করোনায় চিকিৎসা প্রাপ্তিতে উদ্বেগ

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনার চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। ফলে সংশ্লিষ্টদের উচিৎ, বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে নিয়ে পরিস্থিতি নিরসনে কাজ করা। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোই যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে দুর্বল স্বাস্থ্য সেবাব্যবস্থা ও নাজুক প্রস্তুতি নিয়ে দেশের চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা কীভাবে এ মরণব্যাধি মোকাবিলা করবেন তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-আতঙ্ক হুহু করে বাড়ছে। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার উপসর্গ নিয়ে বিনা চিকিৎসায় একের পর এক সন্দেহভাজন রোগীর মৃতু্য এবং অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে অস্বীকৃতির খবর বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মনে নানা ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে এটাও আমলে নেওয়া দরকার, জেলা শহরগুলোতে করোনা চিকিৎসায় চিকিৎসক-নার্সদের পলায়নপর মনোভাবের সংবাদ প্রকাশ পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় যদি দেশের মানুষের ভেতর অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্ক সৃষ্টি হয় তবে তা ইতিবাচক হবে না। যদিও স্বাস্থ্য প্রশাসন দাবি করেছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। দেশের কোথাও বিনা চিকিৎসায় কোনো রোগীও মারা যায়নি। চিকিৎসক-নার্সদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকু্যইপমেন্ট (পিপিই) মজুত রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও আমলে নেওয়া দরকার, প্রশাসনের এ দাবির সঙ্গে চিকিৎসকদের বক্তব্যের যে বিশাল ফারাক রয়েছে, তা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে- এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কুয়েত মৈত্রী, মিরপুর মেটারনিটি, সাজিদা ফাউন্ডেশন, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার (জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল) মহানগর জেনারেল, বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল কমলাপুর, কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ (শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট) রাজধানীতেই যে দশটি হাসপাতাল করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করার কথা বলা হয়েছে, সেখানে সবচেয়ে জরুরি ভেন্টিলেটরের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অভিজ্ঞ চিকিৎসক নেই বললেই চলে- এমনটিও জানা গেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। প্রসঙ্গত উলেস্নখ করা দরকার, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ মহাসচিব বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। রোগী বাড়লে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত পরীক্ষার কিট মজুত রাখা, সংকট কাটানোর সক্ষমতা অর্জন- এসব ক্ষেত্রে কোনো প্রস্তুতি নেই স্বাস্থ্য খাতের, এমনটিও বলেছেন। ফলে আমরা মনে করি, যদি কোনো ধরনের ঘাটতি থেকে থাকে তা পূরণ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের কারণে জ্বর বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত অনেক রোগীকে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে সেখানেও পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না থাকায় অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় আরও মুমূর্ষু হয়ে পড়ছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে চিকিৎসা করছেন না বলে স্বীকার করেন তারা। আমরা বলতে চাই, একদিকে করোনাভাইরাসের মহামারিতে সারা বিশ্বের মানুষ ভীত, অন্যদিকে যদি সার্বিক প্রেক্ষাপটে যথাযথ প্রস্তুতি নিশ্চিত না হয় এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসা না মেলে তবে বিষয়টি উৎকণ্ঠার। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রম্নত উদ্যোগ নেওয়ার বিকল্প নেই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, জ্বর-সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ আইইডিসিআরে করোনা পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হয়ে তারা রাজধানীর খ্যাতনামা সরকারি হাসপাতালগুলোতেও কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না- এমনটিও খবরে উঠে এসেছে, যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া জানা যাচ্ছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে কেউ হাসপাতালে এলে গোটা ক্যাম্পাসের চিকিৎসক-নার্সদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া, চিকিৎসা দেওয়া দূরে থাক, কীভাবে দ্রম্নত হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া যায় সবাই মিলে সে চেষ্টার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এই অবস্থা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে, যার কোনো বিকল্প নেই।