দেশের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক

মুক্ত খালেদা জিয়া

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে ২৫ মাস সাজা ভোগের পর 'মানবিক বিবেচনায়' সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর ভিড় আর স্স্নোগানের মধ্যে গুলশানের ভাড়াবাড়ি ফিরোজায় পৌঁছান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদন্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া। প্রথমে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছর ১ এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। এমন এক সময়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হলো, যখন নভেল করোনাভাইরাসের মহামারিতে পুরো বিশ্বজুড়ে চলেছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। নানা বিধিনিষেধে বাংলাদেশও রয়েছে প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায়। বিএনপি নেতারা এতদিন খালেদার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে এলেও মহামারির মধ্যে এমন পরিস্থিতি তার মুক্তি নিয়ে এখন তাদের মনে শঙ্কাও কাজ করছে। অবশ্য তারা রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন করেও তাকে মুক্ত করতে পারেনি। অবশ্য পারিবারিক উদ্যোগে এবং সরকার প্রধানের মানবিকতা ও উদার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই তার এ মুক্তি মিলেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার শুধু বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার সদয় হয়ে দন্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা মনে করি, বেগম খালেদা জিয়ার এই মুক্তির মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক ধারা শুরু হলো। একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাকস্বাধীনতা তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত। এটা না থাকলে গণতন্ত্র তার নিজস্ব পথে এগুতে পারে না। বেগম খালেদা জিয়ার এই মুক্তির মধ্য দিয়ে সেই পথ প্রসারিত হলো। প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শক্তিশালী না হলে গণতন্ত্র বিকশিত হয় না। এই বিষয়টিও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। সরকারের নানা পদক্ষেপের ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বর্তমান বিরোধী দল যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। গত সংসদে তারা সরকারের সঙ্গে থেকে সমালোচিত হয়েছিল। ভবিষ্যতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি রাজনীতিতে সক্রিয় হলে বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে যে স্থবিরতা চলছে তা কেটে যাবে। আমরা আশা করব, মুক্ত থেকে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। এ ব্যাপারে পরিবারের পাশাপাশি দলেরও যথেষ্ট করণীয় রয়েছে। এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, মাঝখানে দেশের রাজনীতি ছিল অবিশ্বাস আর তিক্ততায় ভরা। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মধ্য দিয়ে তার দ্রম্নত অবসান হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৈশ্বিক দুর্যোগ হিসেবে স্বীকৃত। এটা থেকে বাংলাদেশ মুক্ত নয়। সুতরাং এই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে জাতীয় ঐকমত্য এবং এর কোনো বিকল্প নেই।