১১ হাজার ছাড়াল মৃতু্য

কঠিন পরিস্থিতিতে লড়ছে বিশ্ব

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ-বিস্তারে বিশ্ববাসী এখন নজিরবিহীন এক সংকটের মুখোমুখি। বিপর্যস্ত, আতঙ্কিত। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৮৩ দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার। আর এ পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে ১১ হাজার ২৬৬ জনের। এ ছাড়া এমনও জানা যাচ্ছে, মুমূর্ষু রোগীর জন্য হাসপাতালে আইসিইউ দূরের কথা, সাধারণ বেডও মিলছে না। অযত্নে লাশ পড়ে আছে মর্গে, দাফনের লোকও নেই। চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য আহাজারি করছেন। আর এ সংকট নির্দিষ্ট কোনো দেশের নয়, কার্যত বিশ্বব্যাপী। চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাস যে কতটা বিপর্যস্ত বিশ্ববাসী, তা বলাই বাহুল্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, দিন দিন যেন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে এ ভাইরাসটির থাবা। বিশ্বব্যাপী ক্রমেই বেড়ে চলেছে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস রোধে প্রতিষেধক আবিষ্কৃত না হওয়ায় বিশ্বের নেতা, দেশ পরিচালক, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও ভীত সন্ত্রস্ত। পরিস্থিতি এমন যে, অসহায়ের মতো খুব কাছে থেকে মৃতু্যকে দেখা ছাড়া আর উপায়ও নেই। আশার কথা, চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এনেছে স্বয়ং চীন। পাশাপাশি দেশটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শনাক্তকরণ কিট এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা দিয়ে চিকিৎসক পাঠাতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা দিন-রাত এক করে তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, এতে আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ-আতঙ্কে বিশ্বের অসহায় এখন সুখবর পাওয়ার আশায় প্রহর গুনছেন। চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে বারবার জানাচ্ছেন, ভাইরাসে সংক্রমণের শিকার হওয়া ব্যক্তি থেকে অন্যদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সংক্রমণ ঠেকাতে বারবার সাবান-পানিতে হাত ধোয়াসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও বাঞ্ছনীয়। গণজমায়েত একেবারে চলবে না। বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘরের বাইরে না বের হওয়ারও পরামর্শ রয়েছে। বাস্তবতা হলো- আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এ পরামর্শ কিছুতেই মানছেন না। যে কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়েও আমাদের দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে অভিবাসীরা নিজ দেশে ফিরে এসে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো, কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ-নির্দেশনা না মেনে চলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষকদের এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। গণমাধ্যমের নানান খবর বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গত ৭৫ বছরে এমন বিশ্বসংকট আর আসেনি। শুধু উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশ নয়- করোনার থাবায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক আর শক্তিধর দেশগুলোও। আমরা জানি, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে দেশবাসীকে রক্ষায় সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে মাদারীপুরের শিবচরকে 'অবরুদ্ধ' করা হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রবাস থেকে দেশে ফিরলেই হাতে সিল দিয়ে তাকে সেনাসদস্যের মাধ্যমে কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে এমন শক্তিশালী পদক্ষেপ আগে গ্রহণ করা গেলে তা বিস্তার রোধে আরও সহায়ক হতো বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। বলাই বাহুল্য, করোনাভাইরাস এক অদৃশ্য প্রাণঘাতী পরাশক্তি প্রতিপক্ষ। যার সঙ্গে মানুষের এই লড়াইকে অনেকে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার অন্যতম আগাম ব্যবস্থা হলো সতর্কতা। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আগাম সতর্কতার মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে মানুষই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, বৈশ্বিক এ মহামারি রোধে মানুষকেই সচেতন থাকতে হবে। নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে বাঁচাতে হলে সরকারের নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে যথাযথভাবে। মনে রাখতে হবে, কারও দ্বারা যেমন আমি আক্রান্ত হতে পারি, তেমনি আমার দ্বারাও অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারে। অন্যদিকে ভুলে গেলে চলবে না, যারা আমাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে, তারাও মানুষ, তাদেরও পরিবার-পরিজন রয়েছে। মৃতু্যভয় তাদেরও তাড়া করে। সুতরাং প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে কিছুতেই অবহেলা করা ঠিক হবে না। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবার সম্মিলিত সতর্কতা অবলম্বনের কোনো বিকল্পও নেই।