শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাবিরোধী লড়াই: আমরা যেন হেরে না যাই

গুজব সৃষ্টিকারী একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সত্যতা যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, সরকারের এ পদক্ষেপ গুজব সৃষ্টিকারীদের অপতৎপরতা রোধ করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার অতীতে অনেক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। যারা এমন অপকর্মে লিপ্ত তাদের নখর ভাঙতে হবে। যারা মানুষের মনোবল ভাঙতে চায় তাদের প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সমাজের সবাই সচেতন হবেন-এমনটিই প্রত্যাশিত।
আর কে চৌধুরী
  ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস ঠেকাতে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ছে। সেনাসদস্যরা টইল দিচ্ছেন রাজপথে। মানুষকে নিরাপত্তা শুধু নয়- কীভাবে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যাবে সে পরামর্শও দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর। জাতীয় দুর্যোগের দিনে তারা সাধারণ মানুষের বন্ধু হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছে। কোথাও কোথাও ঘরবন্দি মানুষের কাছে নিত্যপণ্য পৌঁছে দিচ্ছে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবচেয়ে সামনের সৈনিক যারা সেই ডাক্তার-নার্সরা এখনো সত্যিকার অর্থেই অসহায় অবস্থায়। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পর্যাপ্ত না থাকায় তারা আতঙ্কের মধ্যে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে করোনাভাইরাস মোকাবিলা নয়, যে কোনো রোগের চিকিৎসায় কার্যত অচলাবস্থা চলছে। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা পিপিই না পেলেও জেলা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে পিপিই পরে ফটোসেশনের হিড়িক পড়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পিপিই দেওয়া এ মুহূর্তের কতটা জরুরি? বরং যারা সরাসরি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেবে সে সব চিকিৎসক, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়কে সুরক্ষার জন্য পিপিই দেওয়া দরকার। পিপিই কোনো ফটোসেশনের সামগ্রী নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী পিপিই সরবরাহের চেষ্টা চলছে এ কথা ঠিক। কিন্তু এই জরুরি সামগ্রীর যথেচ্ছ ব্যবহার হলে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা ঝুঁকিতে পড়বেন। তাই সময় থাকতেই এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া সমীচীন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পরও এ নিয়ে অপরাজনীতির প্রবণতা চললেও এখন দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের ঐক্যবদ্ধভাবে করোনাভাইরাস ঠেকাতে হবে। ঘরবন্দি গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে সরকার সাধ্যমতো হাত বাড়ালেও ধনী ও সম্পদশালী অনেকেই দায়হীন ভূমিকা পালন করছেন। তাদের সাহায্য বা এগিয়ে আসা চোখে পড়ছে না। রাজনীতির যেসব হাইব্রিড নেতা নিজেদের জনদরদি হিসেবে প্রমাণের জন্য পোস্টার লাগিয়ে নগর, শহর, গঞ্জের দেয়াল নোংরা করতেন তাদেরও পাশে পাচ্ছে না গরিব মানুষ। বিপদে নাকি বন্ধু চেনা যায়। হাইব্রিডদের সম্পর্কে দেশবাসী সতর্ক হলে সেটি আশীর্বাদ বলে বিবেচিত হবে। এ ব্যাপারে সরকারকেও সচেতন হতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ভাইরাস চিহ্নিত করার সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। দুটোরই সরবরাহ যথেষ্ট থাকতে হবে।

এদিকে করোনাভাইরাস নিয়েও একশ্রেণির মতলববাজ উঠেপড়ে লেগেছে গুজব ছড়ানোর কাজে। যারা গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মনোবল নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে নিজেদের বাহাদুরি ফলাতে চাচ্ছে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষ যাতে সঠিক পথের বদলে কুসংস্কারের কবলে পড়ে সে জন্য ছড়ানো হচ্ছে আজগুবি তত্ত্ব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে এ জন্য যথেচ্ছ ব্যবহার করছে অর্ধশিক্ষিত এবং মতলববাজরা। কেউ কেউ বলছে রসুন, লবঙ্গ, আদাজল খেলে করোনাভাইরাস ভালো হয়। আবার কেউ থানকুনি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার তত্ত্ব হাজির করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গুজব ছড়ানো হয়েছে, করোনার কারণে ফ্রিজে কাঁচা মাছ, মাংস রাখলে বাড়ি গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফ্রিজ ভেঙে দেবে। গাইবান্ধার মাঠের হাটে মাইকিং করে গুজব ছড়ানো হয়েছে- করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে কালোজিরা, আদা ও গোলমরিচ বেটে খেতে হবে। রংপুর ও দিনাজপুরে গুজব রটনাকারীদের আবিষ্কার- লবঙ্গ, সাদা এলাচ, আদা পানিতে সিদ্ধ করে খেলে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবে না। গুজব ছড়ানো হয় মাঝরাতে আজান দিলে করোনাভাইরাস হবে না।

ইসলামী বিধানে মহামারিকালে ঘরে থাকার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। রসুল (সা.) তার জমানায় এটি অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার অবশ্য দেরিতে হলেও গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুজব ছড়ালেই আইনিব্যবস্থা নিয়ে গ্রেপ্তার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে কাজও শুরু করেছে বিভিন্ন সংস্থা।

গুজব সৃষ্টিকারী একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সত্যতা যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, সরকারের এ পদক্ষেপ গুজব সৃষ্টিকারীদের অপতৎপরতা রোধ করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার অতীতে অনেক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। যারা এমন অপকর্মে লিপ্ত তাদের নখর ভাঙতে হবে। যারা মানুষের মনোবল ভাঙতে চায় তাদের প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সমাজের সবাই সচেতন হবেন-এমনটিই প্রত্যাশিত।

প্রতি বছরই ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ঘটে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ঘরে ঘরে প্রবেশ করে মশা মারা মেয়রদ্বয়ের কাজ নয় অবশ্যই; তবে জলাবদ্ধতা অপরিচ্ছন্ন মহানগরীর নালা-নর্দমা-পয়োবর্জ্য-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মশা-মাছির ওষুধ ছিটানো দুই সিটির অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য বটে। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি ও শিথিলতা দেখা যায়।

প্রচলিত ওষুধে মশা মরছে না। নতুন ওষুধ আনতে হবে। করোনা মোকাবেলায় সরকারের সফলতা অনেক। ডেঙ্গু মোকাবিলায়ও সফলতা দেখাতে হবে। বর্তমান বিশ্ব একটি অস্থির পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি, মারামারি, রক্তারক্তি না থাকলেও করোনা আতঙ্কে নাস্তানাবুদ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। করোনার পাশাপাশি বাড়তি উপদ্রব নিত্যনতুন রোগব্যাধি, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, এইচআইভি এইডস, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, অ্যানথ্রাক্স, ইবোলা ভাইরাস, জিকা ভাইরাস ইত্যাদি। পুরনো ওষুধবিষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক ও প্রতিষেধক বাতিল হয়ে যাচ্ছে। সে অবস্থায় নতুন রোগব্যাধির বিরুদ্ধে নতুন প্রতিষেধক আবিষ্কার এখন সময়ের দাবি।

আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95143 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1