বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃত ক্ষুধার্তরা খাবার পাচ্ছে তো?

আসুন আমরা একটু মানবিক হই, মানবতার পরশ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিই। সরকার এবং প্রশাসন যথেষ্ট চেষ্টা করছে সবার ক্ষুধা দূর করতে। অভুক্ত কাউকেই রাখতে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন প্রতিটি সমাজ, ওয়ার্ডভিত্তিক সহযোগিতা। রাতের আঁধারে হলেও সেসব মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে হবে।
আজহার মাহমুদ
  ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস, এক মহামারির নাম। কোনো অস্ত্র, বোমা-বারুদ ছাড়া পুরো পৃথিবী যার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। বলা যায় এক মহাযুদ্ধ। প্রতিদিন মৃতু্যর সংখ্যা ভারি হচ্ছে। মানুষ যেন দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ এই ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশের সব অফিস, কারখানাসহ সমস্ত কিছু বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। মানুষ আজ ঘরে বন্দি হয়ে থাকছে। সমস্ত আয়ের পথ বন্ধ। দিনমজুর, রিকশাচালক, হকার, ছোট ছোট চায়ের দোকানদার, রাস্তায় হেঁটে হেঁটে যারা পান-সিগারেট বিক্রি করে সবার ঘরে আজ চলছে যুদ্ধ। এসব মানুষ কি দু'বেলা ঠিক মতো খাবার পাচ্ছে? প্রশ্নটার উত্তর কে দেবে সেটাও অজানা।

আমি হলফ করে বলতে পারি সবাই পাচ্ছে না। কেউ কেউ করোনার চেয়ে ক্ষুধার্তকেই ভয় বেশি পাচ্ছে। এক রিকশাচালক তো বলেই ফেলেছে, 'আমি করোনায় নয়, ক্ষুধায় মরব'। সরকার এসব মানুষের জন্য ত্রাণ দিচ্ছে। ত্রাণ দিচ্ছেন বিভিন্ন সংগঠন, বিত্তবান মানুষও। তবুও যেন কোথাও কেউ একজন ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে। তাই আমার কাছে মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য কথাটি মিথ্যে মনে হয়। ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি এই বাক্যটি। এখনো মানুষের মাঝে প্রচলিত আছে এই বাক্য। শুধু নেই বাক্যটির সঠিক চর্চা। যেখানে মানবতা আর মনুষ্যত্ব লোপ পেয়েছে সেখানে জীবনের জন্য জীবন কে দেবে?

আমরা লোক দেখানোর জন্য মানুষকে ত্রাণ দিলেও সবার মাঝে পৌঁছে দিতে পারছি না সেসব ত্রাণ। খবর নিচ্ছি না কারা ক্ষুধার্ত। কাদের প্রয়োজন ত্রাণ? এই হিসাবটা না করে বেহিসাবি মতো সবাই ভাগবণ্টন করে খাদ্য লুটপাট করার নামই কী হচ্ছে ত্রাণ। সরকারের পক্ষ থেকে আসা ত্রাণ সঠিকভাবে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না সে হিসাব আমরা রাখছি না। কিছু মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে আবার কিছু মানুষ গরীবের হক নষ্ট করছে।

আমাদের উচিত এই অসময়ে প্রকৃত মানুষকে সাহায্য করা। যাকে তাকে ত্রাণ দিয়ে প্রকৃত মানুষকে বঞ্চিত না করাই প্রকৃত কাজ। অনেকেই হয়তো লজ্জায় বলতে পারছে না তার ঘরে খাবার নেই। তবে আমাদের উচিত এসব মানুষকে খুঁজে বের করে তাদের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া। আমাদের আশপাশের মানুষ কিন্তু জানে কার ঘরে কী অবস্থা। তবুও যেন কেউ কারও নয়। কারও জন্য কারও মায়া এ সমাজে নেই বললেই চলে। নিষ্ঠুর এ সমাজে যারাই মানুষের উপকারে কাজ করে তাদের পেছনেও নোংরা কিছু মানুষ লেগে থাকে। হাজারও মিথ্যা অপবাদ ছড়ানোর মাধ্যমে ভালো কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা করে এসব মানুষ। তবুও ভালো কাজের মানুষ পৃথিবীতে থাকবে এবং মানুষের জন্য কাজ করবে। তবে সংখ্যা দিন দিন কমছে। যেখানে দিন দিন ভালো কাজের মানুষ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা সেখানে কমে যাওয়াটা ভালো লক্ষণ নয়।

শুধু তা-ই নয়, এখন নিষ্ঠা আর সততা খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। যেখানে অসহায় গরিবদের ত্রাণ তারা সঠিকভাবে পাচ্ছে না সেখানে সততা আর নিষ্ঠা খুঁজতে যাওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দেশে ছোট থেকে বড় সমস্ত কাজে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। সেটা হোক গরিবের ত্রাণ কিংবা জনগণের উন্নয়নের টাকা। দুর্নীতি হবেই হবে। আর এই দুর্নীতির জন্যই দেশ যতটা এগিয়ে যাওয়ার কথা ততটা এগিয়ে যেতে পারছে না।

আজ গরিব-দিনমজুরের ঘরে হাহাকার। সন্তানের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য বাবা পাগল হয়ে উঠেছে। ঘরে স্ত্রী-সন্তান না খেয়ে আছে এই যন্ত্রণা নিয়ে স্বামী রিকশা নিয়ে বের হচ্ছে। আর পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়ে ঘরে ফিরছে। এই হচ্ছে আমাদের মানবতা। এই হচ্ছে সোনার বাংলা। পকেটে টাকা নেই, ঘরে চাল নেই ডাল নেই। কে দেবে আহার? এমন প্রশ্ন নিয়ে কাজ খুঁজতে যাওয়া দিনমজুর পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ঘরে ফিরেছে। সন্তান যখন প্রশ্ন করে, বাবা খাবার এনেছ? তখন হয়তো বাবার চোখের অশ্রম্ন বিসর্জন দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। কি আর করতে পারে! ভিক্ষা? ভিক্ষুকরাও বোধহয় রাস্তায় থাকতে পারছে না। আর ভিক্ষা দেবে কে? রাস্তায় তো মানুষই নেই। আর এখন যে পরিস্থিতি সেটা হচ্ছে আমি ভালো আছি তাতেই যথেষ্ট। কে কেমন আছে সেটা দেখবার সময় নেই। বলা যায়- ইয়া নাফছি ইয়া নাফছি করার যুগ এখন। সবাই এখন তেমনই করছে।

মাস চারেক আগের কথা। আমি রাতে আর দুপুরে ভাত খাইনি। সকালে নাস্তাও করিনি। শুধু পানি পান করেই আছি। বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ। বিকেলে খেলতে এসেছি মাঠে। শরীর খুব ক্লান্ত। আমার এক বন্ধু দেখেই বুঝেছে। জিজ্ঞাস করেছে কি হয়েছে? তোর চেহারা বলছে কিছু একটা হয়েছে। আমি তাকে সবকিছু বললাম। তারপর সে আমায় বললো চল আমার বাসায় ভাত খাবি। আমি বললাম না। সে আমায় তখন বললো এখন কেউ না খেয়ে থাকলেও কারও খবর নেয় না। কেউ খাইনি বললেও বলে না আমার কাছে আছে খাও। আমি তোর ক্লোজ বন্ধু তাই বলছি। তার ওই কথাটা তখন হেসে উড়িয়ে দিলেও বাস্তবতা ঠিক তেমন। এতে এটা বোঝা যায় যে, এখন মানুষের ভেতর মনুষ্যত্ব আর মানবতা হারিয়ে গেছে।

আসুন আমরা একটু মানবিক হই, মানবতার পরশ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিই। সরকার এবং প্রশাসন যথেষ্ট চেষ্টা করছে সবার ক্ষুধা দূর করতে। অভুক্ত কাউকেই রাখতে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন প্রতিটি সমাজ, ওয়ার্ড়ভিত্তিক সহযোগিতা। রাতের আঁধারে হলেও সেসব মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে হবে।

আজহার মাহমুদ: প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95145 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1