মানুষকে রক্ষা করাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বে মহামারি আকার ধারণা করা নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বাংলাদেশের মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে। আর বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষায় সরকার এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি এবং তাতে জনগণকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানান। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জনসাধারণের কতর্ব্য হওয়া দরকার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সচেতনতার সঙ্গে নিজেদের কর্তব্য পালন করা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় সচেতনতা এবং একে অপরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকা জরুরি। ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'এবারের স্বাধীনতা দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত।' তিনি এমনটিও জানিয়েছেন. 'ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড়- সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়।' বলার অপেক্ষা রাখে না, সারাবিশ্বে মহামারি রূপ নেওয়া কোভিড-১৯ রোগে ইতোমধ্যে বিশ্বে ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃতু্য ঘটেছে, আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। আর বাংলাদেশেও সংক্রমণ ঘটেছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের, মৃতু্যর ঘটনাও ঘটেছে। প্রসঙ্গত বলতে চাই. করোনা ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে; এবার স্বাধীনতা দিবসের প্রায় সব অনুষ্ঠানই বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে সবার কর্তব্য হওয়া দরকার নিষেধাজ্ঞা পালন করা এবং এ সময়ে যে করণীয় বিষয়গুলো আছে তা মেনে চলা। আমরা উলেস্নখ করতে চাই, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে জনসমাগম হয় এমন ধরনের সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে এই অনুরোধে সাড়া দিতে হবে এবং নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখা জরুরি, নিদের্শনা মেনে চললে সংক্রমণ রোধ হতে পারে। 'এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা।' এমনটি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে এবং মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে অতি সংক্রামক এই ব্যাধি বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়লে কী পরিণতি ঘটবে- তা নিয়ে সবার মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। জনসমাগমে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে বলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা এসেছিল আগেই। আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সোমবার সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব অফিস-আদালতে ছুটি ঘোষণা করে। এরপর মঙ্গলবার সড়ক, নৌ ও আকাশপথে সব ধরনের যোগাযোগও বন্ধের ঘোষণা এলে ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশও বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো কার্যত অবরুদ্ধ দশার মধ্যে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন, 'আমি জানি আপনারা এক ধরনের আতঙ্ক ও দুঃশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যাদের আত্মীয়স্বজন বিদেশে রয়েছেন, তারাও নিকটাত্মীয়দের জন্য উদ্বিগ্ন রয়েছেন। আমি সবার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি।' এরপর তিনি এটাও জানিয়েছেন, এই সংকটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। ফলে ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলা এবং যতদূর সম্ভব, ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি- যা আমলে নিয়ে সবাইকেই এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শক্ত হতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরেছেন, তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা 'অক্ষরে অক্ষরে' মেনে চলার যে আহ্বান জানিয়েছেন সরকার প্রধান, তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে। যেন কেউ এর বাইরে নিজেদের মতো চলাফেরা না করতে পারে। ভুলে যাওয়া যাবে না. পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য নির্দেশনা মেনে চলা অপরিহার্য।