কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আতঙ্কের মুখে দেশের তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে গোয়েন্দারা এ বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি বলে পরামর্শ দিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিল্প, শেয়ারবাজারসহ অর্থনৈতিক অন্যান্য খাতেও। এরই মধ্যে বিশ্বের ক্রেতারা পর্যায়ক্রমে ক্রয়াদেশ বাতিল করায় দেশের পোশাক খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, আর এতে সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী ঈদুল ফিতরের আগে গার্মেন্ট মালিকরা শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বোনাস সময়মতো পরিশোধ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের বলেও মনে করছেন তারা। সোমবার যায়যায়দিনের অনুসন্ধানী খবরে বলা হয়েছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনে গার্মেন্টশিল্প, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার, শেয়ারবাজারের দরপতন, সীমান্ত হাট বন্ধ, গণপরিবহণে চলাচলে ভীতি, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের নেতিবাচক প্রভাবসহ বর্তমান দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন মতে, গার্মেন্টশিল্পের যন্ত্রপাতি, ফেব্রিক্স, সুতা, বোতাম, রঙের কেমিক্যাল ও কাঁচামালের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশের রপ্তানিকারক দেশ চীন থেকে আমদানি বন্ধ রয়েছে। এসব সরঞ্জামাদির সংকটের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি গার্মেন্ট কারখানার উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। বলাই বাহুল্য, পোশাক তৈরি বন্ধ হওয়া মানেই লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়া। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে পোশাক কারখানা আছে প্রায় ৪ হাজার ৬২১টি। এর মধ্যে সরাসরি রপ্তানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে প্রায় আড়াই হাজার। এ খাতে প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। বিজিএমইএ সংশ্লিষ্টদের দাবি, করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশের পরিমাণ প্রতিদিনই বাড়ছে। গত বুধবার ৮৪ পোশাক কারখানার ১০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৮৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে পোশাক রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ায় আরও ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। সংগত কারণেই বিষয়টি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। গোয়েন্দা এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের তুলনায় মৃতু্য ঝুঁকি কম, যা গড়ে ২ থেকে ৩ শতাংশ। অন্যদিকে মার্স ভাইরাসে মৃতু্যর হার ৩৪ এবং সার্স ভাইরাসে মৃতু্যর হার ছিল ৯.৬ শতাংশ। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতু্যর ক্ষেত্রে বয়স একটি কারণ হিসেবে কাজ করে। যে কারণে বয়স্করা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বার্ধক্যজনিত নানা রোগের কারণে তাদের সংক্রমণ প্রকট হচ্ছে। পরিসংখ্যান দৃষ্টে অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় করোনাভাইরাসকে ভয়ানক আতঙ্কগ্রস্ত ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত না করে বরং যথাযথ সচেতনতা অবলম্বন করলে ভাইরাস মোকাবিলা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত নিয়ে প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। ভাইরাস নিয়ে বিভ্রান্তি রোধে যথাযথ নজরদারিপূর্বক গার্মেন্ট কারখানাসহ শ্রমঘন কলকারখানা এলাকায় প্রতিদিনই সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর কথা বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, অফিস-বাসা-বাড়িতে সমষ্টিগতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আর গার্মেন্টে বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়ে এখনই রাষ্ট্রকে সংশ্লিষ্ট মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। করোনাভাইরাস ইসু্যতে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজার, টিসু্য পেপার ও থার্মোমিটার অস্বাভাবিক মূল্যে বিক্রি করছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা আরও জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সচেতন করা, দেশের সব মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সগুলোতে কোয়ারেন্টিন বেড প্রস্তুত রাখা, জনসমাগম বন্ধসহ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যেসব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তাও দ্রম্নততার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের বিবেচনায় নিতে হবে। সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।