- আমাদের ওপর প্রকৃতির এত ক্ষোভ কেন? আমরা একটু সবল হলেই দুর্বল মানুষের প্রতি অত্যাচার শুরু করি নানামাত্রায়। সেটি ব্যক্তিপর্যায়ে, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিকপর্যায়ে। আমার গায়ে একটু শক্তি হয়েছে আমার পাশে আর কাউকে বসতে দেবো না, কাছে আসতে দেবো না কারণ আমার শক্তি আছে। এই শক্তির খেলা চলছে সারা পৃথিবীতে। শক্তি হলেই আর কাউকে তোয়াক্কা করি না। আমি রাজনীতি করি, আমার পার্টি শক্তিশালী, অন্য কোনো পার্টিকে দাঁড়াতে দেবো না, আমি শক্তিশালী রাষ্ট্র আমার যা ইচ্ছে তাই করব। পার্শ্ববর্তী দুর্বল রাষ্ট্রকে সব সময় ভীতির মধ্যে রাখব, চাপের মধ্যে রাখব। আমি গোটা পৃথিবীতে শক্তিশালী, আমার সমকক্ষ কাউকে হতে দেবো না, আমার ধারে-কাছেও কাউকে আসতে দেবো না। অমি যা বলব তাই সবাইকে শুনতে হবে, করতে হবে তা না হলে আণবিক বোমা দিয়ে, আমার সেনাবাহিনী দিয়ে, বিমানবাহিনী দিয়ে মানবসভ্যতা শেষ করে দেবো। আমি যা জানি, আমি যা মানি সবাইকে তাই করতে হবে তা না হলে তাদের ধ্বংস করে দেবো- গোটা পৃথিবীতে আমরা এই নিয়মই চালু করেছি। এই নিয়ম কি প্রকৃতির নিয়ম? অবশ্যই না। এগুলো সবই প্রকৃতির বিরুদ্ধে নিয়ম। প্রকৃতি তাই অতিক্ষুদ্র এক ভাইরাস যা চোখেও দেখা যায় না অথচ তার ভয়ে গোটা পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। কোথায় সব আণবিক অস্ত্র, আণবিক বোমা যা দ্বারা স্বজাতিকে ধ্বংসের মহা খেলায় মত্ত মানবজাতি। অথচ আজ তারা সবাই নিজেরাই গৃহবন্দি। তবু যেন শিক্ষা নেই মানবজাতির! মাছুম বিলস্নাহ ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত সাবেক ক্যাডেট কলেজ রাজউক কলেজ ও বাউবির শিক্ষক