বাঙালির বীরত্ব যেন না হয় বাঙালির কাল

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। '৭১-এর এই স্স্নোগানই বলে দিচ্ছে, জাতি হিসেবে আমরা বীরের জাতি এবং তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ প্রকাশের কোনো স্থান নেই। কিন্তু যখন দেশের মন্ত্রণালয় থেকে সব স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলো। যাতে মানুষ ঘরে থাকতে পারে, করোনাভাইরাস (ঈঙঠওউ-১৯) থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে নিরাপদ রাখতে পারেন এবং প্রবাস ফেরতদের বলা হলো নিজ ঘরে অবস্থানের জন্য। কিন্তু ঠিক সে সময় প্রবাসফেরত একজন বাঙালি সরকারি নির্দেশনা না মেনে, বীর বেশে লাল-রাঙা মোটরসাইকেলে চড়ে, কোনো রূপকথার রাজ্যে, আজানা প্রান্তে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনদের কথা উপেক্ষা করে যে বীরত্ব দেখিয়ে মিষ্টান্ন ভোগের স্বাদ উপভোগ করেছেন। সেই বীরত্বের আদৌ কি কোনো যৌক্তিকতা আছে? স্বচক্ষে যে আতঙ্ক, ভয় চায়নার মানুষের চোখে-মনে দেখেছি এবং সেই দেশে অবস্থান করে নিজ থেকে যে উপলব্ধি হয়েছে; সেই উপলব্ধি এবং স্বল্প সময়ের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি বলব, 'করোনাভাইরাসের (ঈঙঠওউ-১৯) সঙ্গে বাঙালির বীরত্ব মানায় না। সরকারি আদেশ না মানা এবং তোয়াক্কা না করা এবং সেই সঙ্গে সতর্ক-সচেতনতা অবলম্বন না করে মাঠে-ময়দানে খেলতে যাওয়া এবং প্রয়োজনহীন জনকোলাহলে বিচরণের মতো বীরত্ব, মূর্খতার পরিচয়।' ডা. লি ওয়েলিয়াং ডিসেম্বরের শেষদিকে, প্রথম উইচেট গ্রম্নপের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের কথা জানান এবং সবাইকে সতর্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলেন। কিন্তু চীন সরকার তার এই সতর্কতাকে 'গুজব' বলে আখ্যায়িত করে এবং তার এই মন্তব্য অবহেলার চোখে দেখে। যার ভয়াবহতা প্রকাশ পায় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহে। আর জানুয়ারির শেষের দিকে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজারে এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০-র মতো। আর এরপর থেকে রোগীর সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যা যেন জ্যামিতিক হারে বাড়তেই থাকে। মার্চ মাসে চীনে করোনা (ঈঙঠওউ-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১ হাজার। জনবহুল একটি শহর কীভাবে ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে, তা নিশ্চয় কারও আজানা নয়। বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ইতালিসহ অন্যান্য দেশে রোগীর এবং মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় করোনার ভয়াবহতা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশের জন্য যার পরিস্থিতি হবে অবর্ণনীয়। বর্তমান সময়ে চীনে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। তা সম্ভব হয়েছে চীন সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং জনগণের সচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমে। করোনাভাইরাসের যেহেতু কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি এবং করোনাভাইরাসের সুস্থতা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল তাই- আলস্নাহর ওপর এবং নিজ নিজ ধর্মের সৃষ্টিকর্তার ওপর রোগমুক্তির ভরসা রাখার পাশাপাশি সর্বোচ্চ সতেচতনা অবলম্বন করা এবং অন্যকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ এবং সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাই হতে পারে আমাদের সঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবিলার পন্থা। তাই মূর্খতা নয়- সচেতনতাই হবে মুক্তি। মাঈন হাসান খান অনিন এমবিবিএস শিক্ষার্থী সাউদার্ন মেডিকেল ইউনিভার্সিটি অব চায়না