করোনা ঝুঁকিতে পোশাকশিল্প

কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার বিকল্প নেই

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক ক্ষতির যথাযথ হিসাব করা না গেলেও ধীরে ধীরে এ ক্ষতির প্রভাব স্পষ্ট হবে। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক খাত, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, স্বাস্থ্য খাত, সরকারি অর্থায়ন এবং মুদ্রা সরবরাহ ব্যবস্থা, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব এবং পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে মন্দার কবলে পড়বে দেশের অর্থনীতি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশেও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি খাতে বহুমুখী প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সোমবার যায়যায়দিনের খবরে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে পোশাক খাত। বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশের রাজস্ব খাতের সিংহভাগই পূরণ করে থাকে তৈরি পোশাক খাত। সুতরাং রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ক্রমাগত ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ খাতে ঝুঁকির বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে চীন, ইউরোপ ও আমেরিকানির্ভর আমদানি-রপ্তানি কমেছে। চীন থেকে এক মাসের ব্যবধানে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ২৬ শতাংশ। বন্ধের পথে চীন, ইউরোপ ও আমেরিকায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি। জানা যায়, করোনার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে পোশাক খাতে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি রপ্তানি অর্ডার বাতিল হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সংকট যত দীর্ঘায়িত হবে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই অর্থনীতিতে এর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারকে প্রয়োজনীয় পূর্ব প্রস্তুতিসহ জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া এবং জরুরি অবস্থায় জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তারা মনে করছেন, মোকাবিলা করার সক্ষমতার ওপরই অর্থনীতির ধাক্কা সামলানোর বিষয়টি নির্ভর করছে। জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি মনিটরিং করছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তরের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে ন্যাশনাল কমিটি গঠন করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনার কারণে রপ্তানি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। শিল্প রক্ষায় সব ধরনের নীতিগত সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তৎপরতাও রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই খাত রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে আসা বিপুলসংখ্যক প্রবাসী কাজে যোগ দিতে না পারলে রেমিট্যান্স আহরণে বড় ধরনের ঝুঁকি আসবে। বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকা। দুঃখজনক যে, এসব দেশে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত হওয়ায় তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়া, হিমায়িত মাছ, পস্নাস্টিক পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং শাক-সবজি রপ্তানিও বন্ধ হওয়ার পথে। বলাই বাহুল্য, ভাইরাসটির কারণে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। জার্মানিও ধুঁকছে। দেশগুলোতে নিত্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাইরে বের হচ্ছে না। অনেক পোশাকের ব্র্যান্ড তাদের শত শত বিক্রয়কেন্দ্র ঘোষণা দিয়ে বন্ধ রেখেছে। ফলে এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণ করতে হবে দেশের নীতিনির্ধারকদেরই। উলেস্নখ্য, ২০০৮ সালে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ বেশ আত্মতৃপ্তিতে ছিল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ বলেই সবাই আশঙ্কা করছেন। সঙ্গত কারণেই রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থনীতির এই উৎকণ্ঠার মধ্যে করণীয় কী তা নির্ধারণ করতে হবে। তবে প্রথম কাজটি হবে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমাতে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যও যথাযথ পরিকল্পনা জরুরি। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ রয়েছে যাতে কারখানা বন্ধ না হয়। এখন সরকারকে এ ব্যাপারে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে। আর সামগ্রিকভাবে দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা নেওয়াসহ খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবায় জোর দেওয়াসহ যেসব সুপারিশ করেছেন বিশ্লেষকরা সরকার তা আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।