পাঠক মত

করোনা মোকাবিলায় করণীয়

প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সরকার হোমকোয়ারেন্টিনের সময় বাড়িয়েছে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। আমেরিকা, ভারতসহ বেশকিছু উন্নত দেশও এই সময়সীমা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণ কঠোরভাবে মেনে চলছেন এই হোমকোয়ারেন্টিন। আর আমরা বাংলাদেশের মানুষ পাত্তাই দিচ্ছি না করোনাকে। একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবুনতো- চীন, আমেরিকা, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনের মতো উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের স্বাস্থ্য সেবার মান যেখানে ১% আর মানুষের ঘনত্ব কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো করোনা সেখানেই বেশি ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে যেখানে মানুষের ঘনত্ব বেশি। এই কারণেই সকল প্রকার সভা-সমাবেশ বা সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর ঘনবসতির কারণে রোগ ছড়ানোর দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক বেশি ঝুঁকিতে আছে। আমরা যদি সচেতন না হই তবে আমাদের অবস্থা ইতালি-আমেরিকার চেয়েও বেশি ভয়াবহ হবে। এই এপ্রিলের মধ্যে কম করে হলেও ২ লাখ লোক আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না! আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার যা অবস্থা তাতে করে এত লোকের তো দূরের কথা এর সিকিভাগ লোকের চিকিৎসা করার ক্ষমতাও আমাদের নেই। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি নিউজ বলছে, গতকাল পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ৪টি হাসপাতালের মধ্যে এখনো পর্যন্ত ২টি হাসপাতালে করোনা রোগ নির্ণয় করার কিটই পৌঁছায়নি, আর বেসরকারি হাসপাতালেতো প্রশ্নই ওঠে না। এবার বুঝুন অবস্থা! ১৫ এপ্রিলের পরে আমাদের জন্য একটা ভয়ঙ্কর সময় অপেক্ষা করছে। একদিকে যেমন করোনার আক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ছে (আমাদের অসচেতনতার কারণে) অন্যদিকে নিম্নআয়ের মানুষগুলো পেটের তাড়নায় সব আইন ভেঙে বেরিয়ে আসবে বাইরে। কারণ তাদেরকে ঘরে আটকে রাখার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আমাদের নেই। এই মানুষগুলো বাইরে বেরিয়ে আসলে কি ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হবে তা কি ভাবতে পারছেন একবারও? করোনা মহামারি শুরু হয়ে যাবে। এই মানুষগুলোইবা কতদিন অভুক্ত থাকবে? এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের মুক্তির উপায় ৬টি। ১. অন্যান্য খাতে ব্যয় আপাতত কমিয়ে এনে চিকিৎসা ও ত্রাণ খাতে বরাদ্দ কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। ২. নিম্নআয়ের মানুষগুলোকে প্রয়োজনীয় খাদ্য বরাদ্দ করে ঘরে আটকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. এই পর্যন্ত প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসা সব আত্মগোপন হওয়া লোকদের খুঁজে বের করে সরকারের নিজস্ব কোয়ারেন্টিনে নিয়ে রাখতে হবে। ৪. যত দ্রম্নত সম্ভব ঢাকাসহ সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে রোগ নির্ণয় করা কিট পৌঁছাতে হবে ও হাসপাতালগুলোকে করোনা রোগীর চিকিৎসার উপযোগী করতে হবে। ৫. দেশের সব ডাক্তারকে প্রয়োজনীয় পিপিই বরাদ্দ করতে হবে। ৬. জনসাধারণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং সরকার কর্তৃক সব নিয়ম মেনে চলতে হবে। এই ৬টি বিষয় যদি নিশ্চিত করা যায় তবেই করোনা মহামারি ঠেকানো সম্ভব। বাংলাদেশের সব নাগরিকের কাছে বিনীত অনুরোধ- নিজেকে বাঁচাতে হবে, বাঁচাতে হবে নিজের পরিবারকে, বাঁচাতে হবে দেশকে। তাই ঘরেই থাকুন। এন, আমিন বুলেট জাজিরা, শরীয়তপুর আত্মসমালোচনাই বুদ্ধিমানের কাজ সামাজিক প্রাণী হিসেবে সমাজে বাঁচতে হলে আমাদের নির্ভুলতা আর ভুলের শত সহস্র অবস্থা ডিঙিয়ে মাড়িয়ে নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে হয়। নির্ভুলতাগুলোকে সহজেই পাশ কাটিয়ে যাই আমরা! আর ভুল এবং অসঙ্গতিগুলোই বাঁচে শক্তপোক্ত ভাবে। পারিপার্শ্বিকতা অনুভব করলে অনুধাবন করা যায়, সমাজের অবস্থানটা এমন পর্যায়ে গেছে যে, সামান্য অসঙ্গতিমূলক কার্যকলাপের প্রকাশ এবং প্রচারে সমালোচনার পালস্না ভারী হয়ে অন্যপর্যায়ে চলে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে তা আরও বেশি। অন্যের সমালোচনা করতে করতে আমরা ভুলেই যাই যে, আমরাও ভুলের ঊর্ধ্বে নই! যে অনৈতিক কার্যকলাপ অন্যের দ্বারা ঘটছে সেগুলো আমাদের দ্বারাও ঘটতে পারে। এর অন্যতম কারণ হতে পারে আত্মকেন্দ্রিকতা? কারণ নিজেদের করা ভুলগুলো আমাদের চোখে পড়ে না। অথবা চোখে ধরা দিলেও আমরা এড়িয়ে চলতে চাই। যেমন- নোংরা রাস্তা দেখলে আমরা সমালোচনায় বসে যাই অথচ কত সময় আমরাই আনমনে অথবা ইচ্ছা করেই ব্যবহৃত অনেক কিছু ফেলি চলার পথে। ফুওভার ব্রিজ ব্যবহার না করেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হই আবার দোষ দিয়ে ফেলি সিস্টেমকে? এভাবে নিত্যদিনই আরও অনেক অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দ্বারাই ঘটে যাচ্ছে অসামাজিক এবং ভুল কার্যকলাপ। দেশটা আমাদের; সমাজটা আমাদের; বসবাস করতে হবে আমাদেরই সেই সঙ্গে বসবাস উপযোগী করে যেতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য। অন্যের দোষ-ত্রম্নটি কম খুঁজে আমরা যদি আজ থেকেই নিজেদের কাজকে সংযত করি এবং কর্তব্যকে যথাযথ পালন করি, সমাজ আমাদের উপহার দেবে সুস্থ এবং সঙ্গত জীবনধারা! চলুন আমরা অন্যের সমালোচনায় না ভেসে আত্মসমালোচনার দ্বারা আত্মশুদ্ধি সাধন করি। বসবাস করি একটি সুস্থ এবং নির্মল সমাজে! মিতা কলমদার লোকপ্রশাসন বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়