করোনাভাইরাসের ঝুঁকি

মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, এরই মধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ পেরিয়ে গেছে; মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৪ হাজার। এমন অবস্থায় বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, মারাও গেছে ৫ জন। আর করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা। সব জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার ট্রেন, বিমান ও নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা প্রতিরোধে এই বিচ্ছিন্নতা জরুরি এবং যথাযথ সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে দূরত্ব বজায় রাখা, নিয়ম-নীতি মেনে চলার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পত্রপত্রিকায় এমনটি সামনে এসেছে, ছুটি ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন ও বাস স্টেশনে মানুষের ভিড়ের ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। অথচ নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে গণপরিবহণ ব্যবহারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক। আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক বলেছেন, এমন অবস্থায় ঝুঁকি তো কিছুটা থাকেই। তার মতে, সংক্রমণের হার কম থাকলে ঝুঁকিও তেমন একটা থাকে না। তবে সংক্রমণের হারটা বেশি থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ছাড়া ভ্রমণ করলে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি এমনিতেই বাড়ে এমনটিও জানিয়েছেন তিনি। আর মূলত এর কারণেই আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া দরকার, মানুষ যে গ্রামে ফিরছে এতে মিক্সিং হওয়ার একটা শঙ্কা আছে। অর্থাৎ গ্রাম থেকে সংক্রমণ শহরে আসতে পারে আবার শহর থেকেও গ্রামেও যেতে পারে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা জরুরি। গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে যেন অসচেতনতার ফলে করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারে সেই লক্ষ্যে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ সামগ্রিক পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বলা দরকার, এমন বিষয় জানা গেছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এই মুহূর্তে করণীয় ছয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশও এসব বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে কিছু কাজ বাংলাদেশ আগেই শুরু করতে পারত বলে মনে করছেন অনেকে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা এখনো অনেক বাকি। এই পরীক্ষা হয়েছে মাত্র এক হাজার মানুষের। ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর স্বল্পতা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তোষ আছে এমনটিও সামনে এসেছে। নানাভাবেই উদ্বেগ আছে প্রায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে- ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে দৃষ্টি দিলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে এটি মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি, বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ এবং কারোনাভাইরাস আতঙ্কে যেভাবে রাজধানী থেকে সারাদেশে মানুষ গেছে এবং প্রবাসীরাও বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট এই পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না, যেকোনো ধরনের অবহেলা অনেক বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে, ফলে কোনো প্রকার ছাড় নয়- সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সচেতনতার মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখার কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত এটাও বলা দরকার, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, করোনা মহামারি প্রকট আকার ধারণ করছে। তবে এটাও মনে রাখা সঙ্গত- সংস্থার প্রধান এটাও বলেছেন, এখনো করোনাভাইরাসের গতিরোধ সম্ভব। ফলে এই গতিরোধে কোনো প্রকার ছাড় নয়, মানুষকে ঘরে থাকতে বলা বা সামাজিক দূরত্বের মতো বিষয়গুলো এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে তৎপরতা জারি থাকুক এমনটি কাম্য।