পাঠক মত

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ হোম কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্ব অপরিহার্য

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মহামারি করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য আমাদের সচেতনতা হওয়ার বিকল্প কোনো কিছুই নেই। আমরা নিজেরা সচেতন হলে এই ঘাতক ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। আর সেই লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংস্থার লোকজন করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার জন্য ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছে। সরকার আইন করে দেশের বিভিন্ন জায়গা লগডাউন ঘোষণা করছে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য আবেদন-নিবেদন করে যাচ্ছে। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা বিছিন্ন করার জন্য সারা দেশে সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনী কাজে লাগাচ্ছে। তারপরও মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসেনি। যে যার যার মতো করে চলছে। করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের অধিকাংশই হোম কোয়ারেন্টিন মানছে না। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তাও অনেকে মানছে না। করোনা প্রতিরোধে এ দুটি উদ্যোগ অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হলেও আমাদের দেশে এর অমান্যতা ও লংঘন সঙ্গত কারণেই ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। এক মাসে লাখ লাখ প্রবাসী এসেছে। সারা দেশে তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে। এখন এদের অধিকাংশেরই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, মার্চ মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ২৪০ জন বিদেশ থেকে ফেরত এসেছে। তাদের মধ্যে ৫৯২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। বাকি ৬৪৮ জনের কোনো পাত্তা নেই। এটা শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটির চিত্র নয়, সারা দেশেরই চিত্র। ওদিকে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়াদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হলেও প্রায় কেউ-ই এটা মানছে না। তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা ও মেলামেশা করছে, আড্ডা দিচ্ছে, হোটেল রেস্তোরাঁয় বসে গল্প-গুজব করছে। তাদের এই যথেচ্ছাচার ও স্বেচ্ছাচার করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষের মধ্যে সাবধানতা ও সচেতনতার অভাব কতটা প্রকট এবং আইন ও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার প্রবণতা কত বেশি, এ ঘটনা তারই নজির ও প্রমাণ। জানা গেছে, গ্রামেগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সতর্ক করার পরও গ্রামের মানুষ তা কমই পাত্তা দিচ্ছে। এ মুহূর্তে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি জরুরি হলেও তারা দলবেঁধে হাট-বাজারে যাচ্ছে, চায়ের দোকানে আসর জমাচ্ছে। এক খবরে জানা গেছে, এর মধ্যেই ঢাকা থেকে ১ কোটি ১০ লাখ মোবাইলগ্রাহক গ্রামে চলে গেছে। তারা গ্রামে কী করছে, প্রকাশিত-অপ্রকাশিত খবরাখবর থেকে তা কমবেশি জানা যাচ্ছে। গ্রামে করোনা বিস্তারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে তারা। দু'চার দিন বা কয়েকদিন পর তারা ঢাকায় ফিরে এলে কী হবে বা হতে পারে, সহজেই অনুমান করা যায়। তাদের এবং বিদেশফেরতদের এখনই রুখতে হবে। যে কোনো মূল্যে তাদের ঘরে আটকাতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। বিশ্বের ২০০ দেশে করোনার বিস্তার ঘটেছে। এর ক্রমবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। আবার আক্রান্তদের সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর করোনা মোকাবিলায় অসাধারণ সাফল্য প্রদর্শন করছে। তাদের এই সাফল্যের পেছনে ব্যাপকহারে কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের পর্যাপ্ত জোগান, দ্রম্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা, লকডাউন শাটডাউন ইত্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের এই সাফল্য অন্যান্যের জন্য অনুসরণীয়। এখানে বিশেষভাবে উলেস্নখ করা দরকার, ওইসব দেশের সরকার করোনা সংক্রমণকে অত্যন্ত সিরিয়াসলি নিয়েছে এবং রাষ্ট্রের সম্পদ ও শক্তি, যতটা প্রয়োজন, এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে। সমন্বিত পরিকল্পনা ও কার্যব্যবস্থার আওতায় তারা এটা করেছে বলে এত কম সময়ের মধ্যে সাফল্য চয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। পক্ষান্তরে যেসব দেশ করোনাকে উপেক্ষা করেছে, তেমন একটা পাত্তা দিতে চায়নি, তারা এখন কড়ায়-গন্ডায় মাসুল গুনছে। আমাদের জন্য এটা অবশ্যই আশার খবর, কমিউনিটি লেভেলে করোনার বিস্তার এখনো ব্যাপকভাবে হয়নি। আমাদের কেবল সতর্ক ও সাবধান হলেই চলবে না সর্বোচ্চ কঠোর হতে হবে। দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য চলার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। দেশে একশ্রেণির মানুষ আছে, যাদের মধ্যে আইন অমান্য ও লঙ্ঘন করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। ওসমান গনি সাংবাদিক ও কলামিস্ট, কুমিলস্না