বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

করোনাভাইরাস : আতঙ্কিত না হয়ে প্রতিরোধ গড়তে হবে সম্মিলিতভাবে

মো. শাহেদ সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নতুন কাগজ চেয়ারম্যান রিজেন্ট গ্রম্নপ
  ৩০ মার্চ ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাস বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি শুধু নয়- অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিনই করোনাভাইরাসের থাবা বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছে এই ভাইরাসে। হাজার হাজার লোককে রাখা হয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণে। করোনাভাইরাস যেহেতু বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে, সেহেতু তা মোকাবিলায় বিশ্ব সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এ প্রেক্ষাপটে সার্কভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের ভিডিও কনফারেন্সে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মপন্থা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হয়ে তারা প্রাণঘাতী এই ভাইরাস মোকাবিলায় নিজ নিজ দেশে নেওয়া কাজের অভিজ্ঞতাও বিনিময় করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেয় ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলংকা। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে এ পর্যন্ত ১৫০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশে, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জাফর মির্জা। ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্ক তহবিল গঠনেরও প্রস্তাব দেন। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সার্ক নেতাদের ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হওয়া একটি ইতিবাচক ঘটনা। আমরা আশা করব সব পক্ষের এই যোগাযোগ সার্কের ঝিমিয়ে পড়া অবস্থার পুনরুত্থানেও অবদান রাখবে।

প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ থেকে মানুষকে বাঁচাতে চিকিৎসকদের সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। অথচ চিকিৎসার জন্য তাদের প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থার কথা বলা হলেও সেখানেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্রটেকটিভ গাউন, হ্যান্ড গস্নাভস, স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য সামগ্রী কিনতে পারছে না সরকারি হাসপাতালগুলো। বিভিন্ন হাসপাতালের কর্মকর্তা ও চিকিৎসক করোনা আতঙ্কে অফিসেই অনেকটা সেলফ কোয়ারেন্টিন করছেন। তারা কোনো রোগী কিংবা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করছেন না, কথাও বলছেন না। এমন পরিস্থিতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা।

করোনা মোকাবিলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের প্রস্তুতি একেবারে নেই বললেই চলে। ইতালির মতো দেশে যেখানে নিজেদের সুরক্ষার সরঞ্জামাদি থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা নিজেরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন সেখানে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া চিকিৎসকরা কী চিকিৎসা দেবেন, তা সহজেই অনুমেয়।

এদিকে রাজধানীতে করোনাভাইরাস আতঙ্কে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়ায় ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ফাঁকা রাস্তায় তারা চড়াও হচ্ছে সাধারণ পথচারীদের ওপর। লুটে নিচ্ছে সর্বস্ব। গত দুই মাসে রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ নিরপরাধ মানুষ। করোনাভাইরাস আতঙ্কে ঢাকা মহানগরীর যানবাহন চলাচল ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। সাধারণ পথচারীদের চলাচলও কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি। রাজধানীতে ছিনতাইয়ের যেসব ঘটনা ঘটে গড়ে তার এক কিংবা দুই শতাংশের খবর থানা পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছায়। সর্বস্ব হারিয়ে আবারও হয়রানি হওয়াকে নাগরিকরা নিরাপদ মনে করে না। ফলে ছিনতাইয়ের ঘটনা পুলিশের রেকর্ডে থাকে না। করোনাভাইরাস আতঙ্কে রাজধানীর রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়ায় ভোরের দিকে এবং সন্ধ্যার পর পুলিশি টহল বাড়ানো দরকার। ছিনতাই উপদ্রম্নত এলাকায় বাড়ানো দরকার পুলিশি প্রহরা।

এখানে বলে রাখি, আমার মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতাল সবসময় জনগণের কল্যাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড (উত্তরা ও মিরপুর শাখা) সম্প্রতি ডেঙ্গু আতঙ্কের সময়ও পুরো ২ মাস ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। যা হাজারো ডেঙ্গু রোগীকে সুস্থ হতে সতায়তা করে। একইভাবে করোনা আতঙ্কেও আমরা পিছিয়ে নেই। ২২ মার্চ থেকে রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড (উত্তরা ও মিরপুর শাখা) করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও টেস্ট প্রদান করা হচ্ছে।

পরিশেষে বলছি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষায় সবার আগে ব্যক্তিকেই উদ্যোগী হতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে টার্গেট একটাই, মানুষকে আতঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না। গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করেই বলেছেন, ঢালাও পরীক্ষা করার মতো অবস্থা আমাদের নেই। বিশ্বের কোনো দেশেরই নেই। তাই যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তারা কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। যদি লক্ষণ দেখা দেয় পরীক্ষা করবে। অথবা তার পরিবার বা তার সঙ্গে মিশেছে এমন কারও লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে কোনো করোনার রোগী ছিল না। বিদেশফেরত এবং তাদের মাধ্যমে তাদের স্বজনরা আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন, এখনো কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়েনি। এমনটা হওয়ার আগেই সব ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো বিপদ বাড়তে পারে। আর তাই প্রতিরোধ গড়তে হবে সম্মিলিতভাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94568 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1