বইয়ের বোঝা শিশুর পিঠে

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সভ্যতার শুরুতে মানুষ শিক্ষা অর্জনের জন্য নানা ধরনের মাধ্যম বেছে নিয়েছে। বই তেমনি একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে মানুষ অজানাকে জানার একটি সহজ উপাদেয়। আশির দশকের আগে তেমন একটা কিন্ডারগার্টেন বা নূরানী ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষা ছিল না। কচি-কাঁচা শিশুদের প্রাইমারি স্কুল ছিল শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম। বই ছিল হাতে-গোনা কয়েকটি। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন শুরু হওয়ার পর প্রতিযোগিতা হারে শিশুদের কাঁধে বই-খাতার এক বিরাট বোঝা তুলে দেওয়া হয়েছে। এই বইয়ের বোঝার চাপে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক চাপে প্রতিভা বিকাশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। দেশের লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী কিন্ডারগার্টেন, নূরানী ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসা পড়াশোনা করলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। জানা নেই কিন্ডারগার্টেনের সঠিক সংখ্যাও। নেই অনেক কিন্ডারগার্টেনের নিবন্ধনও। এ ছাড়া এখানে কী ধরনের বই পড়ানো হচ্ছে, তার তদারকিও নেই, যা সরকারের জানা থাকা অতি আবশ্যক। এখানে আরেকটি বিষয় আলোকপাত করতে হচ্ছে- অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেনে ছুটি-ছাটার ও শিক্ষক নিয়োগে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নিজেদের ইচ্ছেমতো ছুটির তালিকা তৈরি করছে তারা। বিশেষ করে ইসলামী কিন্ডারগার্টেন নামধারি কিছু প্রতিষ্ঠান ২১ ফেব্রম্নয়ারিসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসেও ক্লাস নিচ্ছে। অতিরিক্ত বইয়ের চাপে শিশুর কাহিল অবস্থা। যে প্রতিটা বই সঙ্গে একটি করে খাতা আবার ওদের প্রত্যহ স্কুলব্যাগে ঢুকিয়ে বহন করতে হচ্ছে। একই ব্যাগে আবার বহন করতে হচ্ছে টিফিন বক্সসহ পানির বোতলও যাতে অতিরিক্ত ওজনে শিশুর ঘাড় এবং পিঠে প্রচন্ড চাপ পড়ছে। ফলে ওদের মেরুদন্ড বাঁকা হওয়ার পাশাপাশি কুঁজো হয়ে যাচ্ছে শরীরটাও। এ ছাড়া শ্বাসকষ্টে ভুগতে হচ্ছে অনেক শিশুকে, যা শিশুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসকদের মতে, ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির উৎকৃষ্ট সময়। এ সময় শিশুর হাড় ও মাংসপেশি যথেষ্ট নরম থাকে। সামান্য আঘাতে অথবা চাপে মেরুদন্ড বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে এ বয়সেই। শিশু শিক্ষার্থীদের বইয়ের চাপের পাশাপাশি কিছু অনিয়মও দেখা যায়। কিন্ডারগার্টেনের প্রধানের পদ-পদবি; যে পদবিটি ব্যবহার করা হচ্ছে অধ্যক্ষ হিসেবে। হাস্যকর হলেও সত্যি, সেই অধ্যক্ষদের বেতনাদি হাজার চার-পাঁচের মধ্যে। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বড়জোর। আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন দুই-তিন হাজারের মধ্যে (ব্যতিক্রমও আছে ক্ষেত্র বিশেষ)। টিউশন করার সুযোগ বেড়ে যায় বেতন যাই হোক না কেন তারা মেনে নিচ্ছেন। লাভবান প্রতিষ্ঠান বিধায় দেশের কিন্ডারগার্টেনগুলো সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে আজকাল ফলে শহরের পাশাপাশি মফস্বল শহরেও কিন্ডারগার্টেন গড়ার হিড়িক পড়ছে। অলিগলি ভরে গেছে কিন্ডারগার্টেনের সাইনবোর্ডে। কোনোমতে একটা দালান ভাড়া নিতে পারলেই কিন্ডারগার্টেন দাঁড়িয়ে গেল! নেই ক্যাম্পাস, নেই কোনো খেলার মাঠ, নেই কোনো বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা। ফলে তারা বদ্ধপরিবেশে বড় হচ্ছে। পরবর্তীকালে বছরের পর বছর সুফল বয়ে আনবে যদি শিক্ষার্থীদের ভালো রেজাল্ট করানো যায়; সেটি করছেনও তারা, যা ধরে রাখতে শিক্ষকরা মরিয়া হয়ে শিশুদের নিয়মিত ঘষামাজা করছেন। আমরা কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষাব্যবস্থাকে নিরুৎসাহিত করছি না। বরং নিরুৎসাহিত করছি কিন্ডারগার্টেনের ব্যবস্থাপনাকে। স্পষ্ট সরকারি নীতিমালা না থাকার কারণে কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব মনগড়ায় তৈরি নীতিমালা দ্বারা স্কুল পরিচালনা করার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতার কিংবা অধ্যক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে সহায়ক বই পাঠ্য করিয়ে বাণিজ্যের পসার ঘটায়। এতে লাভবান উভয়ে হলেও শিক্ষার্থী-অভিভাবক বেকায়দায় পড়ে যান। বর্তমানে উচ্চপর্যায়ে আসীন তাদের অধিকাংশই সনাতনী শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠ চুকিয়ে এসেছেন। আকাশচুম্বী সফলতাও অর্জন করেছেন তারা। তাদের কিন্তু কিন্ডারগার্টেনে পড়তে হয়নি। পড়তে হয়নি ইংলিশ মিডিয়ামেও। মেধাবী শিক্ষার্থী গড়তে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা না চাপিয়ে নির্দিষ্ট কারিকুলাম ব্যবহার করে ছোটবেলা থেকে যে শিশু যে শিক্ষা অর্জন করতে চায় (কারিগরি শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা) তাকে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলেই দেশ জাতি উপকৃত হবে এবং মেধার বিকাশ ঘটবে। \হ ইমাম হোসেন মীরসরাই চট্টগ্রাম