ত্রাণ নেওয়ার ভিড়ে ঝুঁকি বাড়ছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হোক

প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের কথা বলা হলেও তা মানছেন না সাধারণ মানুষ। করোনাভাইরাস মহামারি আকারে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশের মানুষকে কিছুতেই যেন সচেতন করা যাচ্ছে না। করোনা প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহণ বন্ধ করাসহ দীর্ঘমেয়াদি ছুটি ঘোষণা করায় নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছেন বেকায়দায়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার গলি-ঘুপচি থেকে তারা বেরিয়ে আসছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহলে এলে মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে পড়ছে এলাকা। এরপর যথারীতি চলছে আগের মতোই আড্ডা, মেলামেশা। কেউ প্রয়োজনে, কেউ অপ্রয়োজনেও বের হচ্ছেন। এতে যাদের বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে আসতে হচ্ছে তারাও পড়ছেন বেকায়দায়। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সবকিছু বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের দুর্দশা অবর্ণনীয়। এ জন্য ত্রাণের কথা শুনলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সবাই। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে কমিউনিটি পর্যায়ে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, কয়েকদিন ধরেই ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এসব সাহায্য পেতে ছুটে আসছেন সবাই। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময় মারামারির ঘটনাও ঘটে। যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে এ ধরনের ঘটনা যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সামান্য খাদ্যসামগ্রী সাহায্য দিতে নিম্নআয়ের লাখ লাখ মানুষকে যেভাবে দফায় দফায় জড়ো করা হচ্ছে, তাতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদি ছুটি দিয়ে করোনা প্রতিরোধের টার্গেট পুরোটাই ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের ভাষ্য, ত্রাণসামগ্রী পেতে যারা মুখে মাস্ক কিংবা কোনো কাপড় না বেঁধেই দলবদ্ধভাবে এ জায়গায় ও জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছে, তাদের মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত থাকলে এ মরণব্যাধি দ্রম্নত শত শত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে তালিকা অনুযায়ী অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন তারা। বলার অপেক্ষা রাখে না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর। তারা বিভিন্নভাবে জনগণকে তাগিদ দিচ্ছে। তারা রাস্তাঘাটে টহল গাড়ি থামিয়ে অযথা ঘোরাঘুরি করা লোকজনকে ঘরে ফিরতে অনুরোধ করছে। পাড়া-মহলস্নার অলিগলিতে জড়ো হওয়া তরুণদের আড্ডা ভাঙতে প্রয়োজনে লাঠিচার্জ করছে। ফলে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার নামে শত শত মানুষকে একস্থানে হাজির করে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। বিশ্লেষকদের মতে, গোটা দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা এখনো নিয়ন্ত্রণে। তবে লকডাউন ব্যবস্থা সার্বিকভাবে সফল করা না গেলে গোটা পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যে কোনো মূল্যে সামাজিক দূরত্ব কার্যকর করা এখন জরুরি। বিশ্লেষকদের দাবি, ফটোসেশনের ত্রাণ এখন গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের উদাসীনতায় প্রাণঘাতী করোনা একবার কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়লে ফল মারাত্মক হবে বলে সতর্ক করেন তারা। সর্বোপরি বলতে চাই, করোনাভাইরাস যেহেতু শারীরিকভাবে ছড়ায় সুতরাং মনে রাখা দরকার, অপরিকল্পিতভাবে ত্রাণ বিতরণের এই চিত্র ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা এখন প্রধান কৌশল হিসেবে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এই কৌশল বাস্তবায়নে দরিদ্র এবং নিম্নআয়ের মানুষের সহায়তা দেওয়া নিঃসন্দেহে একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা মনে করি, যারা সহায়তা দিতে চান তারা তাদের ত্রাণসামগ্রী সরকারের ত্রাণ ভান্ডারে জমা দিতে পারেন। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণের যে দাবি উঠেছে সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। কোনো দরিদ্র মানুষ যেন খাদ্যসহায়তা থেকে বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।