করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। আর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়টি সামনে আসছে। সম্প্রতি জানা গেল, 'আমার ঘরে আমার স্কুল' নামে সংসদ বাংলাদেশ টিভিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক পাঠদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এছাড়া জানা গেছে, পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে মাধ্যমিকের পর প্রাথমিকের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসও সংসদ টিভিতে দেখানো হবে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি। কেননা, সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। ফলে এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে ঘরে বসে শিক্ষার্থীরা যদি কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে তবে তা অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তথ্য মতে, গত রোববার প্রথম দিনে চারটি শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের আটটি ক্লাস করানো হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এসব ক্লাস। এছাড়া কোনো শিক্ষার্থী সকালের দিকে টিভির সামনে বসতে না পারলেও তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ক্লাসগুলো পুনঃপ্রচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উলেস্নখ্য যে, এমনটিও জানা গেছে- করোনাভাইরাসের কারণে ছুটির সময়ের ঘাটতি পূরণে আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তবে ছুটি বাড়লে শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) ২ এপ্রিলের পরও চালানো হবে। সূত্র মতে, মাধ্যমিকপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ছুটির মধ্যে রাজধানী ঢাকার নামিদামি স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস অনুসারে ক্লাস রেকর্ডিং করা হয়েছে। তবে দেশের যেকোনো স্থান থেকেই শিক্ষকরা তাদের নিজ নিজ বিষয়ের ক্লাস ভিডিও করে সরকারের কাছে পাঠাতে পারবেন। এ বিষয়ে দুয়েক দিনের মধ্যে ঘোষণাও আসতে পারে।
আমরা মনে করি, 'আমার ঘরে আমার স্কুল' নামে সংসদ বাংলাদেশ টিভিতে বিষয়ভিত্তিক পাঠদান কর্মসূচির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গত কারণেই এর যথাযথ বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। তবে এ ক্ষেত্রে এটাও মনে রাখা দরকার, সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার বিষয়টিও আমলে নিতে হবে এবং সারাদেশের শিক্ষার্থীরা যেন উপকৃত হতে পারে সেই বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, শিক্ষার্থীদের ঘরে বসে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি সংসদ টিভির মাধ্যমে প্রচারিত ক্লাসগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখা ও আত্মস্থ করার আহ্বান জানান। আমরাও চাই ছুটির সময়গুলো যেন শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার মধ্যে থাকতে পারে সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক।
বলা দরকার, এরই মধ্যে বিশ্বে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ পেরিয়ে গেছে; মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৪ হাজার। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, মারাও গেছে ৫ জন। আর করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং তারা যেন অনলাইনে, টেলিভিশনে শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, 'আমার ঘরে আমার স্কুল' নামে সংসদ বাংলাদেশ টিভিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক পাঠদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে, এটি ইতিবাচক। এখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এটাকে ফলপ্রসূ করতে কার্যকর উদ্যোগ জারি রাখা। একইসঙ্গে দেশের সব শিক্ষার্থীরাই যেন এই সময়ে ঘরে বসে শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে সেটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।