ভাইরাস থেকে বাঁচতে ইসলামের নির্দেশনা

রোগ-মহামারি কিংবা দুর্যোগ বান্দাদের পরীক্ষা করতে বিভিন্ন সময় আলস্নাহতায়ালার পক্ষ থেকে আসে। (সূরা বাকারা: ১৫৫) তাই এ সময়ে সবার উচিত ধৈর্যধারণ করা, আলস্নাহতায়ালার ওপর বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় করা এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

মাওলানা আনোয়ার-উল-করিম
আসুক যত করোনা, মুসলিম কভু ডরে না/ আল কোরআনের অনুসারী মহামারিতে মরে না। হঁ্যা, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এখন আন্তর্জাতিক মহামারি। কিন্তু ইসলামের বিধিবিধান পালনকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। আলস্নাহতায়ালা তাদের অবশ্যই এসব মরণব্যাধি থেকে হেফাজত করবেন। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস বিশ্বের ১৯৪টি দেশে ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চীনসহ বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ে। সর্বশেষ ৮ মার্চ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশেও এর অস্তিত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। প্রথমদিকে এতে তিনজনের আক্রান্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। তবে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন। কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। দিন যত যাচ্ছে ততই এটি ভয়ানক আকার ধারণ করছে। এমনকি গবেষকরা এটি যেভাবে শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছেন, সেভাবে এটি আক্রমণ করলে গোটা পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানবের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের একজন ইসলামী চিন্তাবিদ ইতালির জনৈক ব্যক্তির স্বপ্নের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, অতি শিগগিরই এই করোনা আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে শক্তিশালী হয়ে আঘাত হানবে। তবে আমাদের জন্য রয়েছে তুলনামূলকভাবে সুসংবাদ। আমাদের দেশে এটির আঘাত হবে দুর্বল। কারণ এ দেশের মানুষ নিয়মিত ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। বায়তুলস্নাহর খতিব আবদুর রহমান সুদাইসীসহ বিশ্বের দার্শনিক ও গবেষকরা বলেছেন, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মধ্যেই করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির প্রধানতম উপকরণ রয়েছে। এ কারণে ওলামা মাশায়েখ ও ইসলামী চিন্তাবিদরা কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। রোগ-মহামারি কিংবা দুর্যোগ বান্দাদের পরীক্ষা করতে বিভিন্ন সময় আলস্নাহতায়ালার পক্ষ থেকে আসে। (সূরা বাকারা: ১৫৫) তাই এ সময়ে সবার উচিত ধৈর্যধারণ করা, আলস্নাহতায়ালার ওপর বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় করা এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। বিভিন্ন শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী এমন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। মহানবীর (স.) সময়েও মহামারি রোগ ছড়িয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ করেছেন, যদি তোমরা মহামারির কোনো সংবাদ শোনো, তাহলে সেখানে প্রবেশ থেকে বিরত থাকো। আর যদি কোনো শহরে বা নগরে কেউ সে মহামারিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে সেখান থেকে তোমরা বের হয়ো না। (বুখারি, হাদিস নং ৫৩৯৬) পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে সবকিছু আলস্নাহতায়ালার ইচ্ছাতেই ঘটে। সবকিছুর কারণ ও প্রতিকার বুঝতে আমরা সামর্থ্য রাখি না। তাই এ মুহূর্তে আমাদের উচিত মসজিদে ও ঘরে সম্মিলিত কিংবা একাকীভাবে দোয়ার আমল করা। করোনাভাইরাসসহ সব ধরনের রোগ থেকে পরিত্রাণ চাওয়া। প্রত্যেক মসজিদে ফজর নামাজে 'কুনুতে নাজেলা' পরা। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (স.) ফজরের নামাজের সময় কোনো জাতির জন্য দোয়া করতে কুনুতে নাজেলা পরতেন। (তিরমিজি, হাদিস নং ৪০১) সর্বাবস্থায় নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখুন। দুই হাত ধৌত করুন। সবসময় অজু অবস্থায় থাকতে চেষ্টা করুন। ময়লা আবর্জনার মাধ্যমে কোনো ব্যাধি যেন না ছড়ায় সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রোগ নিরাময়ে সহযোগী এবং একটি সুন্নাহসম্মত কাজ। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের ব্যক্তিগত হাইপিংটা কন্ট্রোল করতে হবে। কারণ সব ঠান্ডা-কাশিই করোনাভাইরাস নয়। তবে এ ক্ষেত্রে একটু নিয়ম মেনে চলতে হবে। কাশি দেওয়ার সময় হাতটা মুখ থেকে দূরে রাখতে হবে। সবসময় কাছে টিসু্য পেপার রাখতে হবে। যখন হাঁচি-কাশি দেবে তখন টিসু্য ব্যবহার করবে এবং তা ফেলে দেবে। একই টিসু্য দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যাবে না। সাবান দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ফেনা করে ভালোভাবে হাতটা পরিষ্কার করতে হবে। যেখানে-সেখানে থুথু ফেলা থেকেও বিরত থাকতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। একটা মাস্ক যেন দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করা না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেহেতু সবাই একসঙ্গে থাকে, মেঝেতে সবাই একসঙ্গে ঘুমায়, এ ক্ষেত্রে কারও জ্বর বা ঠান্ডা-কাশি হলে তাকে আলাদা কোনো রুমে শিফট করা উচিত। একটু সচেতনতার মাধ্যমে অসুস্থদের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করতে হবে। যখনই সন্দেহ হবে কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে, তখনই স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মসজিদুল হারামের খতিব আবদুর রহমান সুদাইসী ৮ মার্চ এশার নামাজের পর কাবা চত্বরে বয়ান করেছেন। তিনি উপস্থিত লোকদের উদ্দেশে বলেন, হে আমার মুসলমান ভাইয়েরা, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ ভাইরাস আলস্নাহর হেকমতেই কার্যকর হয় এবং তার কুদরতেই উপনীত হয়। এটা আলস্নাহর পক্ষ থেকে এক পরীক্ষা। যাতে বান্দা আলস্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তিনি বলেন, কোনোক্রমেই আলস্নাহর প্রতি আস্থাহীন হওয়া মানুষের জন্য উচিত নয়। বরং আবশ্যক হলো তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করা। তার ওপর ভরসা রাখা ও দোয়া করা। যাতে আলস্নাহ এ ভাইরাস ও মহামারি থেকে মুসলমানদের হেফাজত করেন। সৌদি সরকার হারামাইন শরিফাইনে সাময়িকভাবে কিছুদিনের জন্য ওমরা স্থগিত রাখা ও রাতে মাতাফ বন্ধ রাখাসহ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যাতে এ দেশ (সৌদি আরব) এবং অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে এ ভাইরাস ওমরার মাধ্যমে না ছড়াতে পারে। সৌদি সরকারের এ পদক্ষেপটি হারামাইন শরিফাইন এবং ওমরাকারী ও পরিদর্শনকারীদের সুরক্ষার জন্য জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অস্থির, দুশ্চিন্তা ও ভয় না করে আলস্নাহর সন্তুষ্টি ও তার রহমতের আশা করতে হবে। মাওলানা আনোয়ার-উল-করিম : মুহাদ্দিস ও প্রাবন্ধিক