করোনা শনাক্তের বড় চ্যালেঞ্জ

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে বিশ্বজুড়ে। প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা। পাশাপাশি মৃতু্যর হারও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। অন্যদিকে সুরক্ষা সরঞ্জামের অপ্রতুলতার কারণে আতঙ্ক বাড়ছে চিকিৎসকদের মধ্যেও। বলার অপেক্ষা রাখে না, গোটা বিশ্বের পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার দৃষ্টি এখন করোনাভাইরাসের দিকে। আর বাংলাদেশে এই রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা রোধ করতে সব শক্তি নিয়োগ করতে হচ্ছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, করোনা বিস্তার রোধে পার্সোনাল প্রটেকশন ইকিউপমেন্ট (পিপিই) এবং টেস্ট কিট সংগ্রহ করছে প্রশাসন। এরপরও টেস্ট কিটের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। 'ঘরে থাকার যুদ্ধে' দেশ অনেকাংশে সফল হলেও সরকারের সামনে এখন আরও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে। সর্দি-কাশি-জ্বর ও গলাব্যথাসহ করোনাভাইরাসের বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে যারা বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিক কিংবা বাসা-বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত কিনা, তা দ্রম্নত শনাক্তকরণ এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি হলেও সেটা করা যাচ্ছে না। আর এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে করোনার প্রকোপে লাগাম দিতে হলে দ্রম্নত শনাক্ত করা জরুরি। তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও (ডবিস্নউএইচও) কোনো দেশের নাম উলেস্নখ না করলেও যেসব দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্ত করতে যথেষ্ট পরীক্ষা করছে না ওইসব দেশ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, 'সব দেশের প্রতি আমাদের বলার বিষয় হচ্ছে- 'পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা।' এর মানে করোনা আক্রান্ত হিসেবে কাউকে সন্দেহ হলে প্রথম কাজ হলো পরীক্ষা করানো। অথচ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়া এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সেভাবে এই মরণব্যাধি শনাক্তকরণ পরীক্ষা বাড়ছে না। তাই বাংলাদেশের জনঘনত্ব ও এখানকার মানুষের জীবনযাপনের ধরন বিবেচনায় নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞই বাংলাদেশকে উচ্চ ঝুঁকির দেশ হিসেবে বিবেচনা করছেন। আর দেশের মানুষও এ পরিস্থিতিতে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। জানা যায়, সম্প্রতি চীন থেকে টেস্ট কিট এবং পিপিই দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। দেশের গণস্বাস্থ্য সংস্থাও শনাক্তকরণ কিট উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছে। তবে কবে নাগাদ তাদের উৎপাদিত কিট সরকারের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে তা বলা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রোগী শনাক্তে কিটের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকারের সুযোগ নেই। অন্যদিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এতে গ্রামের মানুষও ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। এদিকে বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিনে রাখাও শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। তথ্য অনুযায়ী, কোয়ারেন্টিনের সংখ্যা বিদেশফেরতদের সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বলে মনে করছেন অনেকে। এতে মূলত সবাই ঝুঁকিতে। শহরের স্বাস্ব্যসেবার তুলনায় গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও নাজুক। এ পরিস্থিতিতে সরকার দেশের সর্বত্র কিছু পিপিই পাঠালেও শনাক্তকরণ কিটের সংকট থাকায় গ্রামেও করোনা শনাক্ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বিদ্যমান এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের কিট সংগ্রহ এবং যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তাদের পরীক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে। এটা অত্যন্ত পরিতাপের যে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর উপযুক্ত সেবাপ্রাপ্তি দূরে থাক, শনাক্তকরণের নূ্যনতম সুযোগ নেই। এ কারণে সন্দেহভাজন রোগীদের এই রোগ শনাক্তকরণের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রামসহ যে মুষ্ঠিমেয় কেন্দ্রে করোনা পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে, সেখানে ছুটে আসতে হবে, যা অনেকের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে যারা পরীক্ষার জন্য শহরে আসবেন, তারা কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে নানা অসচেতনায় ওই রোগী পরিবহণের মাধ্যমে আরও অনেকের শরীরে এই মরণ ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আমরা মনে করি, শুধু লকডাউনই করোনা মোকাবিলায় যথেষ্ট নয় বলে বিশ্লেষকরা যে মত দিয়েছেন তা অস্বীকার করা যাবে না। ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণে চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারকে দ্রম্নত উদ্যোগ নিতে হবে। তথ্য মতে, আইইডিসিআর এখন পর্যন্ত মাত্র এক হাজার ৬৮টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকাল ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই দেশের সর্বত্র শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। সরকার এ ব্যাপারে দ্রম্নত উদ্যোগ নিক- এটাই প্রত্যাশা।